banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1348 বার পঠিত

 

দাম্পত্য জীবন হলো অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


চাই, বন্ধ হোক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই বিরাজমান সামাজিক অপসংস্কৃতি।

হ্যাঁ, যার যৌবন আছে তার কোন না কোন ফরম্যাটে যৌন জীবনও আছে। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক সবারই আছে নিজস্ব প‍্যাটার্নের যৌনজীবন। এটি অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। যত বড় সুফি-দরবেশ-মোহন্ত-সাধু হোন না কেন, কোন মানুষই বেসিক ইন্সটিংক্ট এর ঊর্ধ্বে নয়।

বিপরীত জেন্ডারের কারো সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আমার নীতি হলো,

Everything or nothing, not so so।

যে পথে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ কিংবা অধিকার আমার নাই সে পথে খানিকটা হাঁটহাঁটি করাকে আমি ছ‍্যাঁচড়ামি মনে করি। এমনকি আমি এক নম্বর পছন্দ হলেও এ ধরনের কোনো কিছু পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানোকে আমি খুব অপছন্দ করি। মেয়েদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে এ ধরনের মনোভাবের কারণে বিয়ের আগে আমার প্রেম করা হয়ে উঠেনি।

(১) প্রেম কিংবা
(২) পরিণয় অথবা
(৩) বিশেষ কোন সামাজিক সম্পর্ক বা
(৪) শুধু পরিচয় –

এই চার ধরণের সম্পর্কের বাইরে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো সম্পর্কে আমি বিশ্বাসী নই। প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন নারী ও পুরুষের মধ্যে নিছক বন্ধুত্বের সম্পর্ক অসম্ভব।

তাই এখনকার just friend system হলো আসলে এক ধরণের soft polygamy চর্চা। কথাটা পরিস্কার। polygamy ভালো কি খারাপ, সেটা ভিন্ন আলোচনা। এখানে polygamy বলতে আমি multiple heterosexual relationship-এর টেনডেন্সি বা প্র‍্যাকটিসকে বুঝাচ্ছি।

মানলাম, পাশ্চাত্য প্রভাবিত ক‍্যারিয়ারমুখী আমাদের এ সমাজ, ছেলে-মেয়েদেরকে গড়পড়তা এক দশক এক ধরনের “ব‍্যক্তিগত যৌনজীবন” যাপনে বাধ‍্য করছে, তাই বলে “প্রয়োজন”টা যে নির্দোষ ও বাস্তবসম্মত, তা অকপটে স্বীকার করতে এত দ্বিধা কেন?

স্বাভাবিক দাম্পত্য যৌন জীবনের ব‍্যবস্থা কায়েম করা হলো বিদ‍্যমান অবাধ ফ্রেন্ডশিপ ব‍্যবস্থার টেকসই প্রতিবিধান বা রিমেডি। এ ধরনের কাঙ্ক্ষিত ব‍্যবস্থায় পৌঁছার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে সমাজকর্মীদের ভাবতে হবে। খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

“তরুণ সমাজ অধঃপতনে গেল। আমরা কত ভাল ছিলাম…।”
– এমন বুদ্ধিজীবীসুলভ পাকনা পাকনা কথা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। কথায় বলে, পেটে দিলে পিঠে সয়। আগাগোড়া একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কারো কোন বিশেষ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণকে মাঝখান থেকে জাজমেন্ট করতে যাওয়া ঠিক না।

তরুণদের এই just friend system এর জন্য তরুণরা যতটা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী হল তাদের অভিভাবকরা। জীবন ও জগতের সঠিক উপলব্ধি ও মূল্যবোধ নিয়ে বড় হওয়ার চেয়ে তরুণদের মধ্যে যে career hype তৈরি করা হয়েছে তার জন্য তারা নিজেরা ততটা দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী হল এই ভারসাম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এধরনের বিরূপ পরিস্থিতির দায় বড়দের। যারা এই সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার। careerism-এর কারণে বিলম্বে বিয়ে। বিলম্ব বিয়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যক্তিগত যৌনজীবন। কথাটা খোলাসা করে বললাম। যাতে বুঝতে পারেন, এই just friend system কোত্থেকে ও কিভাবে গড়ে উঠলো।

আফসোস, যারা সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে তারা আমাদের সামাজিক গঠনের এই বিরাট ফাটল সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না। প্রসঙ্গক্রমে এ বিষয়ে যাওবা তারা কিছু বলে তখন একতরফাভাবে তারা তরুণদেরকে অসংযমী হওয়ার জন্য দোষারোপ করে। এরপরে তারা সওয়াবের নিয়তে তরুণদেরকে নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য, একতরফাভাবে নৈতিক হওয়ার জন‍্য self-contradictory হেদায়েত বিতরণ করে।

অপরদিকে তরুণদের একটা বিরাট অংশ, যারা বিশেষ করে আদর্শের কথা বলে, তারাও দেখি আমাদের সমাজে বিদ্যমান এ ধরনের অস্বাভাবিক ও অমানবিক অপব্যবস্থার অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ। যেন সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। আমি এসব কথা বলছি, এতে আশঙ্কা করছি, এদের কেউ কেউ আমাকে উল্টো দোষারোপ করবে। হয়তো বলবে, অথবা অন্ততপক্ষে ভাবতে পারে, বুড়োর যেন ভিমরতি হয়েছে …!

না, আমার অন্ততপক্ষে ভিমরতি হয় নাই। আমাদের সময় প্রায় শেষ। তবে আমরা যে অস্বাভাবিক সময়কে পার করে এসেছি, একই ধরনের যে অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে তোমরাও জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছো, তা যে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও অস্বাভাবিক, এ অবস্থার যে আশু পরিবর্তন প্রয়োজন, তা অন্ততপক্ষে স্বীকার করার কথা বলছি। যত বড় সমস্যাই হোক না কেন, যে কোন সমস্যা সমাধান করার প্রথম শর্ত হলো সমস্যাটা যে আছে তা অকপটে স্বীকার করা।

just friend system এর পরবর্তী ধাপ হলো লিভিং টুগেদার system। লিভিং টুগেদার সিস্টেম এবং family সিস্টেমের তুলনামূলক আলোচনা নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। সেটি প্রচারণামূলক লেখা নয়, যুক্তিসঙ্গত লেখা। কিছুটা বিস্তারিত। কমেন্টে সেটার লিংক দেয়া আছে।

এ বিষয়ে এখনকার মত শেষ কথা হল, যেভাবেই হোক না কেন, on an average 15 থেকে 25, এই দীর্ঘ এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই সামাজিক অপসংস্কৃতিকে রুখতে হবে। জ্বর কেন হচ্ছে তার কারণ হিসেবে শরীরের ভেতরে কোন অংশটা infected হয়েছে তা identify করতে হবে। এরপর সেটার proper treatment করতে হবে। ভিতরের ইনফেকশন সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা না করে উপরে উপরে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করে কোন লাভ হবে না।

সম্ভাব্য সকল উপায়ে বিয়েকে সহজ করা হলে বাদবাকি যা কিছু তা অটোমেটিকেলি কমে যাবে। অনিরুদ্ধ কোন স্রোতকে স্বাভাবিক গতিপথে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে না দিলে তা বাঁধ ভেঙে প্লাবন ঘটাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

ছোটবেলায় মার্শাল আর্টের কলাকৌশল নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। তাতে আত্মরক্ষার প্রথম যে টিপসটা দেওয়া হয়েছিল, তা খুব ইন্টারেস্টিং। সেখানে লেখক বলেছিলেন, যখনই আপনি আক্রান্ত হবেন সম্ভব হলে দ্রুততম সময়ে 180 ডিগ্রি উল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্ভব সর্বোচ্চ গতিতে দৌঁড়ানো লাগাবেন। তার মানে, যে কোন অস্বাভাবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হতে escape করার চেষ্টা করা হল better option।

নৈতিকতার যতসব নেতিবাচক আইন, কানুন, নিয়ম ও প্রস্তাবনা, তার সবই হলো বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। কোথাও যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে, সেখানে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োগযোগ্য নেতিবাচক আইনকানুন ও প্রস্তাবনাগুলোকে আপাতত অগ্রাহ্য করে উক্ত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা জরুরী। তাই, মানুষের ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা ন্যূনতম আদর্শমানের সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যা যা করা দরকার, তা বাস্তবায়ন করার কাজ, আসুন, এখনই শুরু করি।

মনে রাখবেন, awareness is doing half of the solution।

Facebook Comments