বস্তির দুটো ঘরে টিনের চাল, তবে দেওয়াল প্লাষ্টার করা। একটি ঘরে বসে বাইবেল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে এক যুবক, উজ্জল ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি বার বার হাত বুলাচ্ছে মুখমন্ডলে। খুবই ঘাবড়ে যাওয়া মনে হচ্ছে তাকে।
সুঠাম সৌন্দর্যে ভরপুর তার পুরো অবয়ব। হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় ঘেমে একাকার। তবুও বাইবেল থেকে তার দৃষ্টি উঠছেনা, কারো আসার শব্দ শুনে লুকিয়ে ফেললো বাইবেলটি । তারপর উঠে দাড়ালো ড্রেস চেন্জ করার জন্য।
যুবকটির মা এসে অবাক কন্ঠে,
-কীরে এহনও লুঙ্গি পরসনাই?
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে,
-এইতো মা পরছি, কি করছিলে তুমি?
-ভাত বাইড়া বইসা ছিলাম আয় খাবি।
-ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
চলে যাবার আগে ছেলের কাছে এসে,
-নাদিম, বাবা আমার, তোরে কেমুন অন্যরহম লাগতাছে, কী অইছে তোর?
নাদিম কিছুক্ষন চুপ থাকে, কারণ মাকে সে কিছুই জানাতে চায়না, তাই মৃদু স্বরে,
-কই কিছু না মা তুমি যাও আমি আসছি।
নাদিম মাকে নিয়ে ঢাকা শহরের এই বস্তিতে থাকে। গ্রামে ওদের বাড়ি আছে অনেক জমিও আছে, কিন্তু সবকিছু এখন বড় দুইভাইয়ের দখলে, কৌশলে ওরা হাতিয়ে নিয়েছে। নাদিম আগেই এসেছে ঢাকায়, এসে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। ভাইদের উপরে রাগ করে মাকে ঢাকায় এনেছে, এখন সে মাষ্টার্স পরীক্ষার্থী। প্রায় সারাদিন ধরে টিউশনি আর কোচিং করানোতে ব্যস্ত থাকে। যা আয় হয় তাই দিয়ে নিজে লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ আর এই দুটো রুমের ভাড়া হয়ে যায় কোনমতে। নাদিম ড্রেস চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে খেতে যায়। মাকে বলে,
-তুমিও নাও মা।
-হ নিতাছি তুই শুরু কর।
-আমি উঠিয়ে নিচ্ছি, তুমি নাও।
নাদিমের মা নুরবানু বেগম প্লেটে খাবার উঠিয়ে নেন।
নাদিম স্থীর কন্ঠে,
-মা আজ রাতে একটু আমি রাজিবের ওখানে যাব, ওর মামা আসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর, দেখা করবো ওনার সাথে।
মুখের খাবার শেষ করেন নুরবানু বেগম,
-কোন রাজিবের কতা কইতাছস?
-ঐ যে মা রাজিব রোজারিও আছেনা ওর মামা, তুমি জানোনা উনি খুব বড় মাপের মানুষ, জার্মান থাকতেন, ফিরেছেন দু বছর আগে।
নুরবানু বেগম অবাক হন একটু ঘিনঘিনে ভাব ফুটে উঠে তার মুখে,
-খ্রিষ্টান নি? হে তোর বন্ধু?
নাদিম হাসে,বলে
তাতে কী হয়েছে? খ্রিষ্টান বলে কি মানুষ নয়? আর ও খুবই ভালো ওর মতো মানুষ আমি দেখিনি, তুমি হয়তো জানোনা মা খ্রিষ্টান মেয়েকে বিয়ে করা যায়।
সপ্তাস্চর্যের কিছু শোনার মতো চমকে ওঠেন,
অর কী বইন আছে?
নাদিম অবাক হয়ে হা করে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে,
-আরে মা তুমি সেটা বুঝে নিলে নাকী, পারোও তুমি, তোমাকে বুঝানোর জন্য বললাম।
একটু থেমে,
-না ওর বোন নেই, তুমি আবার এই নিয়ে টেনশন করোনা, ও একা কোন ভাই ও নেই। নুরবানু বেগম স্বাভাবিক হলেন, প্লেটের খাবার আনমনে শেষ করলেন, মৃদু স্বরে,
-দেহিস বাবা তুই আমারে কষ্ট দিসনা, তুই যদি কষ্ট দেস তাইলে আমার মরণ ছাড়া উপায় নাই।
নাদিমের দৃষ্টি ছলছলে হয়ে ওঠে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে,
-এভাবে বলোনা মাগো, তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো, তুমিনা থাকলে আমি কী করে থাকবো? চলবে…………
ধারাবাহিক উপন্যাস “নিয়ন্ত্রিত পরিণতি” পর্ব -৩
Facebook Comments