banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 460 বার পঠিত

ঢাকা থেকে পারু

 হালিমা খাতুন

 

Bhutan-Paro-Tigers-Nestসকাল থেকে শরীরটা একদম ভাল লাগছে না। গরম পানি, গরম দুধ খেলাম, তবুও যেন শরীরে তাগদ পাচ্ছি না। এ ঘর থেকে ও ঘরে যেয়ে শুচ্ছি, বিছানার এ পাশ থেকে ও পাশ ফিরছি, তবুও দেহ মনটা চাঙ্গা করতে পারছি না। নি®প্রভ দেহ মন নিয়ে, বিছানায় শুয়ে দুপুর ছুঁই ছুঁই, তখনও বিছানায় শুয়ে। সাহেবেরও ছুটি, সেও বাসায়। অলস দেহ মন তারও শরীরটা ভাল না। আমার বড় ছেলে সাকিব কানাডা থাকে। ওর সাথে কথা হলো ও বলেছিল আম্মা তোমরা দুজন সিলেট থেকে বেড়ায় আস। মনে মনে সেখানে যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু বাদ সাধল হরতাল, বিএনপি’র ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তার পরিপ্রেক্ষীতে বিএনপি পর পর তিনদিন হরতাল ডেকেছে। তাতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়াতে একজন পুড়ে মারা গেছে, আরও কয়েকজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। তাই পথে বের হলে আবার কোন পরিস্থিতিতে পড়ি তাই তুনুমুনু করছিলাম কি করব?

 

হঠাৎ সাহেবের ফোন বেজে উঠল। রিসিভ করে হ্যালো, ও ও স্যার, জ্বী বলেন স্যার। আমি আপনাকে বড় ভায়ের মত মনে করি, আর আপনি আমাকে না নিয়ে ভূটান চলে যাবেন?

 

হ্যাঁ যাব। কথা শেষ করে আমাকে বললো, জামান স্যাররা এবার ছুটিতে ভূটান যাবে। সেও দেখি ভূটান যাবার জন্য একবাক্যে রাজি। আমার দেহ-মন্টা যেন ঝেড়ে উঠল। উঠে বসলাম, ভাল না লাগাটা যেন মন থেকে আস্তে আস্তে ভ্যানিস হয়ে যেতে লাগল, দক্ষিণা হাওয়ার স্নিগ্ধ পরশে যেন আমেশ দিয়ে গেল।

 

মনে পড়ল, আগের দিনের ডাক্তাররা রুগী বেশী অসুস্থ হলে বা বেশী দিন ধরে অসুস্থ থাকলে হাওয়া বদলের পরামর্শ দিতেন। আজ ডাক্তারদের তেমন পরামর্শের কথা খুব একটা শুনা যায় না। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে মানুষ নিজেরাই একটু সময় সুযোগ করে বেড়ায়, কর্মে উৎসাহ-উদ্দিপনা ও মনোযোগ আনার জন্য।

 

আয়াত: তিনি (আল্লাহ) এমন যিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে ও জলধীতে পরিভ্রমণ করান। (সূরা ইউনুস-২২ আয়াতাংশ)

 

যাইহোক আমরা টাকা আর পাসপোর্ট জমা দিলাম ভূটানে যাবার জন্য। সার্কভূক্ত দেশ বলে আমাদের পাসপোর্ট ভিসা লাগলো না। আমাদেরকে অনারী ভিসা অর্থাৎ সম্মানজনক ভিসা দেয়া হল। ২৭ শে এপ্রিল ২০১২ তারিখ শুক্রবার রয়েল ভূঠান এয়ার লাইন্সের সকাল ৮.৫০ মিনিটে ভূটানের পারুর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। মাত্র ৪৫ মিনিটে আমরা পেরুতে এসে পৌছাই। ভাল লাগল ভীষণ ভাল লাগলো। সার্কভূক্ত দেশ হওয়ায় পাসপোর্টে ভিসা লাগার ঝামেলা হল না। সব সার্ক ভূক্ত দেশগুলো যদি এমনটি করত তবে খুবই ভাল হোত। সার্কের সার্থকতা হোত।

 

সবাই প্লেনের জানালা দিয়ে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বাইরে দেখতেছে। আমিও তাদের দেখাদেখি বাইরে তাকাই। দৃষ্টিগোচর হয় পাহাড় আর পাহাড়। দুই পাহাড়ের মাঝখান থেকে প্লেনটি অতি সাবধানে ছোট্ট এয়ারপোর্ট পারুতে এসে অবস্থান করে। রানও বেশি করতে হয়নি। আমারা তো মুগ্ধ। যাত্রীরা সব প্লেন থেকে নামে, চারিদিকে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা এয়ারপোর্ট । একটু পরে দেখি যাত্রীদের মধ্যে ছবি তোলা হিড়িক পড়ে গেছে। আমরাও তা থেকে পিছিয়ে রইলাম না। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আমাদের গাইডম্যঅনের সাথে দেখা হয়। সে আমাদের জন্য মাইক্রো নিয়ে এসেছিল। তাতে চেপে রওনা হলাম। এত তাড়াতাড়ি হোটেলে যেয়ে কি করব? তাই আমাদের নিয়ে গেল মিউজিয়ামে।

 

Taktsang monasteryএখানে সাধারণ নাগরিকের জন্য দশ নু স্টুডেন্টদের জন্য পাঁচ নু, সার্কভুক্ত দেশের জন্য পঞ্চাশ নু ও বিদেশীদের জন্য দুইশত নু। ভূটানের মুদ্রার নাম নু। পাহাড়ি রাস্তা ধরে মিউজিয়ামের আসতে আমদের খুব ভাল লাগছিলো। লোকজন কম, নিরিবিলি শান্ত সুন্দর ঝরনার নুড়ি পাথরের ঝিল, আকাশের কোল ঘেঁষে দাঁড়িযে আছে পাহাড় দুরে নিচের ঘরবাড়ির দৃশ্য মনকে এক কাব্যিক জগতে নিয়ে যাচ্ছিল বার বার। বাইরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ থেকে অনিচছা সত্ত্বেও মনকে বস্তুজগতে নিয়ে গেল। আমরা মিউজিয়ামে প্রবেশ করলাম।  কিছু মুখোশ দেয়ালে লটকানো। দেব দেবীদের কিচু ছবি ও এখানের রাজা ও তার পরিবারের কিছু ছবি ঝুলানো আছে। মিউজিয়ামের ভিতর থেকে বাইরে গাড়িতে একটু তন্দ্রাচ্ছদিত হয়ে পড়লাম। এরপর হোটেল এর সামনে এসে গাড়ীর ধাক্কায় আমার তন্দ্রা ভাঙ্গল। আমাদের গাড়ীর ধাক্কায় অন্য একটা গাড়ীর পাশের লাইট ভেঙ্গে গেছে।

 

অবাক হলাম কারোর মধ্যে কোন উত্তেজনা নেই, কয়েকজন উৎসুক তাকিয়ে দেখল আর আমাদের ড্রাইভার খুব অনুতপ্ত হতে লাগল অন্য গাড়ীর ড্রাইভার বা মালিকের কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। এরকম যদি আমাদের দেশে হত তবে ভিন্ন চিত্র পরিগ্রহ করত। হাতাহাতি লাথালাথি গালাগালি ঝগড়াঝাটি যে কি হতো তা আর বলা অবকাশ রাখে না। আল্লাহ হেদায়াত নসিব করুক। এখঅনের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা দৃষ্টি , হৃদয় ও মনকে আকর্ষণ করে। রাস্তার পাশে ঢাকনা যুক্ত ড্রাম আছে ময়লা আবর্জনার জন্য। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো কি সুন্দর পরিস্কার। আর একটা জিনিসের ও খুব শান্তি পেলাম তা হল তাদের পোশাক আশাক, মেয়েরা ফুলহাতা জামা পরে এবং নিচে পা পর্যন্ত দোপাট্টার মত ঘাগরী পরে, ছেলেদের পেশাকও শালীন। এখানের বেশলিভাগ নারী-পুরুষ তাদের জাতীয় পোশাক পরে। তাদের জাতীয়তাবোধ ও  শালীনতাবোধ দেখে খুব ভাল লাগলো। আমাদের দেশেল মানুষের মধ্যে যে কবে জাতীয়তাবোধ জন্মাবে, সেই আক্ষেপে আসে মনে বার বার। দেশী জিনিসপত্র বাদ দিয়ে বিদেশী জিনিসের প্রতি ঝুঁকে চলেছে তারা দিন দিন। দেশটা যে কোথায় চলেছে কারও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই সব আছে যার যার স্বার্থ নিয়ে। দোয়া করলাম সৃষ্টি কর্তার কাছে, ‘‘আল্লাহ সুবহানুহ তায়ালা আমাদের দেশের মানুষদেরকে তাদের জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করো, দেশ মাটি ও মানুষকে সর্বপরি তোমাকে ভালবাসার তৌফিক দাও। দেশের পরিবার, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ সর্বপরি দেশ থেকে দুর্র্নীতি দূর কর, দেশের সকল নাগরিককে এক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত কর’’ আমিন!

 

দুপুরে আমরা আমাদের হোটেলের পাশের একটা হাটেলে খেতে গেলাম। কথা প্রসঙ্গে আমাদের ড্রাইভার বলছিল গাড়ি এক্সিডেন্টের জন্য তাকে জরিমানা দিতে হবে। আমাদের কে ভাত, মিক্সিস সব্জি, ধনের পাতার ডাল ও রুইমাছ ফ্রাই খেতে দিল। আমরা সবাই আত্মতৃপ্তির সঙ্গে খেলাম কারণ আল্লাহর মর্জিতে রান্নাটা খুব ভাল ছিল। খেয়ে হোটেলে ফিরে আসার পথে আমাদের হোটেলের সামনে একটা পাঁচতলা ট্রী টেক্সটাইল সেখানে গেলাম। সেখানে তিন চারজন মহিলা তাঁত বুনছে। সুন্দর সুন্দর কাপড় বুনছে। দোকানটা ঘুরে দেখলাম, সুন্দর সুন্দর কাপড়ের পোশাক, গায়ের চাদর, বিছানার দাদর, টেবিল ক্লোথ নিচে বসার ম্যাট, সুতি ও সিল্ক এর মধ্যে দেখার মত, দাম ও সেই রকম, তিন হাজার , চার হাজার, পাঁচ হাজার , সত্তর হাজার।

 

Paro Airport, Bhutanভুটানকে আমরা ভেবেছিলাম গরিব দেশ কিন্তু পরে দেখি না আমাদের চেযে তারা উন্নত। আমার পথে ্মারা একটা মানি এক্সচেঞ্জ থেকে আমাদের খরচের জন্য ডলার ভাঙ্গাই একশত ডলারে এখানে দেয় পাঁচ হাজার একশত পঁচাত্তর নু। আর আমাদের একশত ডলার ভাঙ্গালে এখানে দেয় প্রায় আট হাজার পাঁচশত টাকা।  আমাদের একশ টাকা এখানে ষাট নু এর সমান। এাকনের একজনকে জ্যঅকেট পরা দেখে মনে হল এখানে কি এত শীত। আমাদের কাছে তো এমন মনে হচ্ছে না। আমাদের তো ভালই রাগছে, না শীত না গরম। স্বাভাবিক কাপড়েই আছি মিঠা মিঠা ঠান্ডা, মিঠা মিঠা রোদ ভঅলই লাগছে। কিছু রাখলে যেমন আমার গয়না খুলে গোসলে গেলাম। এসে পরতে যেয়ে ভালই ঠান্ডা হয়েছে। এবার একটু একটু করে ঠান্ডা আমাদের শরীরে ভালবাসার পরম আমেজ বুলাতে মুরু করল, এ যেন প্রেমি প্রেমিাকার লুকোচুরি খেলা খেলতে খেলতে অবশেষে ধরা দেয়া। শীতের পোশাক বের করে পরলাম তাতে ও হলো না এবার কম্বলের ভিতর ঢুকলাম অবশেষে ঘরে হিটার ও চালাতে হল।

 

মাগরিবের নামাজের পর আমরা একটু হাটতে বের হলাম। দোকান থেকে মোবাইলে সিম কিনলাম দেশে যোগাযোগের জন্য। মনটা একটু ব্যস্ত হল। ছোট ছেলে সাদিককে দেশে রেখে এসেছি। ওর এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। একটা পরীক্ষার পর সতের দিন বন্ধ তার পর ম্যাথ পরীক্ষা। মাঝে যে পরীক্ষাটা হওয়ার কথা ছিল তা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খঅরৈদা জিযঅ ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ইলিয়াস আলীকে না পাওয়া গেলে রবিাবর থেকে আবার হরতাল। ছেলেটা পড়ছে, নাকি করভে। ফোন দিয়ে ও খোঁজ খবর নিলাম। বড় ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলাম পারলাম না।

 

আসার পথে আবার একটা এ্যাকসিডেন্ট নজি আর প্রাইভেট কারে মুখোমুখি সংঘর্ষ । প্রাইভেট কারের সামনে ভসকায়ে গেচে। ড্রাইভাররা গাড়ি থেকে কেউ নামলো না। রাস্তার দুপাশে উৎসুখ  জনতা দাঁড়িযে দেখল কেউ গাড়ির কাছে গেল না। হঠাৎ কোথা থেকে পুলিশ আসল। কারটাকে ভাল করে দেখে জীপের ড্রাইভঅরের কাছে গেল। তখনও জীপের ড্রাইভার জীপে বসে কথা বলছে। যেটা বুঝলাম তা হল কেউ কার ক্ষতি কররৈ অনাসে সে সেটা স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়। এ থেকে কি আমরা শিক্ষা পেতে পারি না?

 

হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেল সুপার জানাল আটটার মধ্যে দোকানপাট হোটেল সব বন্ধ হয়ে যাবে, আপনাদের খাবার সব রুমে দিয়ে আসা হয়েছে। আমরা রুমে এসে নামাজ পড়ে সবাই এক সাথে খেয়ে নিলাম।

 

মোবাইলে এ্যালার্ম বেজে উঠল আর ঘুম ভেঙ্গে গেল। এ্যালার্ম বন্ধ করে যত তাড়াতাড়ি পারাম ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম। জানালার পর্দা সরিয়ে জানালাটার পাল্লাটা খুলে বাইরে ঝুকে করালের পারুর সৌর্ন্দযটা উপভেঅগ করার চেষ্টা করলাম। খোদা তালায়ার সৃষ্টি কত সুন্দর, পাহাড়রে পাদদেশে ছোট সুন্দর একটা শহর পারু। এখানের মানুষের মন মানসিকতা ও আল্লাহ তায়ালা সুন্দর করে দিয়েছেন।

 

জানালার গ্রীল নেই তাই ঝুকে বাইরেটা দেখতে পালাম খুব ভালভাবে। রাস্তার পাশে বেশ অনেক গাড়ী সারি দেয়া , একজন লোক রাস্তা দিয়ে হেটে আসছে। সারা রাত এ প্রাইভেট কারগুলো বাইরেই ছিল। ভাবরাম আমাদের দেশে গাড়ী গ্রঅরেজে তালা লাগায়েও রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আর এখঅনে রাস্তায় গাড়ি রেখে দিয়েছে। একটা টোকই দেখলাম না, একটা ভিক্ষুক দেখলাম না। হাদীস শরীফে আছে ‘‘উপরের হাত নীচের হাত হতে উত্তম। উপরের হাত হল তাদার এবং নীচের হাত দান গ্রহীতার। অন্য এক দাহীসে আছে, যে ব্যক্তি অন্যের নিকট হাত না পেতে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে তো পবিত্র রাখেন এবং যে স্বনির্ভর থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ছোটবেলায় দেখতাম এক হিন্দু বৃদ্ধা মহিলা মাথায় ডালায় করে শাক বিক্রি করতো। মহিলার দাঁত পড়ে চোঁয়াল ভেঙ্গে মুখটা শুকিয়ে গেছে। হাতের মাংশপেশী হাড় থেকে শুকিয়ে ঝুলে পড়েছে। কিন্তু তবুও কাজ করে খেতো। ইসলাম ধর্মে ভিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অথচ মুসলমানের মধ্যই ভিক্ষাবৃত্তি প্রবণতা বেশী। এর কারণ বুঝলাম না।

 

রাস্তার ড্রেনটা কি সুন্দর পরিস্কার। ঝকঝকে স্বচ্ছ পানি বয়ে যাচ্ছে।

 

নিশ্চয় এখঅে ন চোর নাই তাই গাড়ীগুলো রাস্তায় রেখে দিয়েছে। মুরব্বিদের কাছে গল্প শুনেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একবার খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘সবাই পেয়েছে তেলে খনি, সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরে খনি’’। কথাটা মনে পড়ল। একটা জাতির জন্য এটা খুবই দু:খজনক। এ অবস্থা থেকে আমাদের ফিরে আসা দরকার। কিন্তু কিভাবে?

 

দেশের বাড়ী যতলোক আসে সাহায্য সহযোগিতার জন্য পারতপক্ষে কাউকে ফিরানো হয় না যতটুকু পারা যায় দেয়া হয়। তারপরও কয়েকদিন আগে আমার সেঝ দেবর ফোন করে বলল, ভাবী আমাদের পানির চাপ কল চোরে নিয়ে গেছে, গোড়া  থেকে কেটে। বড় কষ্ট লাগলো, কত মানুষ এ কল থেকে পনি খেত, অন্যান্য কাজে ব্যবহার করত। যেদিন ভুটান আসি ও দিন  বাড়ি থেকে ফেন করে বলল, স্যালো মেশিনটা চোরে নিয়ে গেছে। একটা গ্রামের চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে যদি চুরি হয় তবে কি বলবেন বলেন?

 

বড় বড় নেতারা ও হোতারা ও কর্মকর্তারা করে পুকুর চুরি আর ছোট চোরেরা করে ছিচকে চুরি । তবে কোনটাকে উৎসহা দেওয়ার অবকাশ নেই। দুটোই চুরি , চুরি । তবে কোনটাকে উৎসহা দেওয়ার অবকাশ নেই। দুটোই চুরি, চুরি একটি কবিরা গুনাহ অর্থাৎ বড় গুনাহ।

 

আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা চুরি করার নিষেধজ্ঞা ও বিচার সম্বন্ধে বলেছেন:

 

হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পর এক অন্যের সম্পদ না-হকভাবে আত্মসাৎ করো না। কিন্তু ব্যবসায় বাণিজ্যে যাহা পরস্পরের সম্মিতিক্রমে হয়, তাহলে দোষ নাই। (সূরা নিসা-২৯ আয়াত)

 

আল-কুরআনে একটা ঘটনা কম বেশি আমরা সাই জানি, এক সম্ভ্রান্ত মহিলা চুরি কররে রাসূল (ষা:) বললেন, এ কাজ যদি আমার মেয়ে ফাতিমা (রা:) ও করতো, তবে আমি তারও হাক কেটে ফেলার আদেশ দিতাম। আমাদরে দেশে দুচারটার হাত যদি কাটা হোত তবে চুরিটা ইনশাআল্লাহ বন্ধ হতো। তাই বেল আমি বলচিনা যে আমাদের দেশে সৎ মানুষ নেই। আমরা অনেকেে জানি আমেরিকায় আমাদের এক বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভার ভাই এক তোড়া ডায়মন্ড পেয়েছিল। তার নিজ গাড়ির ভিতর। তিনি মালিককে খুঁজে তা ফেরত দেন। এক রিক্সা ড্রাইভার তার রিক্সায় লক্ষাধিক টাকা পেয়েছল সেও তার মালিককে খুঁজে ফেরৎ দেয়। মহৎ লোকের কার্যকলাপে ম্লান হয়ে না যায়। তাদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। আমাদের মন মানসিকতাকে উন্নত করি। আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক কথা লিখে ফেললাম কারণ মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যাচ্ছে। ওজনে কম দিচ্ছে, ভাল বেল পচা মাছ, ফলমূল, তরিতরকারী দিয়ে দিচ্ছে, অহরহ মানুষ মানুসের সাথে প্রতারণ করছে। অথট আমরা মুসলমনা এসব স্বভাব আমাদের মধ্যে থাকা উচিৎ নয়।

 

রাসূল (সা:) বলেছেন ‘‘ প্রতারক আমদেরে দলভূক্ত নয় ’’।

 

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘‘তোমরা উত্তম সম্প্রদায় , যে সম্প্রদায়কে মানবমন্ডলীল উভয় জগতের কল্যানের জন্য করা হয়েছে, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ ’’। (সূরা আলে-ইমরান-১১০)

 

‘‘মানুষ বড় ক্ষতির মধ্যে, তবে তাহা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করে , হকের পথে দাওয়াত দেয় ও সবরের উপদেশ দেয়’’। (সূরা আল আসর ১-২)।

 

‘‘তুমি কি ইচার প্রতি লক্ষ কর নাই যে আল্লাহ আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেছেন, অত:পর আমি উহা দিয়া বিচিত্র বর্ণের ফলমুল উৎপন্ন করেছি। আর পর্বতমালারও বিভিন্ন অংশ আছে, সাদা, নীল, উহাদেরও বিভিন্ন বর্ণ আছে আর বহু আছে গাঢ়,  কালো বর্ণের’’। (সূরা ফাতেহ-২৭-২৮)

 

সুবহানাল্লাহ!  আমি অনেক পাহাড় দেখেছি, ভরতে, নেপালে, মালয়েশিয়ায়, বাংলাদেশে, সৌদি আরবে ও ভূটানে। এক এক স্থানে পাহাড় এক এক রকম। কোন কোন স্থানের পাহাড় নিচু কোনটার মাথা তীর্যক, কোনটার মাথা চ্যাপ্টা, কোনটার আবার লাল, কোন পাহাড় কাল পাথরের, কোনটা আবার পাথর মাটির সংমিশ্রণে।

 

কোনটা আবার ঢাকা। এক একটার মধ্যে এক এক রকমের সৌন্দর্য। ভুটানের পাহাড়গুলো অনেক উচু। চারিদিকে এত সুন্দরের ছড়াছড়ি।-(চলবে)

Facebook Comments