জুয়াইরিয়া জাহরা হক
তেজপাতার ইংরেজী করলে হয় ‘bay leaf’. সানজিদা আক্তারের জীবনটা হয়ে গেছে একটা গন্ধ ছাড়া bay leaf. কোন এক সময়ে তিনি অসাধারণ অনুবাদ করতেন। নিয়মিত আয়ত্ত্ব করতেন নতুন নতুন ইংরেজী শব্দ। একবার আয়োজন করে রুদ্র মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহর কবিতা অনুবাদ করতে শুরু করেছিলেন! সে সময় এখন স্বর্ণালী অতীত। বর্তমান তিনি জীবন- সংসারের হামানদিস্তার নীচে মোটামুটি পিষ্ট। মাঝেমাঝে তার মনে চায় পঞ্জিকায় তারিখ-টারিখ দেখে কোন এক অমাবস্যা – পূর্ণিমার রাতে গেরুয়া রঙের থ্রি-পিস গায়ে দিয়ে রাস্তায় হাঁটা দিতে!
মহিলা মানুষ সন্যাসব্রত গ্রহণ করতে পারবে না, এমন কোন কথা নাই।
ভদ্রমহিলার জীবন কয়েক বছর আগেও আরেকটু মধুর ছিলো। ছোট মেয়েটা তখন কানে হেডফোন গুজে পা দুলিয়ে গান শুনতো না। বড়টা রাতভর বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে কথা বলতো না। হুটহাট দুই মেয়ে দুনিয়ার সাজগোজ করে ঘরময় হাঁটাহাঁটি করতো না। সব ছিলো উনার লাঠির আগায়। বিটিভির রাতের খবর শেষ হওয়ার আগেই সব ঘুমিয়ে পড়তো। কাকরোল-চিচিংগা-মুলা সহ সব রকমের তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে ফেলতো। আসলে রাহবার মালায়শিয়া চলে যাওয়ার পর মেয়েগুলো মারাত্মক লাই পেয়েছে। মেয়ে দুইটা বড় ভাইয়ের ভয়াবহ ভক্ত। কিসব গল্প-টল্প বলে বুঝিয়ে বোন দু’টোর ভাব নজরে রাখতো। ছেলেটাও কাছে নেই। বিচার দিয়ে মনের শান্তি করবে, তারও উপায় নেই। এরা কেউ মাকে বুঝে না। শুধু যন্ত্রনা দেয়!
ছাদ থেকে তুলে আনা শুকনো কাপড় ভাজ করতে করতে রিমি-রিনি-রাহবারদের মা, সানজিদা আক্তার, এসব এলেবেলে চিন্তা করছেন। আজকে একটা ভয়াবহ কিছু হবে। মেয়েরা এখনো বাড়ি ফেরে নি। সূর্য ডোবার আগে ওদের বাসায় ঢোকার কথা। বাংলাদেশের সূর্য ডুবে সে সূর্য আমেরিকায় উঠে বসে আছে! তাদের কোন খবর নেই। কি যেন কি জরুরী নোট না ফোট করবে বলে বেড়িয়েছে। ডাল ঘুটনির আজকে হায়াত শেষ!
একা ঘরে রাগ করে আনন্দ নেই। খালি ঘরের দেয়ালকে রাগ দেখিয়ে ফায়দা কি? তারপরও উনি গজগজ করছেন। বিড়বিড় করে মেয়েদের গুষ্টি উদ্ধার করছেন আর জানালা- দরজা বন্ধ করছেন। ফোন করছেন সমানে। কত বড় কলিজা, বারবার ফোন কেটে দিচ্ছে। আজকে দুই কন্যার রাতের খাওয়া বন্ধ। বাপকে ঢাল বানাবে, ভাইকে ফোন দিবে, কোন লাভ নাই! সকাল হলেই টাকা চাওয়া বন্ধ। আজকে ঠ্যাং ভেঙে দুইটার হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে কর্তার বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে। এসে যদি দেখেন মেয়েরা বাসায় নেই, বিশ্বযুদ্ধ অধ্যায় তিন শুরু হয়ে যাবে! সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে এখন একটু ভয় করতে শুরু করেছে। রিমি-রিনির মা সন্ধ্যা রাতের সব কাজ গুছিয়ে ফেলেছেন। খুব চিন্তা হচ্ছে উনার। এমন তো কখনো হয় না! দোয়া ইউনুস পড়ে ফেলেছেন কয়েক’শ বার!
এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। টানা কিছুদিন প্রচুর গরম পরার পর ঝুম বৃষ্টির মতন!
দরজাটা খুলে কিছুই দেখতে পেলেন না। সিড়ির বাতিটা জ্বালানো হয় নি। বাতিটা জ্বালিয়ে দিলেন।
‘ সারপ্রাইজ ‘!
সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাহবার! দুই পাশে দুই বোন আর সাথে তাদের বাবা। চারজনের দাঁত সবকয়টা দেখা যাচ্ছে!
রাহবারের সেমিস্টার ব্রেক শুরু হয়েছে। মাকে বলেছিলো এবার আসবে না। থিসিসের কাজ আছে!
একটু আগে যে মহিলা ছেলেমেয়েদের চিন্তায় ত্যাক্ত ছিলেন, সে একই জন এখন মনে মনে ভাবছেন,
‘ আমার ছেলেমেয়েগুলো এতো দুষ্টু ধরনের অসাধারণ কেন! ‘