আফরোজা হাসান
সূর্য না থাকলে মনেহয় আমাদের জানাই হতো না নিজে ডুবে যেতে যেতেও চারিদিকে মুগ্ধময় সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটানো যায়, তাই না? ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে আপন মনের প্রশ্নটা করলো নূরি।
নূরির পাশে বসা যায়েদও মুগ্ধ চোখে সূর্যাস্তই দেখছিল। প্রশ্ন শুনে নূরির দিকে তাকালো। একটু ক্ষণ চুপ থেকে বলল, সূর্যাস্তের প্রতীক্ষাতে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়। যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?
ঘুরে যায়েদের দিকে তাকিয়ে নূরি বলল, জ্বি? আপনার প্রশ্নটা ঠিক বুঝিনি আমি।
যায়েদ হেসে বলল, আমরা জানি আজকের সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে বলেই, আগামীকাল নতুন প্রভাতের আহ্বান নিয়ে হাজির হবে নতুন সূর্যোদয়। কিন্তু যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?
এবারো বুঝিনি আপনার প্রশ্ন।
বোঝনি কারণ তোমার চিন্তার ফোকাস এখন আমার কথার দিকে নেই। তুমি এখন অন্য জগতের বাসিন্দা।
এতই যখন বোঝেন তখন না প্যাঁচিয়ে সহজ কথায় বলে দিলেই তো হচ্ছে। হাসি মুখে বললো নূরি।
আমরা যদি আগামীকালের সূর্যোদয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকতাম, তাহলে কিন্তু সূর্যাস্তের সৌন্দর্য আমাদেরকে মুগ্ধ বা ভাবুক করতে পারতো না। বরং শঙ্কিত ও আতঙ্কিত করতো চির আঁধারে ঢেকে যাবার চিন্তা। তাছাড়া ডুবে যাওয়ার পথে সূর্য তো অনেক সুন্দরের স্বপ্নও দিয়ে যায়।
সেটা কিভাবে?
নক্ষত্রের রাতের স্বপ্ন! আকাশের শামিয়ানায় তারার ফুলদের বিচ্ছুরণ, জোছনার শিশির, জোনাকির টিমটিমে আলো। আরো কতো কি!
তারমানে ডুবন্ত কিছু তখনই আমাদের মনে আনন্দের আবহ তৈরি করতে পারে, যখন তার ফিরে আসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে? যখন তার পরেও সুন্দরের আয়োজন থাকে, এই তো?
হুম, শূন্যতার সৌন্দর্য পূর্ণতার আশায় লুকায়িত।
আপনার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসাই ঠিক না। অদ্ভুত সব তথ্য দিয়ে মনের মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেন।
কারো সামান্য কথাতেই যে মুগ্ধতার বারোটা বেজে যায়। সেটা আসলেই মুগ্ধতা ছিল কিনা সেটা গবেষণার দাবীদার। তুমি তোমার তথ্যের দ্বারা আমার মনের একটা মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেখাও তো দেখি!
মাফ চাই। আমি নামাজে যাচ্ছি মাগরীবের।
যাচ্ছো যাও। কিন্তু জেনে রাখো, অন্যের কথার স্রোতে যার ভালো লাগা, ভালোবাসা, পছন্দ কিংবা মুগ্ধতা ভেসে যায়। তার শেখা উচিত কিভাবে ভালোবাসতে হয়, মুগ্ধ হতে হয়।
বেশ তো! একটা ইন্সিটিউট খুলে ফেলুন আপনি। তার সামনে বড় বড় করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিন, এখানে সঠিক পদ্ধতিতে ভালো লাগা, ভালোবাসা এবং মুগ্ধ হতে শেখানো হয়।
যায়েদ হেসে বলল, তুমি যদি সেই ইন্সটিউটের ফার্স্ট স্টুডেন্ট হতে রাজী থাকো। তাহলে আজই আমি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ।
মাফ চাই।
না না এখনই মাফ চেয়ে কাজ নেই। আমি মসজিদ থেকে মাগরীবের নামাজ আদায় করে আসি। তুমিও ততক্ষণে চিন্তা-ভাবনা করে দেখো। এরপর নাহয় জবাব দিয়ো।
আর কিছু না বলে হাসি মুখে রুমের দিকে পা বাড়ালো নূরি। যায়েদও উঠে মসজিদে রওনা হলো। মাগরীবের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ আম্মি আর বাপীর সাথে বসে গল্প করে যায়েদ। আজও বাপী আর আম্মির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রুমে এলো। নূরিকে চুপচাপ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড রকম বিরক্তি ভাব ঘিরে ধরলো মনকে। খানিকটা বিরক্তি মাখানো স্বরে বলল, আমার ভয়াবহ রকমের রাগ হয় কখন জানো?
প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকালো নূরি।
যায়েদ বলল, যখন তুমি খুব কাছে থেকেও আমার সাথে থাকো না। আইমিন, শারীরিক ভাবে তো পাশে থাকো কিন্তু তোমার চিন্তা-চেতনা ব্যস্ত থাকে অন্য কিছু নিয়ে।
তখন আপনার কি করতে ইচ্ছে করে?
ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে তোমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
হেসে ফেললো নূরি। যায়েদ চেহারায় গাম্ভীর্য ধরে রেখেই বলল, কি হয়েছে সেটা কি দয়া করে বলবে? হসপিটাল থেকে ফেরার পর থেকেই দেখছি তোমার বসবাস অন্য কোথাও। তোমার মুড যদি এমনই থাকে তাহলে দয়াকরে আমাকে আগে জানিয়ে দিও। আমি সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরবো না।
আপনি রাগ করছেন কেন? মন খারাপের সুরে বললো নূরি।
কারণ তুমি রাগ করার মতোই কাজ করো। আজ নতুন তো নয় এটা। গত আট মাসে একাধিক বার এমন হয়েছে। অন্য মানুষের চিন্তায় তুমি আমাদের সুন্দর সময় গুলোকে নষ্ট হয়ে যেতে দিয়েছো। হ্যা একসময় আমার স্বভাবে এই সমস্যাটি ছিল। এখন কিন্তু আমি বাইরের প্রভাব পড়তে দেই না আমাদের ব্যক্তিগত সময়ে।
আপনি আমার মতো হয়ে গিয়েছেন তো তাই আমি আপনার মতো হয়ে গিয়েছি। এখানে দোষ আমার না। দোষ নিউটনের তৃতীয় সূত্রের। “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে”৷
যায়েদ হেসে বলল, তোমাকে আসলেই ছুটিতে পাঠাতে হবে বুঝেছো? ব্যাগ গুছিয়ে রাখো আগামীকাল সকালে হসপিটালে যাবার আগে তোমাকে বাবার বাসায় নামিয়ে দেবো।
এত সামান্য কারণে আপনি আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন?
অদৃশ্য দুরুত্ব মিটিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে কখনো কখনো দৃশ্যমান দুরুত্ব অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। কাছাকাছি থেকে একে অন্যের উপর বিরক্ত হবার চেয়ে, কিছু সময়ের জন্য দূরে গিয়ে একে অন্যের ব্যাপারে এবং নিজ নিজ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা সুযোগ তৈরি করে নেয়া উচিত। যাইহোক, তোমার আর আমার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা কি জানো?
কি?
তুমি যখনই আমার কোন দোষ বলো আমি বিনা তর্কে সেটা মেনে নেই। এবং শুধু মেনে নিয়েই বসে থাকি না। সেটাকে রিকোভার করার চেষ্টা করি। কিন্তু তোমাকে কিছু বললে প্রথমত তুমি মনখারাপ করো, এরপর যুক্তি দেখাও তোমার আচরণের পেছনে, সবশেষে গাল ফুলিয়ে বলো, এটুকু তো আপনি মেনে নিলেও পারেন।
ঠিকই তো মেনে নিলেই তো পারেন। আমি তো কখনোই নিজের জন্য অস্থির হই না।
এখানেই তো আপত্তি আমার। অন্যের জন্য তোমার অস্থিরতা আমি কেন মেনে নেবো? দাম্পত্য জীবনে কম্প্রোমাইজ করতে হয় এটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। প্রয়োজনে কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করতেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এসব আমি করবো আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অমিল বা সমস্যার ক্ষেত্রে। যাতে আমাদের সম্পর্ক আরো সুন্দর ও সহজ হয় সেই উদ্দেশ্যে। বাট অন্যদের সমস্যা কারণে তোমার এলোমেলো মুডের জন্য অবশ্যই আমি কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করবো না। কেননা এই ধরণের কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইসই একসময় গিয়ে আমাদের দুরুত্ব ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
হুম্ম!
তোমার হুম্ম বলার ধরণই জানিয়ে দিচ্ছে আমার কথাতে তুমি সন্তুষ্ট নও। তুমি চাও নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা স্বভাবের মানুষদের জন্য তোমার তৈরি ‘দুর্দশা দমন কমিটিতে’ আমিও নাম লেখাই। বাড়ির বাইরে সারাক্ষণ আমি এই কাজটিই করি। সুতরাং, বাড়িতে আমি শান্তি চাই। সাউন্ড স্লীপ শান্তি।
নূরি হেসে বলল, শান্তি আবার সাউন্ড স্লীপ হয় কিভাবে?
যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও সমঝদারির বন্ডিংটা এতখানিক দৃঢ় হয় যে, বাইরের মানুষদের অকারণ হৈ-হুল্লোর তাতে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। সেটাই হচ্ছে দাম্পত্য প্রশান্তি।
আমাদের উপর কবে কার প্রভাব পড়লো? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নূরি।
এখনো পড়েনি। কিন্তু তুমি যে পথে চলছো তাতে খুব শিঘ্রীই যে পড়তে শুরু করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ তুমি যুক্তি মানি কিন্তু তালগাছ আমার স্বভাবের মানুষ।
হায় আল্লাহ! এক বসাতে আর কত অপবাদ চাপাবেন আপনি আমার উপর? আমি কবে তালগাছ নিয়ে যুক্তিতর্ক করলাম আপনার সাথে?
এই যে তোমাকে যখনই বোঝাতে যাই তুমি হুম্ম বলো। এরপর যা করছিলে সেটাই করতে থাকো। এর মানে কি?
আপনিই বলেন কি এর মানে?
এরমানে আমার যুক্তিতে তোমার কোন আপত্তি নেই। আবার একই সাথে নিজের করণীয়তেও তোমার পূর্ন সম্মতি বিদ্যমান। অন্যেকে নিয়ে চিন্তাভাবনার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত সময় নষ্ট হচ্ছে, হয় এটা তুমিও জানো। কিন্তু তাই বলে তুমি অন্যেদের নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দেবে না। বরং তুমিও সঠিক সেই ব্যাপারে আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে।
আপনি আমাকে কি করতে বলছেন? আমার সামনে কেউ সমস্যাগ্রস্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে আর আমি দেখেও না দেখার ভান করবো?
তোমার সাথে অনর্থক কথা বলার চাইতে ঘুমোনো উত্তম। কথা শেষ করেই হাত বাড়িয়ে রুমের বাতি নিভিয়ে দিয়ে চাদর টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো যায়েদ।
অন্ধকারের মাঝেও বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো নূরি। এরপর ধীরে ধীরে বলল, বিরুপ পরিস্থিতিতে আপনজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনেক সহজ। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার মোকাবিলায় ভূমিকা রাখাটা হচ্ছে কঠিন। সবসময় হয়তো চাইলেও সম্ভব হয়না কাউকে তার সমস্যা থেকে বের করে নিয়ে আসা। কিন্তু এর ফলে সমস্যায় পতিত ব্যক্তির মনে অন্তত এইটুকু স্বস্থি থাকে যে সে একা নয়। কেউ আছে তার পাশে ঝড়ের মোকাবিলায়। আমরা যদি কোন প্রিয়জনকে বৃষ্টি কিংবা খরতাপ থেকে বাঁচানোর জন্য ছাতা নিয়ে ছুটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াই। কখনো কি সম্ভব বৃষ্টির কিছু ফোঁটা কিংবা রোদের একটুও তাপ গায়ে না লাগিয়ে এমনটা করা? তাহলে এমন আশা কিভাবে করি যে, কারো মানসিক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধতা সময় পাশে গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু আমাদের মন থাকবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত? কন্দনরত কারো পাশে যদি হাসি মুখে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই সেটাই কি অস্বাভাবিক হবে না? আবার বেদনাক্ত কারো পাশ থেকে উঠে এসেই যদি আনন্দ উল্লাসে মগ্ন হয় কেউ, তাকে মুখোশধারী বা হিপোক্রেট ভাবাটাই স্বাভাবিক নয়?
নূরির কথা চুপচাপ শুনছিল যায়েদ। নূরি থামার পর হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালিয়ে উঠে বসে বলল, তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো না প্যাঁচিয়ে সহজ করে বলো।
আমি এটাই বলতে চাইছি যে আপনজনদের দুঃখে যদি আমাদের জীবনে কোন প্রভাবই না পড়ে। আমাদের জীবনের সবকিছু যদি স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে। তারমানে আমরা আসলেই তার আপন কেউ কিনা সেটা গবেষণার দাবী রাখে।
আমার কি মনে হয় জানো?
কি?
তোমার কথা মেনে নেবার আগ পর্যন্ত যে পরিমাণ নিষ্ঠার সাথে তুমি আমার পেছনে লেগে থাকো। এতে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যদি নেপোলিয়নের যুগে তোমার জন্ম হতো, তাহলে অধ্যবসায়ের উদাহরণে মাকড়সার বদলে তোমার নাম ব্যবহৃত হতো। ছোট ছোট শিশুরা অধ্যবসায় রচনায় মাকড়সা নয় নূরির পুনঃ পুনঃ চেষ্টার কাহিনী পড়ে উৎসাহিত হতো।
হেসে ফেলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো নূরি। গাল ফুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল, আমার সম্পর্কে আপনার ধারণা এমন?
যায়েদ হেসে বলল, নূরি মনে আছে তুমিই আমাকে একদিন বলেছিলে যে, কেউ যখন আমাদের পাশে থাকে তখন তার কথা ও কাজের দিকে মনোযোগ না দেয়াটা এক অর্থে তাকে অসম্মান করা। তোমার এই কথাটাকে আমি প্রচন্ড রকম সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলাম। যা আমাকে আমার এই বদভ্যাসটা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহায়তা করেছিল। কারণ আমি নিজেও ফিল করেছিলাম আসলেই এটা খুবই অশোভন কিছু। একজন মানুষ আমার পাশে বসে কথা বলছে অথচ আমি সম্পূর্ণ রূপে তাকে ইগনোর করে নিজের ভাবনাতে মশগুল। আর এই ব্যাপারটা সেই ব্যক্তির জন্যও বেদনাদায়ক যে খুব আশা করে তার মনের কথা প্রিয় কারো সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রিয়জন তার কথাটা শুনে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেনি।
জ্বি আমি এই বেদনার সাথে পরিচিত।
তাহলে সেই বেদনা অন্যেকে কেন দাও? অভিজ্ঞতা আনন্দময় হোক কিংবা বেদনাদায়ক। জীবনকে সেটা প্রয়োগ করার জন্যই তো, তাই না?
আই এম সরি।
হাত বাড়িয়ে নূরিকে কাছে টেনে নিয়ে যায়েদ বলল, এই বিষয়গুলো খুব সিম্পল নূরি। আমরা তাই তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবি না অন্যের প্রতি আমাদের এই অবহেলা সমূহকে। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে, এমন ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি এক্সট্রা কেয়ারই সম্পর্কের মধ্যে মাধুর্য বৃদ্ধি ও অক্ষুণ্ণ রাখে। আমি তাই কখনোই চাই না অন্য কোন ভাবনার গোলকধাঁধায় মগ্ন থেকে আমরা পরস্পরের প্রতি বেখায়ালী আচরণ করি।
আমিও এমনটা চাই না। কখনোই চাই না।
আমি জানি তুমি চাও না। সাথে সাথে আমি এটাও জানি যে, সবসময় নিজের ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয় আমাদের দ্বারা। তাই আজ আবারো বলছি তোমার যদি কখনো ভালো না লাগে, কথা বলতে ইচ্ছে না করে, এমন কোন বিষয় যদি থাকে যা তুমি আমার সাথে শেয়ার করতেও ইচ্ছুক নও। আমাকে সরাসরি বলবে। আমি তোমাকে সময় দেব এবং তুমি নিজেকে গুছিয়ে নেবার আগ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষাও করবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন আমরা একসাথে সময় কাটাবো তখন তোমার কোন ধরণের বিষণ্ণতা, উদাসীনতা আমি মেনে নেব না। যতক্ষণ তুমি আমার সাথে থাকবে হান্ডেড পার্সেন্ট ফোকাস থাকতে হবে তোমাকে। তুমি এমনটা ভেবো না যে আমি তোমার উপর এটা চাপিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমি নিজেও তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্তে ফোকাস থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। সো এই একই নিয়ম আমার জন্যও।
নূরি বলল, আমি বুঝতে পেরেছি। ইনশাআল্লাহ আমি খেয়াল রাখবো।
যায়েদ হেসে বলল, এই তো গুড গার্ল। এখন তাহলে চলো ঘুমোনোর আয়োজন করা যাক!
নূরি হাসি মুখে বলল, জ্বি।
চলবে….