সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে, যেখানে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলাৎকারকেও ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার বিধান করা হয়েছে।
নতুন আইনে বলাৎকারকেও ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যার ফলে নারী, শিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুর ক্ষেত্রেও এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে, বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, যা পূর্বে ছিল ৬০ কার্যদিবস। প্রয়োজনে আরও ১৫ কার্যদিবস সময় নেওয়া যেতে পারে। বিচার কার্যক্রম অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে।
ধর্ষণের শাস্তি পূর্বের মতোই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড থাকবে। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে আগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হতো, যা বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দহনকারী, ক্ষয়কারী বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে নারী বা শিশুকে হত্যা বা বিকৃত করার অপরাধে অর্থদণ্ড ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুকে মারাত্মক জখম করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, কারো ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিতে পারবে এবং শাস্তি দিতে পারবে। এই অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।
শিশু ধর্ষণের মামলার জন্য প্রতি জেলায় ও মহানগরে পৃথক শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
যৌতুকের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আওতার বাইরে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, নতুন আইনে বলাৎকারকে ধর্ষণের আওতায় আনা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “অর্থদণ্ড বাড়ানোর ফলে সাজা কার্যকর হওয়ার হার কমে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া জামিনের সুযোগ নিয়ে আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে, যা বিচারের কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।”
এই সংশোধনী আইন বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কঠোর ও দ্রুত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই এর সফলতা নিশ্চিত করবে।