banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 191 বার পঠিত

ট্রেন চালাতে ভয় কেটেছে সালমার

14172_f2সালমা ট্রেন চালান, এটা এখন পুরনো কথা। বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র নারী সহকারী ট্রেনচালক সালমা খাতুন। দশ বছর আগে ২০০৪ সালের ৮ই মার্চ চাকরিতে যোগ দেন। দিনে-রাতে কত নগর, বন্দর, গ্রামকে পেছনে ফেলে হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলে তার ট্রেন, কিন্তু সালমাকে কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক। একান্ত আলাপচারিতায় সালমা বলেন, যেদিন প্রথম এই কাজ শুরু করলাম তখন মনে কিছুটা ভয় কাজ করছিল। নতুন জায়গা, নতুন চাকরি মানিয়ে নিতে পারবো কিনা এই একটা চিন্তা ছিল। তবে এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমি নিজের জায়গা নিজে তৈরি করে নিয়েছি। চ্যালেঞ্জের এই চাকরিতে আসার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সবসময় একটা ইচ্ছা ছিল একটু ভিন্ন কিছু করবো, তবে ভিন্নকিছু বলতে ট্রেনের চালক হবো- তা কখনও মনে ছিল না। একদিন মেজো ভাই আবুল কালাম আজাদ ফোন করে জানান, রেলওয়ের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি খুঁজে বের করে সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার পদে আবেদন করি। তখন ভাবলাম দেখি না এখানে কোন মেয়ে নেই, আমি কিছু করতে পারি কিনা। এই চিন্তা থেকেই এখানে আসা।

সালমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে। বাবা প্রয়াত বেলায়েত হোসেন খান। মা সায়রা বেগম। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সালমা খাতুন চতুর্থ। তিনি অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও ২০০২ সালে কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। সালমা খাতুন একদিকে চাকরি করছেন অন্যদিকে সংসার করছেন। ২০১১ সালের ২০শে জুলাই বিয়ে করেন ঢাকা জজকোর্টে কর্মরত ঝিনাইদহের ছেলে হাফিজ উদ্দিনকে। তাদের ১ বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। তার নাম আদিবা ইবনাত লাবন্য। পরিবারের সবার সহযোগিতায় খুব ভালভাবেই তিনি চাকরি করছেন। এক্ষেত্রে তার স্বামীর সহযোগিতা অনেক বেশি। সালমা জানান, ২০০৩ সালের ১৮ই জুলাই রেলওয়ের রাজশাহী জোনাল অফিসে টাঙ্গাইল জেলা থেকে আরও ১৩৪ জন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তিনিও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ঢাকার ১৭টি জেলা থেকে মাত্র দু’জন মেয়ে আবেদনকারী ছিলেন। ওই বছর ২৮শে সেপ্টেম্বর তার বাড়ির ঠিকানায় আসে মৌখিক পরীক্ষার চিঠি।

২০০৪ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি হাতে পান নিয়োগপত্র। এটিই ছিল তার জীবনে চাকরির প্রথম আবেদন এবং সফলতা। তার কাজ ট্রেনচালকের পাশে বসে সহযোগিতা করা। নিয়োগের পর টানা দু’বছর সালমা চট্টগ্রাামের হালিশহর প্রশিক্ষণ একাডেমী, পাহাড়তলী ও ঢাকা লোকোমোটিভ শেডসহ বিভিন্ন ওয়ার্কশপে হাতে-কলমে শিক্ষা নেন। দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা লোকোমোটিভ বিভাগে যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি চালকের সঙ্গে ট্রেন চালান। প্রথমদিন ট্রেনে ওঠার অনূভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ বছর বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং শেষে প্রথম ট্রেন চালান ২০০৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি। রুট ছিল লাকসাম-নোয়াখালী। তিনি বলেন, যেদিন আমি সহকারী চালক হিসেবে ট্রেনে উঠি সেদিনের অনূভূতি বলে প্রকাশ করতে পারবো না। একদিকে মনে আনন্দ, অন্যদিকে একটু একটু ভয়। এ নিয়ে আগেরদিন ঘুমাতে পারিনি।

সকালে উঠে আমি যে বাসায় থাকতাম সে বাসার খালা-খালুকে বললাম তখন তারা বললেন তুমি ভয় পেয়ো না আমরা সেখানে থাকবো। তারপর তাদের দোয়া নিয়ে লাকসাম-নোয়াখালী রুটে প্রথম ট্রেন চালালাম। এ কাজ করতে গিয়ে সালমাকে অনেক স্থানে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী থেকে ফিরছিলেন। রাত ৮টা বেজে যায় নোয়াখালীতেই। জানাজানি হয় ট্রেনে নারী চালক রয়েছেন। সোনাইমুড়ী স্টেশনে আসতেই ভিড় করে লোকজন। সালমা ট্রেন থামিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে শান্ত হয় পরিস্থিতি। তিনি বলেন, আরও একটি প্রমোশনের পর পূর্ণাঙ্গ চালক হয়ে তিনি একাই ট্রেন চালাতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এ পেশায় এখনও মেয়েদের কাজ করার পরিবেশ পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তবে এ পেশায় মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে গেলে পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। প্রথমে অনেকে আমার এই চাকরিটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। যারা এটাকে ভাল চোখে দেখতো না তারাও আমাকে উৎসাহিত করেন। মেয়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী। সব জায়গায় নারীদের অগ্রগতি বাড়ছে। কে কি বললো সেদিকে কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে তাহলে আমাদের দেশের নারীরা অনেক ভাল কিছু করতে পারবে।

অপরাজিতাবিডি ডটকম/মানবজমিন/আরআই/এ/৮মার্চ২০১৪

 

Facebook Comments