নারী সংবাদ
হকারের নিকট থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মেধাবী কলেজ শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার বোন সুমনা বাসু। ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে সুম্মিতাকে নিয়ে বোন সুমনা বাসুর দেয়া আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
‘মৃত্যু নয় হত্যা- বিচার চাই’ লিখে সুম্মিতার মৃত্যুর বিচার দাবি করে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রথম হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। আবার অনেকেই ময়মনসিংহ ব্রিজের মোড়কে চুরি-ছিনতাইমুক্ত করার দাবিতেও প্রতিবাদ করছেন।
অপরদিকে সুস্মিতার বাবা কাঞ্চন কুমার হোম শনিবার সকালে মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি আকুতি করে বলেন, তার মেয়ের মতো আর কোনো মেয়ের যেন এভাবে মৃত্যু না হয়।
সুস্মিতা হোম চৌধুরী মন্টির জন্য শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য কেনা নতুন কাপড়ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তার বোন সুমনা বসু ‘বোধনের আগেই বিসর্জন’ শিরোনামে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘যাকে নিয়ে আজ লিখতে বসেছি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি ওকে নিয়ে এভাবে লিখবো। কতো মজা করলাম বোনরা মিলে রুমার বিয়েতে এটাই শেষ মজা ছিল? সেদিনও বাসায় আসলি এটাই কি শেষ দেখা ছিল? কত গল্প করলাম ভাবলাম পূজায় বাড়ি যাব। দেখা হবে। কিন্তু কাজটা ঠিক হলো না মন্টি। বোধনের আগেই বিসর্জন।’
উল্লেখ্য, হকারের কাছ থেকে কেনা জুস পান করে মৃত্যুবরণ করেন মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি)। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামের কাঞ্চন কুমার হোম চৌধূরীর কন্যা। ১৩দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সুস্মিতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পারিবারিক সূত্র ও সাবেক ইউপি সদস্য নিতাই কুমার চন্দ জানান, সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ ব্রীজের মোড়ে দুই শিশু হকারের নিকট থেকে একটি কোম্পানির জুস কেনেন। কিন্তু জুসটি তখন না খেয়ে বোতলটি ব্যাগে রেখে দেন পরে খাবেন কিংবা তার ছোট ভাগ্নেকে দেবেন বলে। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে জুসের কথা ভুলে যান তিনি। জুসটি ভাগ্নেকে আর খাওয়ানো হলো না।
এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগের কাপড় সরাতে গিয়ে জুসের বোতলটি চোখে পড়ে। এরপর তিনি মাকে বলেন, আজ রাতে ভাত খাব না, শুধু একটু দুধ আর এই জুস খেয়ে নেব। তার মা আর জোর না করলে জুস খেয়েই ঘুমাতে যান তিনি। পরদিন সকালে আর ঘুম ভাঙেনি সুম্মিতার। যে মেয়েটি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, কিন্তু সেদিন সকাল ১০টায়ও ঘুম না ভাঙায় পরিবারের লোকজন জোর করে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কোনোরকমে ঘুম ভাঙলেও তিনি আর মাথা তুলে বসতে পারছিলেন না।
এরপর স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারদিন চিকিৎসা শেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর সেদিন রাত থেকেই আবারো ডায়রিয়া শুরু হয় সুস্মিতার। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পুনরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর টানা ৮দিন চিকিৎসার পর সুম্মিতার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে ডাক্তর তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সুম্মিতাকে নিয়ে ত্রিশাল থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসেন তারা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সুস্মিতা আর বেঁচে নেই।
নিহত সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) মুমিনুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে গণিতে অনার্স ও সদ্য মাস্টার্স পরীক্ষায় দুটোতেই প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।