ডা. মারুফ রায়হান খান
রোজাতে ডায়াবেটিক রোগীর যে সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন চিকিৎসকরা–তা হচ্ছে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ (Hypoglycemia)।সহজ ভাষায় বলতে গেলে রক্তে গ্লুকোজ/সুগারের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৫ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হিসেবে ধরা হয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া এতো মারাত্নক হতে পারে যে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিজন ডায়াবেটিস রোগীর এবং তার পরিবার-পরিজনের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং করণীয় কী তা জানা অবশ্যই প্রয়োজন।
সচরাচর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় :
– অতিরিক্ত ঘাম
– হাত-পা কাঁপা
– বুক ধড়ফড় করা
– বেশি ক্ষুধা লাগা
– উদ্বিগ্নতা
– ঝিমাতে থাকা
– কথা জড়িয়ে যাওয়া
– মনোযোগ প্রদানে বিঘ্ন ঘটা
– অল্পতে রেগে যাওয়া
– বমি বমি ভাব
– মাথা ব্যথা/ মাথা ঘোরা ইত্যাদি।
রোগীর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে সাথে সাথে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। তা যদি ইফতারের ১০ মিনিট আগেও হয়।
৪. শারীয়াহগত দিক থেকে রোজা রেখে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে কোনো বাধা নেই। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা থাকা অবস্থায় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেহরির ঘণ্টা দুয়েক পর এবং ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত। এছাড়া অন্যান্য সময়েও পরীক্ষা করা যেতে পারে।
৫. যেকোনো সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৩ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। এছাড়া সেহরি করার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের নিচে নেমে যায় তখনও রোজা ভাঙতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি বেড়ে গেলেও রোজা ত্যাগ করতে হবে।
৬. ক্যালোরি এবং খাবারের গঠনগত দিক থেকে রমাদানের আগে যেমন স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতেন, রমাদানেও তেমনটাই চলবে। সেহরির সময় অপেক্ষাকৃত জটিল শর্করা যেগুলো হজম ও শোষণ ধীরে ধীরে হয় তেমন খাবার খেতে হবে। সেহরির সময় ভাত, রুটি, নান, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
ইফতারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে :
– অনেক বেশি পরিমাণ শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
– মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
– মিষ্টি পানীয় পরিহার করতে হবে। মিষ্টি শরবতের বদলে আল্লাহর দেওয়া ‘প্রাকৃতিক শরবত’ ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।
– ইফতার থেকে সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি খেতে হবে।
আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেহরি যতোটা সম্ভব দেরিতে খেতে হবে আর ইফতার যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাদের ধর্মীয় বিধানও তা-ই শিক্ষা দেয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধে এটি একটি খুবই কার্যকরী উপায়।
৭. রোজাতে প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে কোনো বাধা নেই। তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করাই ভালো। ইফতার এবং সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টাখানেকের জন্যে শরীরচর্চা করা যেতে পারে। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি অতিরিক্ত নামাজও শরীরচর্চা হিসেবে বিবেচনায় রাখা উচিত।
৮. সবশেষে আসা যাক ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নিতে হবে। প্রত্যেকটা রোগীকে চিকিৎসকই ঠিক করে দেবেন এটা। তবে খুব সাধারণভাবে একটু আলোচনা করা যাক।
চলবে…