banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 99 বার পঠিত

 

ধবলধোলাইয়ের-বাকি-মাত্র-এক

স্টিভেন ম্যাঙ্গোঙ্গো, গিভমোর মাকোনি ও মুফারো চিতুরুমানি। প্রথমজন জিম্বাবুয়ে দলের কোচ, দ্বিতীয়জন প্রধান নির্বাচক আর তৃতীয়জন ম্যানেজার। প্রতিটি ম্যাচেই টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় ড্রেসিংরুমের সামনে বসে থাকা এই ত্রয়ীর করুণ মুখ। যেন তাঁদের কেউ জোর করে বসিয়ে রেখেছে। ম্যাচ-ট্যাচ বাদ দিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারলেই বাঁচেন সবাই!
একের পর এক হারে জিম্বাবুয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের সময়টা নিরানন্দ কাটাই স্বাভাবিক। আগের ম্যাচেই সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর কাল ব্যবধান বেড়ে হলো ৪-০। শেষ পর্যন্ত এটি ৫-০ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চোখের সামনে দলের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখে ম্যাঙ্গোঙ্গো-মাকোনি-চিতুরুমানির মন খারাপ হতেই পারে। তবে একটা জায়গায় কাল তাঁরাও নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছেন ‘উন্নতি’র লক্ষণ? ওয়ানডে সিরিজে কালই যে প্রথম দুই শর ওপরে রান করল জিম্বাবুয়ে! বাংলাদেশের ২৫৬ রানের জবাবে তারা ৮ উইকেটে করতে পেরেছে ২৩৫, হার ২১ রানে।
এই ২৩৫-এ সবচেয়ে বড় অবদান চতুর্থ উইকেটে ব্রেন্ডন টেলর ও সলোমন মায়ারের ১০৬ রানের জুটির। ৬০ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ওই জুটির সৌজন্যেই ম্যাচে টিকে থাকতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দলের ১৬৬ রানের সময় মায়ারকে কাভারে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভেঙে দেন ওয়ানডেতে অভিষিক্ত লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন। এর আগে টিমিচেন মারুমার উইকেটটিও নেওয়ায় জুবায়েরের বোলিং বিশ্লেষণ ৬-০-৪২-২। প্রথম ম্যাচ হিসেবে বোলিংটা একেবারে খারাপ নয়। তবে বাংলাদেশের সফলতম বোলার বলতে হয় সাকিব আল হাসানকেই। ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশে আসার একটি লক্ষ্য তো অবশ্যই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। কিন্তু এখানে আসার পর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের সামনে চলে আসে আরেকটা লক্ষ্যও, ভালো খেলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবে ডাক পাওয়া। সে লক্ষ্য পূরণে এর মধ্যেই সফল চার ক্রিকেটার। সিরিজ শেষে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা খেলবেন আবাহনীর হয়ে, ব্রেন্ডন টেলরকে দেখা যাবে প্রাইম ব্যাংকে, এলটন চিগুম্বুরাকে প্রাইম দোলেশ্বরে এবং রেজিস চাকাভার খেলার কথা মোহামেডানে।
বিসিবি দুবাইয়ে সহযোগী দেশগুলোর টুর্নামেন্টে দল পাঠাবে না বলে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যও নিজেদের প্রমাণ করার একমাত্র জায়গা এখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আত্মবিশ্বাস যা নেওয়ার নিতে হবে ১ ডিসেম্বর শেষ হতে যাওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই। তা সেটিতে এখন পর্যন্ত দারুণ সফল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। যদিও কাল চতুর্থ ওয়ানডের শুরুটা হয়েছিল হোঁচট খেয়ে।
আগের দুই ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে এক শর বেশি রান হয়েছে। কিন্তু কাল ব্যর্থ দুই ওপেনারই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে নেভিল মাদজিভার বলে এলবিডব্লু এনামুল হক। ১১তম ওভারে দলকে ৩১ রানে রেখে মায়ারের বলে মাসাকাদজার ক্যাচ হন তামিম ইকবাল। এর পরের দুই ওভারে নেই হয়ে গেল আরও ২ উইকেট। তিন নম্বরে মুমিনুল হকের জায়গায় সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি ইমরুল কায়েস। পরের ওভারে সাকিবও বিদায় নিলে রীতিমতো খাদে পড়ার উপক্রম হয় বাংলাদেশ দলের। ৩২ রানে ৪ উইকেট নেই প্রতিপক্ষের—জিম্বাবুয়ে নিশ্চয়ই সান্ত্বনার জয় খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল তখন?
কিন্তু বাংলাদেশ হারতে চাইলেও জিম্বাবুয়েকে তো জিততে চাইতে হবে! সেটা তারা চাচ্ছে বলে মনেই হলো না। তাদের সামনে পর্বত হয়ে দাঁড়াল দুই ভায়রা মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকুর রহিমের পঞ্চম উইকেট জুটি। ওভারপ্রতি ৫.৩২ করে নিয়ে এই জুটিতে এল ১৩৪ রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের তৃতীয় ওভারে কামুনগোজিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মুশফিক কাভারে ক্যাচ তুলে না দিলে আরও বড় হতে পারত জুটিটা, বড় হতে পারত বাংলাদেশের স্কোরও। মুশফিকের আউটে সেটি হলো না, বরং ব্যাটিং পাওয়ার প্লের মধ্যে বিদায় নিলেন নতুন ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানও। ৩৬ থেকে ৪০—ব্যাটিং পাওয়ার প্লের এই ৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে মাত্র ২১ রান।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারে আবুল হাসানও বিদায় নিলে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি বাংলাদেশের দুই শর নিচে অলআউট হওয়ার পালা। ৭ উইকেটে ১৭৭ রানে ও রকম শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক ছিল তখন। দলকে সেই লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অষ্টম উইকেটে ৮ ওভার একসঙ্গে থেকে ৬৫ রান যোগ করেছেন দুজনে মিলে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত ৮২ রানে অপরাজিত। আর মাশরাফি মাদজিভার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেও দুই ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে মাত্র ২৫ বলে করে গেছেন ৩৯ রান।
ম্যাচটা শুরু হয়েছিল ফিল হিউজের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। জিম্বাবুয়ের জন্য ম্যাচের শেষটাও হলো শোকের। বাংলাদেশ তাদের জেতার সুযোগ দিলেও চিগুম্বুরার দল যেন জিততে ভুলে গেছে! অবশ্য বাংলাদেশে এসেই তো হার আর হার, এত দিনে পরাজয়ের সঙ্গে তাদের মিতালিই হয়ে যাওয়ার কথা।

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮; জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৩৫/৮; ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

Facebook Comments