banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 186 বার পঠিত

 

তাঁরা ছুটে বেড়ান ঢাকার রাস্তায়

২৮ জুন। প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগের দিন রাতে তা জানিয়ে দেওয়া হয় মহসিনা খাতুনকে। যথারীতি পরদিন প্রস্তুত হয়ে নেমে পড়েন কাজে। দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা ঠিক রাখা। কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাব্যবস্থায়। মহসিনার বিশেষ একটি পরিচয় আছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যে ২৮ জন নারী সার্জেন্ট নিয়োগ পান, তাঁদেরই একজন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে কাজে যোগ দেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। বর্তমানে কাজ করছেন রাজধানীর পল্লবী ট্রাফিক জোনে।

মহসিনা যখন ভিভিআইপি দায়িত্বে ব্যস্ত, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের সামনে থাকা পুলিশ বক্সে কথা হচ্ছিল আরেক নারী সার্জেন্ট শারমিন আক্তার জাহানের সঙ্গে। কিন্তু আলাপ শুরু হতেই টেবিলে রাখা ওয়াকিটকিতে একটি সংকেত এল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে ছুটে গেলেন রাস্তায়। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সতর্কতা ও ট্রাফিক-ব্যবস্থা দেখে বোঝা গেল, ভিভিআইপি পদমর্যাদার কেউ আসছেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর রাস্তায় আবার যখন যান চলাচল শুরু হলো, তখন গাড়ির কাগজপত্র দেখছিলেন শারমিন। জানালেন, এসব নিয়মিত কাজেরই অংশ। ডিউটিতে কী কী কাজ করতে হয়? শারমিন বলেন, ‘সিগন্যাল ঠিক রাখা, মামলা দেওয়া, ভিভিআইপি ডিউটি—এসব দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হয়। একেক দিন একেক জায়গায় ডিউটি থাকে। সাধারণত সপ্তাহের শুরুতে জানা যায় ওই সপ্তাহের ডিউটি শিডিউল। তবে ভিভিআইপি ডিউটি থাকলে তা আগের দিন রাতে জানিয়ে দেন ফাঁড়ির মুনশি।

দৈনিক আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় গিয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসেন শারমিন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিসিএস পরীক্ষার। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করা শারমিনের স্বপ্ন পুলিশের বড় কর্তা হওয়া। জানালেন, নিজের কাজের পরিধি বাড়াতে চান আরও। তাই এ স্বপ্ন। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় এত দিনের কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? শারমিন বললেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চালকদের কাগজপত্র বেশির ভাগেরই ঠিক থাকে। ট্রাফিক আইন কড়াকড়ি হওয়ায় তাঁরা চেষ্টা করছেন নিয়ম মানার।
ঢাকার রাস্তায় যাঁদের নিয়মিত যাতায়াত আছে, তাঁদের নিশ্চয় চোখে পড়েছে মহসিনা, শারমিনদের। রাস্তায় শৃঙ্খলা রক্ষা করছেন তাঁরা। প্রতিরোধ করছেন আইন অমান্যকারীদের। ট্রাফিক আইন যাঁরা মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে এই নারীরা পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে মামলা করছেন। আর পথচারীরা জানাচ্ছেন বাহবা। একই দিন শেওড়াপাড়ার পুলিশ বক্সে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট রেহানা পারভীন জানান, প্রথম দিকে তাঁরা যখন দায়িত্ব পালন করতেন, তখন পথচারীরা তাকিয়ে থাকত অবাক দৃষ্টিতে। আর এখন ধন্যবাদ জানায়। রাস্তার শৃঙ্খলা রাখতে সারাক্ষণই ছুটে বেড়ান বাগেরহাটের এই মেয়ে। জানালেন সড়কে যানজট, প্রতিবন্ধকতা দূর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তিনি এমন সেবা দিতে চান, যা কিনা মানুষ মনে রাখে। ইডেন কলেজ থেকে দর্শনে পড়াশোনা শেষ করে পুলিশে যোগ দেন এই নারী সার্জেন্ট।

আর মহসিনার গল্প? রংপুরের কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এই নারী সার্জেন্টের গল্প শুনতে হলে যেতে হবে মিরপুর-১০-এ। ভিভিআইপি ডিউটি শেষ করে মহসিনা ইসি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার আগেই ছুটতে চান নিজের কাজে। আর কাজ শেষে বলবেন কথা। বেলা দেড়টার দিকে মহসিনা মিরপুর-১০-এ যখন ফিরছিলেন, তখন রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন রাস্তায়। আর চেষ্টা করছেন তা দূর করার। কাজ শেষে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ইউনিফর্মের প্রতি ভালো লাগা থেকে যোগ  দিয়েছি পুলিশে। কাজে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা সহায়তা করায় সহজেই সেরে নিতে পারছি নিত্যদিনের দায়িত্ব।’ আগারগাঁও-মিরপুর সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক করতে ২৮ জুন দায়িত্বে ছিলেন এই তিন নারী সার্জেন্ট।

পাঠক, মনে আছে কি আহমদ ছফার দূর্দানাকে? যে কিনা সাইকেল চালিয়ে ছুটে বেড়াত পুরো শহরে। মহসিনা খাতুন, শারমিন আক্তার জাহান, রেহানা পারভীনরাও ছুটে বেড়ান ঢাকার রাস্তায়। কখনো ওয়াকিটকি হাতে, কখনো মোটরসাইকেল চালিয়ে আবার কখনো রাস্তায় সিগন্যাল ঠিক রাখতে। আর তাই তো বনে গেছেন রাস্তার দূর্দানা, যাঁদের ঘুম ভাঙে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। তারপরই প্রস্তুত হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন সকাল সাড়ে ছয়টায়। থাকেন বেলা আড়াইটা পর্যন্ত।

Facebook Comments