গীতা রানীর কোলের ওপর দুধের পাতিল। যে রিকশায় এসেছিলেন, সেই রিকশাতেই তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন ব্যবসায়ী। চায়ের দোকানে দুধ দিতে এসেছিলেন। কিন্তু দোকানে চুলা জ্বালাতে পারলেন না।
পবার নওহাটা থেকে মুলা নিয়ে এসেছিলেন ব্যবসায়ী গোলাম রসুল। সকাল নয়টা বাজলেও তিনি বস্তার মুখ খুলতে পারেননি। দুপুর ১২টা বাজার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন। সকালে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় গিয়ে হরতালের এই চিত্র দেখা যায়।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে রাজশাহী নগরে অর্ধদিবস হরতাল চলছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাড়ানো হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলসহ চার দফা দাবিতে এই হরতাল ডাকা হয়েছে।
সকালে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দু-একটা রিকশা ও অটোরিকশা চললেও নগরের আরডিএ মার্কেটের সামনে দিয়ে ব্যবসায়ীরা কোনো রিকশা পার হতে দিচ্ছেন না। মুলার ব্যবসায়ী গোলাম রসুল বলেন, ‘যে দলেরই হরতাল হোক মাস্টারপাড়ার এই রাস্তায় পাইকারি সবজি বিক্রি কোনো দিন বন্ধ থাকতে দেখিনি।’ এ জন্যই মুলা নিয়ে এসেছিলেন। এই প্রথম দেখলেন এই সড়ক ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
রাজশাহী নগরের আরডিএ মার্কেটের নির্মাণশ্রমিক এরফান আলী সকাল থেকে সাহেব বাজার কাঁচাবাজারের গেটে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো হরতালেই কাঁচাবাজার বন্ধ থাকতে দেখিনি। এ কোন হরতাল যে কাঁচাবাজারের গেটে তালা লাগাইয়া দিছে।’ সেখানেই একজন পিকেটার দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বললেন, ‘চাচা, ১২টার পরে আসেন।’
নগরের ষষ্ঠীতলা এলাকায় থাকেন রাজশাহী কলেজের ছাত্র সবুজ সরকার। তিনি বলেন, সাহেব বাজারের কাঁচাবাজার থেকে ফিরে গিয়ে নিউমার্কেটের কাছে অল্প করে খোলা একটা দোকান থেকে বেশি দামে সবজি কিনেছেন।
সংগ্রাম পরিষদের অন্য দাবিগুলো হলো—অস্বাভাবিক হারে বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফি বাতিল, আরোপিত সাইনবোর্ড ফি প্রত্যাহার এবং আরোপিত ভ্যাট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এনামুল হককে সকাল নয়টার দিকে নগরের সাহেব বাজার এলাকায় হরতালে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। তিনি বললেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে নগরবাসীর জন্য নতুন বিপদ ডেকে এনেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০-১২ গুণেরও বেশি এই ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে নগরের বাসাবাড়ির মালিকেরাই শুধু নন, ভাড়া বাড়ানোর আশঙ্কায় ভাড়াটেরাও হুমকির মুখে পড়েছেন।
অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ও ওষুধের দোকান হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অটোরিকশা রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের এই হরতালে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ, মহানগর মেস মালিক সমিতি, হেরিটেজ রাজশাহী, আরডিএ মালিক সমিতি, নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ আটটি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সমর্থন জানিয়েছে।