banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1099 বার পঠিত

 

জীবনে কয়েকজন হিরো

 কানিজ ফাতিমা


আমার জীবনে কয়েকজন হিরো আছে, সবারই থাকে। বেশীর ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই মিডিয়ার কেউ বা জীবনে সফল কোনো ব্যক্তিত্ব হন তার হিরো। আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। আমার হিরোরা ব্যতিক্রম। যেমন আমার হিরোদের একজন হলেন এক ভিক্ষুক – ১৮/ ১৯ বছর বয়সী এক ভিক্ষুক – এলিফেন্ট রোডের ফুটপাতে বসে ভিক্ষা করত সে। আমি তখন একটা প্রইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম আর প্রতিদিন তার সামনে দিয়ে ভার্সিটি যেতাম।

সে কি দাড়িয়ে ভিক্ষা করত নাকি বসে করত তা আমি নিশ্চিত জানিনা – কারণ তার শরীর কোমর পর্যন্ত এসে থেমে গেছে। তার কোনো পা ছিলনা, এমনকি তার কোনো হাতও ছিলনা- শধু ধর আর মাথা। নিকের ভিডিও আমি দেখেছি তাকে দেখার অনেক পরে। নিকের অন্তত “ড্রাম স্টিক” আছে (নিক তার পা কে মজা করে ড্রাম স্টিক বলে); ওর তাও ছিলনা , নিক পুরুষ আর সে ছিল নারী , নিক অস্ট্রেলিয়ায় জন্মেছে আর সে জন্মেছে বাংলাদেশের বস্তিতে।

আমি অনেকবার ভেবেছি এর থেকে আর হতভাগা হয়ে জন্মানো সম্ভব কিনা- জবাব খুঁজে পাইনি। একদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার – সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ছাতা মাথায় হেটে যাচ্ছিলাম আর মেয়েটি ভিজছিল – মাত্র এক হাত পেছনে সরলেই ছাউনী। তার সমর্থ ছিলোনা মাত্র এক হাত পেছনে সরার। সকালে তাকে কেউ এখানে রেখে গেছে , দিন শেষে তাকে তুলে নিয়ে যাবে- এর মধ্যে এক চুলও সরতে পারবে না সে ।

আজ মনে হয় তাকে আমার সেদিন সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। ভেবেছিও সেদিন সে কথা। কিন্তু নারী সুলভ সংকোচে হয়ে ওঠেনি। সেদিন আমার আর একটু সাহসী হবার দরকার ছিল, কারণ মেয়েটির কাছে আমি ঋণী। আমি ঋণী কারণ আমার হতাশার সময় তার বৃষ্টি ভেজা হাসি মুখটি আমার মনে হয় আর মহুর্তেই আমার কষ্টগুলো হালকা হয়ে আসে, নাপাওয়া গুলোর গুরুত্ব কমে যায়; আমি আবার হাসতে পারি।
আমি তাকে ওই পথে দেখেছি এক বছরের কিছু বেশী সময় এবং প্রতিদিনই সে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসতো।

আমি আজও ভেবে ভেবে অবাক হই – এমন জীবন নিয়ে কি করে একটা মানুষ হাসতে পারে – প্রতিদিন? নিজের কষ্ট যখন বুকের ভেতর জমতে জমতে নিশ্বাস আটকে দিতে চায় তখন তার কথা মনে হয় আর তখনই নিজেকে মনে হয় দুর্বল। দুর্বল নিজেকে ধমক দিয়ে বলি “তোমার জীবনের পাওয়া গুলোর দশ ভাগের একভাগ পেলেও ওই মেয়েটি ধন্য হয়ে যেত। রাখো তোমার অকারণ দুঃক্ষ বিলাস, হাসো সন্তুষ্টির হাসি। ও যদি হাসতে পারে তবে তোমার কাদার কোনো অধিকারই নেই।”

Facebook Comments