banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 887 বার পঠিত

 

জীবনের বাকচক্র (পর্ব-১)

তাহেরা সুলতানা


রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি সবগুলোতেই ভালো সিজিপিও নিয়ে পাস করেছে। সবে সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যেই বাড়িতে বিয়ের কথা শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে, বড়ফুফু নাকি তাকে ছেলের বউ করতে চায়। বাবাও রাজী। রাফিয়ার যেদিন জন্ম হয়, সে দিন নাকি বাবা ফুফুকে কথা দিয়ে ফেলেছে।

ফুফু নাকি বাবাকে বলেছিল,

-তোর কি মানানের মেয়ে হয়েছে! এ মেয়ে আমি কাওরে দেব না। আমার ছেলের বউ কইরে নিয়ে যাব। মেয়ের মতোই রাকপো। কোন কষ্ট বুছতি দেব না।

মা একটু অমত করলেও বাবা মায়ের কথাকে অগ্রায্যই করছে না। বাবা মাকে এ কথাও বলেছে,

– মেয়ে মানুষ। এতো পড়াশুনা দিয়া কি করবি? বুবু আদর করি লিয়ে যাতি চাচ্ছে। ছেলেডা কত ভালো চাকরী করে! ব্যাংকে! তুমি মোটেও এর মদ্দ্যি কতা কতি আসপা না, এই বইলে দিলাম। আমরা ২ ভাই বইন মিলা যা বোঝব, তাই করবো।

রাফিয়ার আজকাল কলেজ থেকে বাড়িতে আসতেই ইচ্ছা করে না। কত সাধ ছিল! ডাক্তারি পড়বে! সব শেষ হতে বসেছে।

রাফিয়া আর তার মায়ের শত আপত্তি সত্ত্বেও ফুফাতো ভাই বাশারের সাথে রাফিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে একটা বাচ্চাও হলো। ফুটফুটে একটা মেয়ে। বিয়ের পরদিনি ফুফু বলে দিল।

– বউমা, আমার বয়স হয়েছে, কখন চলি যাই, ঠিক নাই। তাই তাড়াতাড়ি আমারি নাতির মুখ দেকাবা।

রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই ফুফুরে খুব ভয় পেতো। বিয়ের পর ভয়টা আরও বেড়েছে। কলেজে যাওয়ার কথা বললেই কোন না কোন কাজ ধরিয়ে দেয়। মা কয়েকবার এসে হাতে পায়ে ধরে বলেও গেছে, যেন পরীক্ষাটা দিতে দেয়।

রাফিয়ার আর পরীক্ষাটা দেয়া হলো না। কোল আলো করে আসলো একটা ফুটফুটে মেয়ে। মেয়েকে নিয়েই এখন তার দিন কাটে। ফুফু প্রথমদিকে নাতি হয়নি বলে মুখ কালো করে থাকতো। কোলেও নিতো না। কিন্তু নাতনীর মায়াবী মুখটা দেখে এখন আর তার নাতির সাধ নেই। নামটা ফুফুই রাখলো, চাঁদনী।

এভাবে দিন গেল, মাস গেল। বছরও গেলো। চাঁদনী এখন উঠে দাঁড়ায়। একটু একটু হাটতে পারে। যেদিন প্রথম মা বলে ডাকলো, সেদিন রাফিয়া আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল। রাফিয়া এখন তার ডাক্তার হওয়ার সাধটা মেয়েকে দিয়ে মেটাতে চায়।

একবার চাঁদনী খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়ার মত হয়ে যায়। বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে পড়ে। শহরের সবচেয়ে বড় শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ডাঃ বাচ্চাকে দেখার পর সরাসরি ভর্তি করিয়ে নেয়। এরপর চলতে থাকে একের পর এক ওষুধ আর হাইয়ার এন্টিবায়োটিক। এতো ওষুধ দেখে রাফিয়ার আতংক লাগে। একটা অজানা ভয় ওকে আস্টে পিস্টে বাঁধতে থাকে। বাশারকে বারবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু মায়ের বিরুদ্ধে বাশারের একটা কথাও বলার সাহস নাই।

(চলবে)

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

Facebook Comments