banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 710 বার পঠিত

 

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাপতুন

হঠাৎ করেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের সহায়তা বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্ট) থেকে একটি ই-মেইল আসে। ই-মেইলে তাপতুন নাসরীনের জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। কথাও বলতে চায়। তাপতুনের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নেওয়ার কয়েকটি ছবি দিতে বলে। তারপর একদিন দেখা করার তারিখ নির্ধারিত হয়। নির্ধারিত তারিখে গিয়ে জানা গেল, সেদিনই রেকর্ডিং। শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নেওয়া তিনজনের কাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র তৈরি করা হবে। এই ভিডিও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখানো হবে। যাতে করে অন্যরা এ ধরনের মিশনে কাজ করতে উৎসাহী হন। ঘটনাটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের। ইউটিউবে এই বিজ্ঞাপনচিত্র সবাই দেখতে পাচ্ছেন।
তাপতুন নাসরীন অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য ভিডিওতে অংশ নেওয়ার গল্প বলছিলেন। তবে সরাসরি গল্প শোনার অবকাশ নেই। কেননা বছর খানেক হলো তাপতুন নাসরীন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পিসকিপিং অপারেশনস বিভাগে পলিসি অফিসার (পি ৪ লেভেল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই আলাপচারিতা চালাতে হলো টেলিফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
তাপতুন জানালেন, দ্য রোল অব ল অ্যান্ড সিকিউরিটি ইনস্টিটিউশনে তাঁর বর্তমান পদে শান্তিরক্ষা বিষয়ে নানান নীতি, ম্যানুয়াল তৈরিসহ কাজের অন্ত নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্টারপোল, আমেরিকান পুলিশ কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ। দীর্ঘ দুই বছর নানান প্রক্রিয়া, অনলাইনে লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ শেষেই মিলেছে এ কাজ। লিখিত পরীক্ষায় খুব কম সময়ে পিসকিপিং বিষয়ে একটি সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়, তবে তা হতে হবে জাতিসংঘ যেভাবে চায়। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তিনি এই পদে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৮ বছর ধরে দেশে ও বিদেশে নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, অপারেশনস এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-বিষয়ক নানান কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর। দেশে এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখালেখি ও প্রকাশিত গবেষণার সংখ্যাও অনেক। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শুনতেন সবাই জাতিসংঘে কাজ করতে চান। সদর দপ্তরে কাজ করা ভাশুরের কাছ থেকেও নানান গল্প শুনে সেখানে কাজ করার স্বপ্নটা একটু একটু করে বড় হচ্ছিল।জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে
এক ছেলে ও এক মেয়ের মা। স্বামী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন নিউইয়র্কে। অর্থাৎ পুরো পরিবার একসঙ্গে। শুধু এখানেই নয়, ২০০৫-২০০৬ সালেও স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে লাইবেরিয়া মিশনে যান। তখন দুই ছেলেমেয়েও সঙ্গে ছিল। সেখানে দায়িত্ব পান নির্বাচনের। লাইবেরিয়ার প্রথম নির্বাচন। চারপাশে সংক্ষুব্ধ মানুষ। সেবার আফ্রিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে শেষ বিচারে সেখানে দক্ষতা দেখাতে পেরেছিলেন, যার কারণেই ইউএন মেডেল পান তিনি। দেশে ফেরার পর আবার অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তি নিয়ে যান উচ্চতর শিক্ষার জন্য।
২০০০ সালে সাভারে যখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করতেন, তখন ‘মহিলা’ পুলিশ দেখার জন্য রাস্তায় ভিড় জমে যেত। তাপতুন বলেন, সময় কিন্তু পাল্টেছে। মানুষ জানে, নারীরা কাজ করছেন। নারীদের কাজ তাকিয়ে দেখার বিষয় নয়। এখন বাংলাদেশের রাস্তায় নারী সার্জেন্টরা দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষা ও কর্মজীবনে ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, টেবিল টেনিস, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানান বিষয়েও সব সময় এগিয়ে থাকতেন তিনি। তাপতুন বলেন, সংসার ও ক্যারিয়ার দুটোই জীবনের অংশ। ফলে নারীদের ঘরে-বাইরে দুই জায়গায় সমানতালে কাজ করতে হয়। তবে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে ইচ্ছাকৃত কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। সেগুলো মোকাবিলা করেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁরা সাত বোন ও দুই ভাই। তাপতুনের বাবা এ এস এম নুরুল হোসাইন বেঁচে নেই। মা সৈয়দা রওশন আরার শরীরটা ভালো নেই। তাপতুনের মন ছুটে যায় মায়ের কাছে। তবে বাস্তবতার কাছে হার মানেন।

Facebook Comments