banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 601 বার পঠিত

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (১) -আফরোজা হাসান

রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও। জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।

-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনে হয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-হেসে, আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যার ফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

Facebook Comments