banner

শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 29 বার পঠিত

 

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল ও ফজিলত

পবিত্র জিলহজ মাস ইসলামের অন্যতম বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদত হজ্ব পালিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কুরবানি করে থাকে। এ মাস তাকওয়া, আত্মত্যাগ,আত্মসমর্পণ এবং ইবাদতের এক বিশেষ মৌসুম, যার মধ্যে প্রথম দশ দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَالفَجرِ .وَلَيَالٍ عَشرٍ
শপথ ফজরের এবং দশ রাতের।
(সূরা ফজর: ১-২)

মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে “দশ রাত” দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ দিন বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনু কাসীর)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আল্লাহর কাছে নেক আমল করার জন্য বছরের কোনো দিন এই দশ দিনের চেয়ে প্রিয় নয়।”
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও না?”
তিনি বললেন: “না, তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়ে আর কিছুই ফিরে আনেনি (অর্থাৎ শহীদ হয়েছে)।”
(সহিহ বুখারি: ৯৬৯)

জিলহজের প্রথম দশ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল
১. অধিক পরিমাণে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা এই দশ দিনে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়ো।”
(মুসনাদে আহমদ: ৫৪৪৬)

তাশরিকের তাকবির:

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد
এই তাকবির ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার বলা ওয়াজিব।

২. রোজা রাখা (বিশেষ করে ৯ জিলহজ – আরাফার দিন)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছরের এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

৩. কুরবানি করা (১০-১২ জিলহজ)।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
“তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো।”
(সূরা কাউসার: ২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“মানুষের কোনো আমল আল্লাহর কাছে কুরবানির দিনে রক্ত ঝরানোর চেয়ে অধিক প্রিয় নয়।”
(তিরমিজি: ১৪৯৩)

৪. কুরবানির নিয়তে চুল ও নখ না কাটা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে।”
(সহিহ মুসলিম: ১৯৭৭)

৫. অন্যান্য নফল ইবাদত ও নেক আমল।

এই দশ দিনে সকল নেক আমলের ফজিলত বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই যতটা সম্ভব নিচের আমলগুলো করা উচিত:
-নফল নামাজ

-কুরআন তিলাওয়াত

-অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার

-ইস্তিগফার (তওবা)

-সালাতুত তাসবিহ

-দান-সদকা

জিলহজের প্রথম দশ দিন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। এ সময়টিতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অপূর্ব সুযোগ লাভ করি। তাই এই দশ দিন যেন আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন ও জান্নাতের পথে এক নতুন যাত্রার সূচনা হোক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত দিনগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।

Facebook Comments