ফাতেমা শাহরিন
তাহেরা রাহমান। ২৭ বছরের একজন মুসলিম আমেরিকান নারী। যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন টিভি রিপোর্টার হওয়ার।পথে অনেক বাধাও ছিল। অজস্র বাধার কথা ভেবেই তিনি পথে নামেন। কিন্তু আজ তাহেরা রাহমান তার স্বপ্নের পথে চলমান। বর্তমানে তিনি “রক আইল্যান্ডের WHFP” টিভি অন এয়ারের রিপোর্টার।
ক্যামেরার সামনে কাজ করা সহজ নয়। তাহেরার ক্যামেরার সামনে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বাধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক টুকরো কাপড় ‘হিজাব’।
ছোট বেলা থেকেই অজস্র প্রতিকূল পরিস্থিতির স্বীকার হন তাহেরা,তার মুল কারণ তিনি হিজাব পড়তেন।
সে বলেন, ‘আমার প্রযোজক আমাকে বলছিলেন, যদি তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিনত করতে চাও, তারা অর্থাৎ সকলে তোমাকে রিপোর্টার হিসাবে নিতে চাইবে হয়ত কিন্তু তারা তোমার হিজাব খুলে ফেলতে বলবে!
-আমি বলেছিলাম, ‘না’।
আমার এ কথা তিনি পছন্দ করেছিলেন’।
তাহেরা কলেজের গ্রাজুয়েশনের পর রেডিও স্টেশনে যোগ দেন। তারপর রেডিও থেকে টেলিভিশনে। সেখানে তিনি প্রথমে ক্যামেরা পিছনে কাজ করেন।(দৃশ্যের পিছনে) কিন্তু ক্যামেরার সামনে কাজ করার ব্যাপারে (on air position) তিনি প্রত্যয়ী ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতাম: আমি যদি কোন কিছু করতে চাই, তাহলে তা করব। আমি সাংবাদিক হতে চাই এবং আমি হিজাব পরেই সাংবাদিকতা করতে চাই। যা আগে কখন কোন আমেরিকান রা দেখেননি। আমেরিকান রা হিজাব পরা কোন নারী সাংবাদিক দেখেনি কিন্তু ভবিষ্যতে আমাকে দেখবে’।
তাহেরার স্বপ্ন প্রায়শ ভেঙ্গে যাচ্ছিল, এক সময় সে তার এই স্বপ্ন ত্যাগ করতে চেয়েছিল কিন্তু সেইসময় তার মা তাকে তার স্বপ্ন পুরনের ব্যাপারে উৎসাহ দেন। পাশে থাকেন। তার মা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেন এবং আহ্বান করেন, ‘তুমিও পারবে’। অবশেষে তাহেরা তার প্রথম টিভি রিপোর্টিং কাজ পায় ‘Illions’ নামক প্রতিষ্ঠানে। ‘USA’ তে প্রথম হিজাব পরিহিতা নারী রিপোর্টার হিসাবে তাকে স্বীকৃতি দেন।
তাহেরা বলেন, ‘আমার টিভি স্টেশনের সবাই খুবই সাপোর্টিভ এবং ওনারা আমাকে নিয়ে একটা story করতে চেয়েছিল। আমি খুব খুশি হই ‘wbhf’ এর মত ‘corporate TV’ আমাকে নিয়ে তার সম্প্রচার করতে চায়’।
তাহেরা আরও বলেন, ‘সত্যি, আমি আমার faith নিয়েই বেড়ে উঠেছি, এটা শুধুই faith যা আমার মোরালিটি র মত, যা আমি মেনে চলি। আমেরিকার প্রতিটি লোক কঠিন পরিশ্রমী। আর যারা দৃঢ়চেতা তাদের আমেরিকায় স্বপ্ন পূরণে রাস্তায় কেউ বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনা। আমার ভাবনা ছিল কেন মুসলিমরা দ্বন্দের মধ্যে জড়িয়ে আছে, এটা তাদের থাকা উচিত নয়। আমি লম্বা সময় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি , এটা আমাকে পরিশোধিত করেছে। কিন্তু দিন শেষে আমার পোষাকই, ‘আমার মুল্যবোধ ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে’।’
তাহেরাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তোমাকে যখন ব্যঙ্গ (trolled) করা হয় তখন তোমার কেমন অনুভূতি হয়/হত?
উত্তরে তাহেরা বলেন, ‘আসলে আমি পজিটিভ ফিডব্যাক পাই, আমি কখনো এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলি না। বিদ্রুপ গুলো আমি ডাস্টিবিন ছুড়ে ফেলি। আমি ভাবি আমরা যে, আমেরিকাতে বাস করি সেখানে নানা মতের নানা দৃষ্টিকোণের আমেরিকানসহ নানান দেশের মানুষের বাস। সুতরাং এ ধরনের বাক্যবাণ আসতেই পারে এবং এখানে ভিন্নতা থাকবেই, থাকবে বৈচিত্র্যতা’।
তাহেরার মাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যখন তাহেরা ‘আশাহত’ হয়ে পড়েন তখন আপনি কিভাবে তাকে সাহস যোগাতেন?
মা বলেন, ‘আমি জানি সে অনেক কঠিন পরিশ্রম করে। সে জানে তার লক্ষ্য কি এবং তার লক্ষ্যে তাকেই পৌছাতে হবে। প্রত্যেক পিতামাতার জন্য অবশ্যকরণীয় যে, সন্তানকে সাপোর্ট করা এবং একটা পজিটিভ পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদেরকে তুলে ধরতে সহযোগিতা করা। আমি তার প্রয়োজনগুলো জানতাম এবং সে অনুযায়ী তাকে সহায়তা দেবার চেষ্টা করতাম’। সুত্র: ইন্টারনেট।