সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অনেক সূচকেই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে শিশুর অপুষ্টি ও ওজনহীনতার চিত্র কাক্সিক্ষত নয় বলে মনে করছে সরকার। মা ও শিশুপুষ্টি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক মানচিত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মানচিত্র অনুসারে, বান্দরবান জেলায় সবচেয়ে বেশি পুষ্টিহীন শিশুর বসবাস। ফলে জেলার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু বেটে। সিলেটের সুনামগঞ্জে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু কম ওজনের। যা অন্যান্য জেলার তুলনায় সর্বোচ্চ। শিশুপুষ্টি নিশ্চিত করতে সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রকাশিত ম্যাপ সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ম্যাপ প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন।
পুষ্টিহীনতার কারণে বেটে শিশুর হার সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বান্দরবান জেলায়। এ হার ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
পাশাপাশি কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলা। এ হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে অপুষ্টি ও কম ওজনের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকা জেলা। চাইল্ড অ্যান্ড মাদার নিউট্রিশন সার্ভের (সিএমএনএস) ফলাফলের ভিত্তিতে অপুষ্টিসংক্রান্ত ম্যাপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ওয়ার্ল্ডফুড প্রোগ্রাম এবং ইফাদ যৌথভাবে পুষ্টিম্যাপ প্রকাশ করেছে।
এমএ মান্নান বলেন, এসব তথ্য কোনো সমস্যার সমাধান নয়। তবে সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেসব এলাকায় পুষ্টির অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে সেসব এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে পুষ্টি সমস্যা সমাধান করা যাবে। তিনি জানান, ২ দশক আগে দেশে অপুষ্টির হার ছিল ৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন সেটি ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরও এটি সন্তোষজনক নয়। তিনি আরও বলেন, এমডিজির অনেক লক্ষ্যই যখন পূরনের পথে তখন অপুষ্টি ও কম ওজনের শিশুর এ চিত্র কাক্সিক্ষত নয়। তারপরও বলব এ চিত্র ঠিক হলে বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
ম্যাপ অনুযায়ী দেখা যায়, বেটে শিশুর ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের সর্বোচ্চ ভোলা জেলায় ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সর্বনিু ঝালকাঠি জেলায় ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলায় সর্বোচ্চ ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ (জাতীয়ভাবেও সর্বোচ্চ) এবং সর্বনিু চাঁদপুর জেলায় ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ কিশোরগঞ্জ জেলায় ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ কুষ্টিয়া জেলায় ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সর্বনিু ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং সর্বনিু ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ নীলফামারী জেলায় ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সর্বনিু পঞ্চগড় জেলায় ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং সর্বনিু মৌলভীবাজারে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
কম ওজনের শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি কম ওজনের শিশু রয়েছে ভোলা জেলায়, এ হার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে কম রয়েছে ঝালকাঠি জেলা, এ হার ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম রাঙ্গামাটি জেলায় ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নেত্রকোনা জেলায় ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ।
খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং খুলনা জেলায় সবচেয়ে কম ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম জয়পুরহাট জেলায় ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায় ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম দিনাজপুর জেলায় ৩৩ শতাংশ।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ (জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ) আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায় ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুরাইয়া বেগম বলেন, আগে রংপুর অঞ্চল পিছিয়ে থাকলেও এখন সিলেট বিভাগ পুষ্টির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
এমডিজির লক্ষ্য পূরণে এ ম্যাপ অনুযায়ী সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে। তিনি বলেন বাস্তবতার ভিত্তিতে এ ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য হার সর্বনিু পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে নিয়ে যেতে চায় সরকার।
সূত্র- যুগান্তর।