ডাক্তারদের এসব কি কাহিনী !!!
ডা. মারুফ রায়হান খান
১. “আমার প্রতিবন্ধী বড় ছেলেটা রাতে আমার সাথে ঘুমাতো। এখন ঘুমায় না তিন সপ্তাহ হলো। আমি বাইরে কাজ করি, ভয়ে ওকে রাতে কাছে রাখি না। ওর ছবিটা আমার কাভার ছবি, সেটা দেখি সারাদিন।
মেয়েটা ঘরে ঢুকলে দৌড়িয়ে চুমু খেতো। আসতে দিই না।
আমি শক্ত মানুষ তারপরও কালকে কাঁদলাম অনেকক্ষণ।”
– জনৈক চিকিৎসক বাবা।
২. “বাবা মারা যান গত বছর। এখন আমার দোয়া চাওয়ার ভান্ডার আমার মমতাময়ী মা। মা-এর কাছে যাব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সবার ছুটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। মা-কে নিজের কাছেও নিয়ে আসতে পারছিনা। সারাদিন হাসপাতালে নানা রকমের রোগী দেখা লাগে। মা বয়স্ক মানুষ বাসায় আবার আমার থেকে যদি মায়ের কোন ক্ষতি হয়, তাই। জানি না মায়ের সাথে আবার কবে দেখা হবে।
– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।
৩. “দরজা খুলে যোয়ানা যখন দৌড়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে নিলো তখন চারপাশ থেকে এক সাথে সবাই বলে উঠলো, “এটা করা যাবে না,যোয়ানা।”
এমনকি তার দৌড় দেখে আমি নিজেও ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম।
যোয়ানা তখন আমাকে বলে উঠলো,
– কোথা থেকে আসছো, আব্বু?
– হসপিটাল থেকে আসছি, বাবা।
– হসপিটালে কি করছো, ইনজিকশন দিছো?
– হুম ইনজিকশন দিছি।
– তুমি আমার সাথে ঘুমতে আসছো আব্বু?
– না বাবা।আমি থাকবো না।
মেয়েটা বার বার তখন মন খারাপ করে আমাকে বলছিলো, “আমাকে আদর করো, এখানে থাকে যাও।” এমনকি যখন চলে আসার জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন এই একই কথা বলতে বলতে ও গেইট পর্যন্ত চলে আসলো।
এমনকি যখন লিফটেও উঠছিলাম তখনও ও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আর যেনো ভাবছিল কীভাবে তার পাষণ্ড বাবা ছোট্ট মনটা ভেঙে লিফটের দরজার ওপাশে হারিয়ে যায়।
শুধু একটা কথাই মনে হলো, ডাক্তার না হলে হয়তো এই খারাপ সময়ে ছোট্ট যোয়ানার ছোট্ট মনটা আমার ভাঙা লাগতো না।
অন্য সবার মত বাসায় বসে বসে ডাক্তারকে গাল মন্দ করে ফেসবুক গরম করে ফেলা যেতো।”
– জনৈক চিকিৎসক বাবা।
৪. “আমার মায়ের মুখে প্রথমবারের মতো শুনলাম যে তোকে ডাক্তারি পড়ানো ঠিক হয়নি। তাহলে তুইও আমাদের সাথে আজ ঘরে থাকতে পারতি।”
– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।
একজন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক আইসিইউতে।