অপরাজিতা ডেক্স
ধর্ষণ আর যৌন হয়রানি বন্ধের এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তস্বরূপ বিচারের দাবীতে অসহিংস আন্দোলন। আন্দোলনের মুল সূত্রপাত হয়, গতকাল উত্তরার একটি প্রাইভেট ভার্সিটির ‘উত্তরা ইউনিভার্সিটি’ একজন ছাত্রীকে উত্যক্ত করায় ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ভার্সিটির শিক্ষার্থীবৃন্দ এর বিচারের দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে। জানা যায়, তুরাগ বাসের স্টাফ দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছিলেন তিনি। এই অবরোধ শুরু হয় উত্তরার বি. এন. এস থেকে। মোট ৩৫টি তুরাগ বাস আটক করে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের সামনে আটকে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বিবরণ:
উত্তরা ইউনিভার্সিটির সি এস সি ডিপার্টমেন্ট এর ৪১ ব্যাচের ছাত্রী ‘আফিফা’। যিনি বাড্ডার বাসিন্দা। গতকাল পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে দুপুর ১.০০ টায়(আনুমানিক) গ্রেট তুরাগের একটি বাসে উঠেছিলেন। যথারীতি বাস চলছিলো কিন্তু তিনি দেখলেন লিংক রোড এ আসার পর পর বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করেন, সবাইকে নামিয়ে দিচ্ছেন কেনো? তারা বলে ওনারা এই খানের যাত্রী। তিনি তেমন কিছু ভাবলেন না কিন্তু তারপর দেখলেন যারা ছিল তারাও যমুনা ফিউচার পার্ক এর একটু আগেই নেমে গেলো। চার জন যাত্রী অর্থাৎ তিনিসহ ৫জন। তিনি এটা দেখে মনে মনে একটু ভয় পেয়ে যান। আরো একটু পর আফিফা খেয়াল করেন সাইড দিয়ে হেল্পার এবং কন্ট্রাক্টর ঘিরে রাখছে তাকে। মানে তারা চাচ্ছিল সে যেন উঠতে নাহ পারে। ইতিমধ্যে আফিফার সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায় , তখন সে একটা বুদ্ধি খাটিয়ে বলে যে, আমার এখানে রোদের গরম তাপ আসছে আমি পেছনের সিটে গিয়ে বসব একটু সাইড দেন। তখন তারা ভাবে যে পিছনের সিটে গিয়ে বসবে। আফিফা সিটে নাহ গিয়ে দরজার কাছে যায় , তখন হেল্পার তার হাত সজোরে চেপে ধরে বলে কই যাচ্ছেন। তখন আফিয়া বলে আমাকে নামায়ে দেন আর কনট্রাক্টর ইতিমধ্যে গেইট নকনক করতে শুরু করে। আফিফা প্রাণপণে শক্তি খাটিয়ে হেল্পারকে আঘাত করে এবং কনট্রাক্টর কে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেয়। ফলে অনেক আঘাত পান। এরপর ভার্সিটি এসে কয়েকজন বন্ধুকে ব্যাপারটি বলেন। এই বিষয়টি শুনে, আমরা সবাই একত্রিত একটা সিদ্ধান্তে আসি এবং আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন।
আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি:
এ প্রেক্ষিতে সকালে ১১টায় নাগাদ বি এন এস সেন্টার এর সামনে আমরা দাড়াই। এরপর যতগুলো তুরাগ বাস আসে সব বাস আটকাই। এবং কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়া তাদের বাস গুলা রাস্তায় পাসে দাড় করিয়ে চাবি রেখে দেই।
এরপর পুলিশ আসে। এসে সব ঘটনা শুনে তারাও একত্বতা জানায়। থানার এসি, ডিসি,ওসি,সবাই আসে। আমাদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করার জন্যে কয়েকজনকে ঐ শিক্ষার্থীসহ থানায় নিয়ে বিষয়টা খোলামেলা আলোচনা হয়। এরপর তারা আশ্বাস দেয় আজকের মধ্যেই অই বাসের স্টাফদের গ্রেপ্তার করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন আমাদের অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন।
উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ, তুরাগ বাসের সকল স্টাফ দের ডাক দেয়। এবং আল্টিমেটাম দেয়। এর মধ্যে গুলশান-১ যায়। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করার জন্যে। সেখানে তার নামার দৃশ্য দেখা গেলেও বাস নাম্বার টা ক্লিয়ার আসেনি। অপেক্ষা করে মালিক পক্ষ। মালিক পক্ষের সাথে আমাদের আলোচনা হয়। ডিসি স্যার আশ্বাস দিয়েছেন আজকের মধ্যেই ডিসিশন দিবেন। আমরা অপেক্ষায় আছি।
এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনারা প্রস্তুত হোন।
এ আন্দোলন শুধু এই বোন এর জন্যেই নয়। এই আন্দোলন সবার, জাতির।
সুতরাং আমরা চাই এমন শাস্তি হোক যেনো বাংলাদেশ সকল বিকৃত মানসিকতার মানুষ গুলো আর আমাদের বোনদের দিকে না তাকাতে পারে।
আজকের মধ্যে আসামি চিহ্নিত করুক।
সবোর্চ শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রেক্ষিতে সকালে ১১টায় নাগাদ বি এন এস সেন্টার এর সামনে আন্দোলন করার জন্য দাড়িয়েছেন তারা। এরপর যতগুলো তুরাগ বাস আসে সব বাস আটকানো হয়। প্রায় ৩৮টি বাসকে আটকিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এবং কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়া তাদের বাসগুলোকে রাস্তায় পাশে দাড় করিয়ে চাবি রেখে দেয়। এরপর পুলিশ আসে। এসে সব ঘটনা শুনে তারাও একাত্মতা জানায়। থানার এসি, ডিসি,ওসি,সবাই আসেন। এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনা পর বিষয়টা অবগত হয় প্রশাসন। এরপর প্রশাসন আশ্বাস দেয় আজকের মধ্যেই ওই বাসের স্টাফদের গ্রেপ্তার করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন সার্বিক সাপোর্ট দিচ্ছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়।
পরবর্তীতে উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ, তুরাগ বাসের সকল স্টাফদের ডেকে তাদেরকে আলটিমেটাম দেয়। এর মধ্যে গুলশান-১ গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হয়। কিন্তু সেখানে আফিফার নামার দৃশ্য দেখা গেলেও বাস নাম্বারটা এখন পর্যন্ত ক্লিয়ার দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও তারা জানান।
শেষে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, “এ আন্দোলন শুধু এই বোন এর জন্যেই নয়। এই আন্দোলন সবার, জাতির। সুতরাং আমরা চাই এমন শাস্তি হোক যেনো বাংলাদেশ সকল বিকৃত মানসিকতার মানুষ গুলো আর আমাদের বোনদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে না তাকাতে পারে। আজকের মধ্যে আসামি চিহ্নিত করুন। সর্বোচ্চ শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
শিক্ষার্থীদের আরও বক্তব্য ছিল “দরকার হলে আমরাই সারারাত বাস গুলা পাহারা দিবো যাতে বাসের কোন ক্ষতি না হয়। কারন ক্ষতি হলে আমাদের ভার্সিটির নামে মালিক পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দমবার পাত্র আমরা নই। দোয়া করবেন সবাই যাতে আমাদের মিশন সফল হয়। আমরা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যাতে কোন বাসের ড্রাইভার বা হেল্পার ভবিষ্যতে আর কোন বাসের মধ্যে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট করার সাহস না পায়। আর অন্য যেকোন জায়গায়ও যাতে কেউ এই ধরনের কুকীর্তি করার আগে ১০ বার ভাবে।”
পরিশেষে আন্দোলনকারীরা বলেন, সবাই সাথে থাকুন। বন্ধ হোক ধর্ষণ, নিরাপদ থাকুক আমার মা বোন। আমাদের দাবীর পক্ষে ডিসিশন না আসলে কাল সকাল থেকে আবার আমরা আন্দোলন শুরু করব।
ছবি: তরিকুল ইসলাম সোহাগ এবং রাজিব হাসান অন্যান্য।
বাংলাদেশ ধর্ষণমুক্ত হোক
#Stop_Sexual_Harassment