পর্ব-১
মুসলিম বিয়ে
অপরাজিতাবিডি ডটকম : মুসলিম বিয়ে একটি দেওয়ানী চুক্তি। অন্যান্য চুক্তির মতোই এখানে দুই পক্ষ থাকে। একপক্ষ প্রস্তাব করে অন্যপক্ষ গ্রহণ করে। তবে, দুজনকেই আইনগত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যে কোন চুক্তি পালনে যেমন কিছু যোগ্যতার দরকার হয় তেমনি বিয়ের ক্ষেত্রেও কিছু যোগ্যতার দরকার হয়।
মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ করা একান্ত আবশ্যক:
১. বয়স : ছেলে ২১ বছর এবং মেয়ে ১৮ বছর।
২. সম্মতি: উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে।
৩. সাক্ষী : দুজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের সাক্ষী থাকতে হবে।
৪. দেনমোহর: দেনমোহরানা নির্ধারিত করতে হবে। দেনমোহর কখনো মাফ হয় না এবং পরিশোধ করতে হয়।
৫. নিবন্ধন: বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধিত হবে। নিবন্ধন বিয়ের দলিল।
একই বৈঠকে উল্লিখিত শর্তগুলি পালন সাপেক্ষে বিয়ে সম্পাদন হয়। প্রস্তাব দেয়া ও কবুল করা একই বৈঠকে হতে হবে।
বিয়ের আইনগত ফলাফল
বিয়ের ফলে নারী ও পুরুষের কিছু দায়িত্ব ও অধিকার জন্মায়।
১. পরস্পর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
২. স্ত্রী বিবাহিত থাকা অবস্থায় আর একটি বিযে করতে পারে না।
৩. স্ত্রী ও ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের সালিশী বোর্ডেও অনুমতি ও আইনগত শর্ত পূরণ ছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে না।
৪. স্বামীর কাছে স্ত্রী দেনমোহর ও ভরণপোষণ পাবার অধিকারী।
৫. স্বামী স্ত্রীর যে সব সন্তান জন্মায় তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
৬. সন্তানের পরিচয় বা সম্পদের মালিকানা নিশ্চিত হয়।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বিয়ের দলিল। মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনকে নিকাহ্নামা অথবা কাবিন বলে। কাবিনে বর কনে উভয়ের সাক্ষীরা স্বাক্ষর করেন এবং কাজী স্বাক্ষর করেন। আইনানুযায়ী মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিধান নাই। তবে কেউ যদি বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে চায় তাহলে তা করতে পারবে।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলৈ কী কী সুবিধা পাওয়া যায়
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলে মূলত নারীর অধিকার সবচাইতে বেশি সংরক্ষিত হয়। যেমন :
- বিয়ের সত্যতা প্রমাণ করা সহজ হয়।
- বহু বিবাহের সুযোগ কমে যায়।
- দেনমোহর আদায় সহজ হয়।
- কারণে স্বামী তালাক দিলে স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ আদায় সহজ হয়।
- সন্তানেরা পিতৃ পরিচয় এবং সম্পিত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়।
- স্বামী বা স্ত্রী যে কোন একজন মারা গেলে অপরজন তার সম্পত্তির বৈধ হিস্যা পাওয়ার সহজতর হয়।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করলে কী শাস্তি-
মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশন আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করলে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা এক হাজার টাক জরিমানা বা উভয়দ- হতে পারে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার দায়িত্ব উভযের উপর পরে। তবে ছেলে পক্ষ রেজিস্ট্রেশান খরচ বহন করবেন।
বিয়ে কোথায় রেজিস্ট্রেশন করতে হয় :
মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন ও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকার নিযুক্ত কাজী আছে। কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আবার কাজীকে বিয়ের অনুষ্ঠানে এনেও রেজিস্ট্রেশন করানো যায়। বিয়ের দিন রেজিস্ট্রেশন সম্ভব না হলে ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। এবং কাগজটি যত্ন করে রেখে দিতে হবে।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কতো খরচ হয় :
মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে দেনমোহরের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ফি নির্ধারিত হয়ে থাকে। একটি বিয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি সর্বনি¤œ ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০০ (চার হাজার) টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে ফি কখনো চার হাজার টাকার বেশি হবে না। দেনমোহার প্রতি হাজারে ১০(দশ) টাকা হিসাবে ফি প্রদান করতে হবে। তবে এই হিসাবে ফি যদি চার হাজার টাকার বেশি হয় তাহলে সর্বোচ্চ ফি নির্ধারিত হবে চার হাজার টাকা। কাজী যদি বিযের অনুষ্ঠানে গিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার যাতায়াত বাবদ প্রতি মাইলে ১.০০ (এক টাকা) টাকা করে যাতায়াত খরচ দিতে হবে। এছাড়া, প্রতিটি বিয়েতে কমিশন ফি বাবদ কাজী ২৫.০০ (পঁচিশ) টাকা করে পাবেন। ছেলে পক্ষ রেজিস্ট্রেশনের সকল খরচ বহন করবে। রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়ার পর কাজী একটি রসীদ দিবেন। কাজী বর ও কনে উভয়কে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশনের সত্যায়িত কপি দিবেন।
অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরআই/এ/২১এপ্রিল,২০১৪