banner

রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 59 বার পঠিত

 

জালালুদ্দিন রুমি ও তিতির পাখি

 

বিস্তীর্ণ বনের সরু পথ ধরে হেঁটে চলেছেন জালালউদ্দিন রুমি। প্রকৃতির নীরবতা তার চিন্তাকে গভীরতর করে তুলছে। হঠাৎ, ঝোপের আড়াল থেকে উড়ে আসা একটি বড় কালো তিতির পাখি তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। দক্ষ হাতে পাখিটিকে ধরে ফেললেন রুমি।
পাখিটিকে দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন— একে আগুনে ঝলসাবেন, নাকি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে রান্না করবেন!
ঠিক তখনই পাখিটি রুমির হাতের ভেতর নড়েচড়ে উঠে কণ্ঠে আহ্বান জানাল,
“রুমি! জীবনে এত মাংস খেয়েও তোমার লোভ ফুরোয়নি! যদি তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও, আমি তোমাকে তিনটি মূল্যবান পরামর্শ দেবো, যা তোমার জীবনকে শান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে।”
রুমি একটু বিস্মিত হলেন, তারপর বললেন,
“আচ্ছা, তাহলে প্রথম পরামর্শ এখানেই দাও। যদি মূল্যহীন মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তোমাকে হত্যা করবো।”

পাখিটি বলল,
“তুমি সবসময় অন্যের কথায় বিচলিত হয়ে পড়ো। অপ্রয়োজনীয় আলোচনায় জড়ানো তোমার স্বভাব। অথচ মানুষকে তাদের মতো থাকতে দিলে, তোমার জীবন আরও শান্ত হবে।”
রুমি চিন্তা করলেন, এতে সত্যিই গভীর এক জ্ঞান আছে!
তিনি বললেন, “তাহলে দ্বিতীয় পরামর্শ বলো।”
পাখিটি বলল, “আমি গাছের ডালে বসে দ্বিতীয় পরামর্শ দেবো। আগে আমাকে মুক্ত করো।”
রুমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে পাখিটিকে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসল।

পাখিটি গাছের ডাল থেকে বলল,
“রুমি! অতীতকে কখনো বদলানো যায় না। তাই বর্তমানকে উপভোগ করো এবং ভবিষ্যতের জন্য বেঁচে থাকো।”
রুমি গভীরভাবে তা চিন্তা করলেন। কিন্তু তখনই পাখিটি হঠাৎ হেসে বলল,
“যাই হোক, তুমি বড় বোকামি করেছো! আমার পেটে তিন কেজি হীরা ছিল। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে, তবে সেই হীরা পেয়ে তোমার তিন পুরুষ আরাম করে কাটাতে পারতো।”
এই কথা শুনে রুমি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন! তার বুক ধক করে উঠল। হতভম্ব হয়ে তিনি পাখিটিকে ধরতে দৌড় দিলেন।
পাখিটি তখন উঁচু স্বরে বলল,
“রুমি! তুমি দেখছি আমার দ্বিতীয় পরামর্শের কথাই ভুলে গেলে! আমি তো বলেছিলাম, অতীতকে বদলানো যায় না। আর ভাবো তো, আমি যেখানে মাত্র দুই কেজির, সেখানে কীভাবে আমার পেটে তিন কেজি হীরা থাকবে?”
রুমি থমকে দাঁড়ালেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আবারও ভুল করেছেন।

এবার রুমি তিতিরকে অনুরোধ করলেন, “তোমার তৃতীয় পরামর্শটা দাও। এবার আমি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনবো।”
পাখিটি বলল,
“সবার কাছে উপদেশ দিতে যেও না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা তা গ্রহণ করতে চায়। মনে রেখো, কিছু কাপড় এতটাই পুরোনো ও জীর্ণ হয়ে যায় যে, তা আর কখনো সেলাই করা যায় না।”

রুমি এবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, পাখিটির প্রতিটি পরামর্শই জীবন বদলে দেওয়ার মতো!
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে তিনি বনের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু এবার তার চিন্তাধারা আগের চেয়ে অনেক পরিণত ও শান্ত।

গল্পের শিক্ষা:

✅ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়।
✅ অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না, তাই বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
✅ উপদেশ কেবল তাদেরই দিতে হবে যারা তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

আরওয়া আনাম

Facebook Comments