banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 673 বার পঠিত

 

তাচ্ছিল্য

ফাতেমা শাহরিন


মনের অবস্থা ভয়ানক তিক্ত আবিরের। প্রায় কয়েক ঘন্টা হেটেছে, সন্ধ্যা বিকালকে গিলে ফেলেছে। এখন ঝর ঝর করে ঘাম ঝরছে। হবে কি আবার, নিরবতাকে আবার কেন আপমান করল ওরা। আবির ভাবছে, বোনটা ত আমার ভাল ছিল! এই নিয়ে ওদের এত সমস্যা কিসের? বুঝে না আবির।

নিরবতা। আমাদের ভালবাসা ও সন্মানের আরেক টুকর নাম। চুপচাপ শান্ত মেয়েটি।

গত বছর ওর বিয়েটা ভেঙ্গে যায় হবার দু ঘন্টা পর। হঠাৎ। কাবিল নামা হয়ে যাবার পরে, ছেলের বাবা ফোনে কথা শেষ করে, বলে উঠেন, যে পরিবারে এত লোক ড্রাগ এ্যাডিক্টেট। সেই ঘরের মেয়ের চরিত্র স্বভাব কখনও ভাল হতে পারেই না। কেন ওরা সব গোপন রেখেছে। ওরা জঘন্য খারাপ কাজ করেছে। শুরুতে এএ অবস্থা, এই মেয়েকে ঘরে তুললে আমার ছেলেটাও খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি, নিরবতার পক্ষে কোন কথা বলেনি।

কত অনুনয়বিনয় করেছে সবাই। কিন্তু নিরবতার পাশে বাবা ছিল। নিরবতা ধীরে বের হয়ে আসে, খুব লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠে।

‘আমি খুব লজ্জিত। সত্যি বলতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একজন এডাল্ট ছেলের আসক্তির ভয় আছে তা নয়। বরং এ পরিবারে আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের আনাগোনা হতে পারে, তা আরও ক্ষতিকর। আপনার পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি ভেবেছিলাম, পরিবার বিষয়টিকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার করেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর এমন পরিবারে আমিও যেতে চায় না। যেখানে অসন্মান, ঘৃণা, আর সন্দেহের বীজ বুনে গিয়েছে জীবনের সূচনালগ্নে।’

শেষপর্যন্ত ছেলেটির একদম নিরব ছিল। নিরবতার বিয়ে ভেঙ্গে যায় সেদিনই।

আবির, নিরবতার মনের কথা ভেবে অজান্তে কেঁদেছে। আর অভিশাপ দিয়েছে সব নেশাখোরদের। সেই শান্ত, বলিষ্ঠ কন্ঠের নিরবতার আজ চোখে পানি। ঝর ঝর করে পানি নয় কেবল যেন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ছুটছে। কেন দরকার হল কেন?

মাঝে মাঝে দূরে জলন্ত আগুনের শিখা দেখলে এত ইচ্ছে যাকে কয়েক টান দেই, দূর হোক বিষণ্ণতা। ঠিক তখনি নিরবতায় হাসি মুখ ভাসে। কি দোষ ছিল ওর? কতগুল নেশাখোরের জন্য কেন ওলটপালট হল ও গোটা জীবন। কেউ বলতে পারে ওর স্বপ্নরা এখন কোথায়?

নিরবতা-ভাইয়া, প্লিজ আমি দেখা করব না। আমার পছন্দ হয়নি। প্লিজ, এ ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলবেন না আপনারা।

ভাবি- কিসের আবার পছন্দ-অপছন্দ এত বয়স হল, আরও বাপের বাড়ি পড়ে থাকমেন।

পাশ থেকে ভাইয়ের ছোট্ট ছেলেটিও বলছে: আধ আধ কন্ঠে, তুমি আমাদের সব খাবার খেয়ে খেলবা।

ভাবি-শোন, এখানে একটা বিশাল কাহিনী আছে। তুমি ছেলে পক্ষের সাথে দেখা করতে বল তোমার বোনকে।

বড় ভাই: দেখা করলে কি বিয়ে হয়ে যায়? দেখা কর।

ছলছল করে উঠে চোখ দুটি নিরবতার। আরও নিরব হয়ে যায়। প্রবল তাচ্ছিল্যতা হুড়মুড় করে ডুকছে। যেন প্রচন্ড শক্তিশালী ঝড় উঠেছে আত্মমর্যাদাবোধকে এবার ভেঙ্গে মুচড়ে তছনছ করে ফেলল বলে।

বাবা হঠাৎ দাড়িয়ে সামনে…..দূরে দরজায় ছোট ভাই আবির। ওই ত ভালবাসার বৃষ্টি নামল। প্রশান্তকণ্ঠে অফুরন্ত দোয়া আসছে। কে আছে এবার বাধা হয়ে দাড়াবে?

Facebook Comments