banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 315 বার পঠিত

ধারাবাহিক উপন্যাস ‘নিয়ন্ত্রিত পরিণতি’ পর্ব-২

images
 
নাসরিন সিমা : কোচিং শেষ হয়েছে স্মৃতির, বসে বসে ওরা আলোচনা করছে পড়াগুলো নিয়ে । সুফিয়া চৌধুরী এখনও আসেননি, রেগুলার উনি স্মৃতিকে দিয়ে যান আবার নিয়েও যান। স্মৃতির ফ্রেন্ডরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করে, দুষ্টুমি করে, স্মৃতি বরং গর্ব করে বলে,

-আরে আমার বাবা মা আমাকে অনেক ভালোবাসে……
হঠাৎ স্মৃতির এক বান্ধবী আনু স্মৃতির হাত ধরে,
– স্মৃতি একটু কথা আছে তোমার সাথে।
স্মৃতির দৃষ্টিতে প্রশ্ন,
-বলো আনু কী বলবে?
-এখানে নয়, বাইরে চলো।
আনু ওকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়, স্মৃতির ক্লোজ ফ্রেন্ড এই আনুই শুধু নয়, আরও চারজন, ওদের দিকে একবার তাকায় স্মৃতি।
আনুর হাত প্রচন্ড ঠান্ডা, একটু একটু কাঁপছে, আড়াল হয়ে একটা জায়গায় দাড়ায়। স্মৃতি ওর ইতস্তত মুখ দেখে বিস্মিত হয়, কোন প্রশ্ন না করে আনুর কথার জন্য অপেক্ষা করে।
আনুর কন্ঠ কাঁপছে,
-স্মৃতি আমি না একজনকে……
-ইতস্তত করছো কেন আনু? তুমি একজনকে পছন্দ করো তাইতো?
লজ্জিত আনুর মাথাটা নিচু হয়ে যায়, বাবার সরকারি চাকুরির বদৌলতে ছোট বেলা থেকেই আনু ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছে, অথচ এখন আনুকে গ্রাম্য ষোড়শী লজ্জাবতীর মতো মনে হচ্ছে, স্মৃতি অটোমেটিক হেসে ফেললো ভাবলো, প্রথম প্রেমের অনুভূতি হয়তোবা শহুরে সকল যান্ত্রিকতাকে হার মানায়।
আনুর কন্ঠে উচ্ছলতা,
– হ্যা স্মৃতি, গতকাল সে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে, তুমি একটু আমার সম্মতি ওকে জানিয়ে দাও প্লিজ।
মলিন হয় স্মৃতির মুখটা, একটুক্ষন চুপ থেকে,
-সরি আনু প্রথমত আমি এসব পছন্দ করিনা, কারণ এসবের পরিণিত ভালো হয়না, আমি আমার চাচাতো এক বোনকে দেখেছি, সে এখন পাগল প্রায়। আর দ্বিতীয়ত, এসবের মাঝখানে যে তৃতীয় ব্যাক্তি থাকে তাকে সবচেয়ে আগে দোষী মনে করা হয়, অ হ্যা আরও একটা কথা তোমার আগে ভাবা উচিত, তাকে জানো, তোমার বাবা মা মেনে নিতে পারবেন কী না সে বিষয়টাওতো ভাবতে হবে……
-না আসলে ও আমাকে একদিন সময় দিয়েছিলো।
-একদিনে কী একটা সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, ………
আনু মন খারাপ করে কীনা স্মৃতি বুঝতে পারলোনা, আনু স্মৃতিকে আর কিছু বলতেও দিলনা, যেভাবে হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসেছিলো সেভাবেই ভেতরে নিয়ে যায়।
ভেতরে ঢুকেই মাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখো স্মৃতি, দ্রুত মায়ের কাছে যায়,
– সরি মা কখন এসেছো , চলো যাই।

বাসায় ফিরে স্মৃতি ফ্রেশ হয়ে নেয়, আর আনুর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবে না জানি কোন বিপথে পা বাড়াতে যাচ্ছে! আনু অনেক ভালো ছা্ত্র। আনুর বাবা মা অনেক কষ্ট করে ওকে পড়াশুনা করাচ্ছে, ওর বাবা সৎভাবে সরকারি চাকুরী করছেন তাই ইনকাম ততোটা নয়।
সুফিয়া চৌধুরী স্মৃতির মাথায় হাত দেন, দু’মিনিট আগেই তিনি এসেছেন মেয়েকে চিন্তামগ্ন দেখে কষ্টই পেয়েছেন বললেন,
-কী ভাবছো স্মৃতি?
বাস্তবে ফিরে এসে,
-কিছুনা মা,
– এসো নাস্তা করে নাও, এখানে দেব?
-না ডাইনিংয়ে যাবো।
খাবার মুখে দিয়ে স্মৃতি,
-বাবা কখন আসবে?
সুফিয়া চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দেন,
-শুনিনিতো মা, আজ মনে হয় আসবেনা।
স্মৃতির কন্ঠে মলিনতা,
-বাবা শুধুমাত্র আমার জন্য কতো কষ্ট করে বলোতো মা……
কথা কেড়ে নেন সুফিয়া চৌধুরী,
-কষ্ট না করলে টাকা আসবেনা,আর যার টাকা নেই তার মুল্য নেই এই পৃথিবীতে।
স্মৃতি মায়ের এই কথার সাথে কখনো একমত হতে পারেনি কিন্তু কিছু বলেনা, কারণ সে জানে তার মা কোন কষ্ট থেকে কথাগুলো বলছেন।

সন্ধার পর স্মৃতি পড়তে বসে, হঠাৎ ওর মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে, রিসিভ করে কিন্তু কথা বলেনা।
ওপার থেকে খুব গম্ভীর এক পুরুষ কন্ঠ,
-স্মৃতি বলছো?
-জ্বি আপনি কে বলছেন?
-ডেভিড ডি কষ্টা, চিটাগাং থেকে, তোমার মা আছেন?
-জ্বি আছেন,একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ।
উঠে মাকে ফোনটা দেয়।
সুফিয়া চৌধুরী মোবাইল নিয়ে হ্যালো হ্যালো বলতে থাকেন, কিন্তু ওপাশের কিছুই শুনতে পাননা, কেটে যায় মোবাইল।
স্মৃতি মায়ের হাত থেকে মোবইল নেয় আর প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
ওর মা বলেন,
-কী জানি কে? কিছুই তো শুনতে পাইনি।
স্মৃতি নিজের রুমে ফিরে আসে।
সুফিয়া চৌধুরী ল্যান্ড লাইনটা একবার চেক করে নিজের মনে কথা বললেন,
-এটার নাম্বারই তো সবাইকে দেয়া, স্মৃতির নাম্বারে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইলো কেন? কে এই লোক?

রাত সাড়ে বারোটা, স্মৃতির আজ আর পড়তে ইচ্ছে করছেনা। ডিম লাইট জ্বালিয়ে পাতলা কাঁথা জড়িয়ে নিলো, রিমোট হাতে নিয়ে এসিটা কমিয়ে দিলো। কেবলই শুয়ে পড়লো আর অমনি আনুর কল আসায় খুবই বিরক্ত হয়ে গেলো স্মৃতি। কারণ ও কেন ফোন করেছে সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তবুও রিসিভ করলো,
– বলো আনু কী ব্যাপার?
আনুর কন্ঠ উত্তেজিত, সেই কন্ঠে আনন্দ অতিমাত্রায়, যেন পর্বত শৃঙ্গের চুড়া ছুয়েছে সে,
-আমি ওকে হ্যা বলে দিয়েছি, আমার বাবা মা আমাকে যা দিতে পারেনি তা ও পারবে ও অনেক ধন সম্পদের মালিক, আর ওর কোন ভাই বোন নেই, আর আমারতো কাড়ি কাড়ি ভাইবোন থাকায়……
আ আনু, ওয়েট, শান্ত হও, তুমি কী বলছো বুঝতে পারছো? তুমি বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছো এতো উত্তেজনা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। আজ বিকেলে তো আমাদের দেখা হচ্ছে তখন শুনবো তুমি বরং এখন ঘুমিয়ে নাও।
মলিন হয়ে গেলো আনুর কন্ঠ,
-তাইনা, আসলে অনেক রাত হয়ে গেছে আমি খেয়াল করিনি, তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম সরি! আচ্ছা পরে কথা হবে গুড নাইট। চলবে………

Facebook Comments