banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 621 বার পঠিত

 

ডাক্তার আর সংযোগের প্রচেষ্টায় রিমুর নতুন জীবন

তাসলিমা সিদ্দিকা রিমু। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লাইভ স্টক সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নেই। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দুই মাস আগে রিমু জানলেন হার্টের একটি ভাল্ব নষ্ট। জন্ম থেকে বয়ে বেড়াচ্ছেন জন্মগত হার্টের এক কঠিন রোগ। যার নাম এবস্টেইন এনোমালি। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে প্রথমে নিজ জেলা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখালো রিমুর পরিবার। তারপর ঢাকায়।

চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু এতো টাকা রিমুর পরিবার কোথায় পাবে? তারপর খুব জটিল অপারেশন। কোথায় করবে এই অপারেশন। সাধারণত ১ লাখ ভাল্ব অপারেশনের রোগীর মধ্যে একজনের এ ধরনের সমস্যা হয়। বন্ধু আর পরিবারের সদস্যরা মিলে কিছু টাকা জোগাড় করলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে যে রিমুর পরির্পূণ অপারেশন সম্ভব নয়।

এ বাস্তবতায় রিমুর চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহ করতে এগিয়ে এলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’। সংযোগ প্লাজমা ও ব্লাড ডোনেশন টিমের নিরন্তর চেষ্টা আর গ্রুপের সদস্যসহ দেশ-বিদেশের কিছু মানুষের সহযোগিতায় অর্থের সংস্থান হলো। সংযোগের স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তারদের সহযোগিতায় রিমুর অপারেশনের জন্য খুঁজে বের করা হলো ডাক্তার। অপারেশনের ঝুঁকি আর জটিলতা জানা সত্ত্বেও রিমুকে ভর্তি নিলেন মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন সামির আযম। ডা. সামির আযমের নেতৃত্বে গত ৭ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার অপারেশনের পর রিমুর হৃদযন্ত্র নতুন ভাল্ব পায়। পায় স্বাভাবিক ছন্দ।

এত দীর্ঘ সময়ের জটিল অপারেশন সত্ত্বেও কোনো অপারেশন চার্জ নেননি ডা. সামির আযম। রিমু গতকাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন। একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছেন। অপারেশনের ধকল কাটিয়ে একটি সুস্থ হৃদযন্ত্রে নতুন জীবনের প্রহর গুনছেন। তাসলিমা সিদ্দিকা রিমুর অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সামির আযম বলেন, ‘খুব গুরুতর হয়ে উঠেছিল রিমুর অবস্থা। দ্রুত অপারেশন করানোয় ঝুঁকি অনেকটা মোকাবিলা করা গেছে। রিমু এখন সুস্থ। সংযোগসহ সবার প্রচেষ্টাই রিমুকে নতুন জীবন দিয়েছে।’

সংযোগের ডাক্তার টিমের অন্যতম সদস্য ও ফেসবুক গ্রুপ অ্যাডমিন ডা. ফারজানা নাসরিন ইনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ পাওয়া অনেক সময় সাধারণ মানুষের জন্য মুশকিল হয়ে যায়। আমরা সংযোগের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের কোভিডকালীন সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি রিমুসহ কয়েকজন রোগীর জন্য কম খরচে ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি, যাতে মানুষ অক্সিজেন পায়।’

সংযোগ: কানেক্টিং পিপল ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর বুয়েট প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, ‘সংযোগের কাজই হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষকে যুক্ত করা। মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা নানাভাবে সবাই মিলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

তিনি ডা. সামির আযম, সংযোগ ফেসবুক গ্রুপের ২৪ হাজার সদস্যসহ সংযোগের ডাক্তার ও প্লাজমা টিমের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Facebook Comments