অপরাজিতা
মালয়েশিয়ার ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে যার কারণ একজন নারী।
মালয়েশিয়ার পরবর্তী উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ, দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। প্রথম নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ উপ-প্রধানমন্ত্রীর হলে নতুন এক পদচিহ্নকে স্বাগত জানাবে মালয়েশিয়ার ইতিহাস।
অনুপ্রেরণা সৃষ্টকারী নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হল,
একটি শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে পাওয়া যায় ডা.ওয়ান আজিজাহ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে পয়লা ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে কিন্তু বড় হয়েছেন কেদা শহরে। আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে সার্জন মেডিসিনে পড়াশুনার পাশাপাশি সেরেবান কুশিয়াহ কলেজ থেকে তিনি তাত্ত্বিক শিক্ষাও অর্জন করেন। তিনি সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক ও গাইনোকোলজির উপর বিশেষ অবদান রাখার কারণে স্বর্ণ পদক পান। পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। ১৪ বছর ধরে একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত থাকার পর ১৯৯৩ সালে তার হাজবেন্ড আনোয়ার ইব্রাহিমকে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হলে পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল ক্যান্সার হসপিটালে কাউন্সিলরে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
২. মা ও গ্রান্ডমাদার
ডা.ওয়ান আজিজাহ ছয় সন্তানের জননী এবং রয়েছে নয়জন নাতি-নাতনি
যদিওবা ওনার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিশিষ্ট্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার কারণে অনেকেই তা জানে না। একটি সাক্ষাৎকারে, তার বড় মেয়ে নুরুল ইজাহা আনোয়ার জানান, ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ তার ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মজীবন থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারকে অবহেলা করেননি।’
ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন সুদৃঢ় মনোবল সম্পূর্ণা নারী। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলে তখন আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডা.ওয়ান আজিজাহ রিফর্মসি আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, এনজিও সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলন (এডিআইএল) এর নেতৃত্ব দেন এবং তারপর সেই বছরেই কাদিলান নাশিয়াল (পিকেএন)পাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ডা.ওয়ান আজিজাহকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
৪. রাজনীতিতে তার যাত্রা
ডা.ওয়ান আজিজাহ ভাষ্যমতে, “আমি একজন রাজনীতিবিদের স্ত্রী। আমি রাজনীতিবিদ নই। কিন্তু ঘটনাক্রমে, আমাদের পরিবারকে সেই সময় অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি সংগ্রামে অংশ নিই। সংগ্রাম বা যুদ্ধটি আমাদের দুজনকে নীতিগত ভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয়”।
১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, তখন তিনি সংসদে পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেন। নেতৃত্ব তিনি ২০০২ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও আসন লাভ করেন। সেই বছরের মধ্যে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীম ফিরে এলে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীমকে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হলে, ২০১৪ সালে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে তিনি আবার সংসদীয় আসনটি পান।
‘মানবিকতা’ তার স্বভারর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। শান্ত, স্বভাবের হওয়ায় জানা যায় যে, নির্বাচনের মত সময়ও ডা. ওয়ান আজিজাহ ধীর স্থিরভাবে কাজ করতে পারেন। তার মেয়ের মতে, “তিনি হাসিখুশির অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে।” সত্যিকার অর্থে, তিনি একজন অনুপ্রেরণাকারী অসাধারণ নারী।
৬. দৃঢ় সংকল্প
ডা.ওয়ান আজিজাহ একটি দলের সভাপতি এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী হিসেবে কাজ করা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তিনি তার নিজস্ব মতামত ভিত্তিতে এবং দৃঢ়তার সাথে সবসময় কাজ করে গিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেন যে, তিনি তার হাজবেন্ডের জন্য পদটি আগলে রাখবেন। কিন্তু ডা.ওয়ান আজিজাহ বলেছেন, আমি তার জন্য কোন সিট আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি না। আমি দৃঢ়তার সাথে মনে করি, একজন নারী হিসেবে যে কেউ ভাল ভাবে যে কোন কাজ উপস্থাপনা করতে সক্ষম।
৭. নারীদের ক্ষমতায় প্রতি তার বিশ্বাস
নারীদের ক্ষমতার প্রতি তার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস।একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন-“আমাদের অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী হবার মত।” তার মতে, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা, বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমরা নারীরাও একটি শক্তি হতে পারি।”
একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার এই পুরো যুদ্ধটাই তিনি করেছিলেন তার ছোট ছোট সন্তানদের সাথে নিয়ে।
সুত্র: buro 247.my থেকে অনুবাদ