দ্য স্লেভ
কেস স্টাডি-১
জহীরের ক্লামমেট রুমা।
ওরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওদের সকলের সাথে সকলের সম্পর্ক দারুন। একে অপরের সাথে তুই সম্বোধনে কথা বলে। তাদের মত এখানে আরও অনেক বন্ধু আছে। ওরা মোটেও প্রেমিক প্রেমিকা নয়,বরং ভাল বন্ধু। একজন আরেক জনের কথা জানে। একে অপরের সাথে সাধারণভাবে মিশে। উভয়ের পরিবারে উভয়ের যাতায়াত আছে। উভয়ের সাথে আরও ডজন ডজন বন্ধু বান্ধবী জড়িত আছে।
জহীর একদিন রুমাকে অন্য একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল
-ওর সাথে আমাকে একটু ফিট করে দিবি ? হঠাৎ রুমার গা জ্বলে উঠল, যদিও জানেনা সেটা কেন হল।
কিন্তু বন্ধু বলেছে, কিছু তো করতেই হবে। রুমা মেয়েটার সাথে দেখা করল এবং বলল
-জহার তোমাকে পছন্দ করে। মেয়েটা বলল-আমি কারো সাথে প্রেম করতে চাইনা। আর এটা করবও না। তুমি তো জানই আমি একা থাকা পছন্দ করি।
মেয়েটার এই না বোধক কথায় রুমা কেন যেন খুশী হয়ে উঠল। এবার সে জহীরের কাছে এসে বলল-দোস্ত আমি তোমার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছি। সেই সকাল থেকে মেয়েটাকে অনেক বুঝালাম তোমার ব্যাপারে কিন্তু বিকেলে এসে জানলাম, সে ইতিমধ্যেই বিয়ের ব্যাপারে অন্যের বগলদাবায় চলে গেছে। বাপ মায়ের পছন্দে বিয়ে করছে। আরে বাবা তুই এংগেইজড তা আগে বলবি তো, আমি শুধু ব্যাটারী পোড়ালাম।
জহীর বলল-হুমম তাইলে আর কি, দেখি আরেকটা ধরা যায় কিনা।
এভাবে সময় চলে যায়। উভয়েই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। পরীক্ষার পর রুমা জহীরকে বলে, আচ্ছা পরশ ছেলেটা কিন্তু দারুন, কি বলিস? জহির হেসে বলে হ্যা পরশ ভাইকে যতটা চিনি তিনি ভালই। কিরে প্রেমে পড়লি নাকি ?
আরে নাহ, উনাকে ভাল লাগে,এইটুকই।
-উনার সাথে কিন্তু আমার জানাশোনা আছে, বলব নাকি কিছু ?
: নাহ, সময় হলে আমিই বলব।
পরশ জহীরের ১ বছরের সিনিয়র কিন্তু সম্পর্ক বন্ধুত্বের। একদিন পরশের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জহীর রোমার কথা বলে। পরশও খানিক খুশী হয়,কারন বাংলাদেশে মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের কাছে নিজের ভাল লাগার বিষয়টি জানায় না। কিছু দিনের মধ্যেই পরশের সাথে রোমার ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। রোমা এসব কথা আবার জহীরকে বলে। উভয়ে নানান রকমের পরিকল্পনা উভয়কে জানায়।
চলছিল এভাবে…
একদিন পয়সা ওয়ালা এক ছেলের সাথে রুমার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে। রুমাও রাজি। ছেলেটা দেখতে বেশ। বিয়েতে জহীর অনেক দায়িত্ব পালন করে। জাকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল। বর রুমাকে নিয়ে চলে গেল।
কিন্তু এরপর জহীরের বুকের ভেতর কেন যেন একটা তোলপাড় শুরু হল। বিয়ের আসরে রুমাকে অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে ভাবছিল, আহ এতটা দিন ওর পাশে থাকলাম, আজ আরেকজন থাকবে…
পরক্ষণেই আরেক চিন্তা আসে,
নাহ একি ভাবছি…ও তো শুধুই আমার বন্ধু, আমার প্রেমিকা নয়।.. তাহলে এসব চিন্তা কেন মাথায় আসছে? না এসব ভুলিতে চাই।
ভুলতে চাইলেও সারারাত জহীর ঘুমাতে পারল না। বারবার রুমাকেই মনে পড়তে থাকল। ২দিন পর সে রুমার শশুড়বাড়ি ফোন দিল রুমার নাম্বারে। ফোন রিসিভ করল তার স্বামী। জহীর নিজের পরিচয় দেওয়ার পর রুমার স্বামী বলল-সে তো ঘুমাচ্ছে। স্বাভাবিক কথাই হল কিন্তু জহীরের কাছে মনে হল এই ফোন করাটা ভদ্রলোক ভাল চোখে দেখেনি।
জহীর চিন্তা করল না আর ফোন দিবেনা। আর তাকে তো আর সেভাবে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জহীরের আরেক মন তাকে আরও যোগাযোগের ইঙ্গিত দিল। জহীর নিরুপায় হয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করল। রুমাও তার সাথে স্বাভাবিক কথা বার্তা বলল। এভাবে পূর্বের মত না হলেও জহীর রুমার সাথে যোগাযোগ ধরে রাখল। সে যখন একা থাকে,তখন তার নানান কথা মনে পড়ে। এমনও মনে হয়, এক সাথে এতদিন কাটালাম
-সে সময় যদি ওকে আটকাতাম, ভালই হত। আবার চিন্তা করে, নাহ সে তো ছিল শুধুই বন্ধু।
এভাবে তাদের যোগাযোগ চলতে চলতেই জহীর একদিন এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর কালে ভদ্রে রুমার সাথে কথা হয়। রুমাও তার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একসময় তাদের যোগাযোগ প্রায় শুন্যের কোটায় চলে যায়। জহীর চিন্তা করে এক সময়ের সব থেকে বিশ্বস্ত, চমৎকার বন্ধুটি কিভাবে হারিয়ে গেল।
কেস স্টাডি-২
কামালের বন্ধু আরিফ। তারাও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। প্রথমে ভাল সম্পর্ক ছিলনা। কিন্তু আরিফের ভাই অসুস্থ্য হলে তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। নেগেটিভ রক্ত পাওয়া কষ্টকর কিন্তু কামালের রক্তের সাথে মিলে। সে দেয়। এরপর থেকে যেন তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর। চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট,রাস্তার মোড়, নদীর ধার, উভয়ের বাড়ি সকল স্থানেই তারা আড্ডা মারে। এমন কোনো কথা নেই যা শেয়ার করেনা।
কামালের বিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে আরিফের বিয়ে। সবকিছু সেই ঠিকঠাক করে। পুরো অনুষ্ঠান সেই পরিচালনা করে।
বিয়ে হয়ে গেল। কামাল বৌ আনল ঘরে। আগের মত আরিফের সাথে আড্ডা না হলেও কথা হয়। ইতিমধ্যে আরিফও বিয়ে করেছে, সেখানে কামালই বেশী দায়িত্ব পালন করেছে। উভয়ে উভয়ের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু তারা ঠিকই সময় বের করে মাঝে মধ্যে আড্ডাবাজি করে। আবার কখনও কখনও উভয়ের স্ত্রীসহ কোথাও ঘুরতে যায়।
কামাল এবং আরিফ উভয়কে ভুলে যায়নি। সাংসারিক কাজ তাদেরকে পরষ্পরের কাছাকাছি না রাখলেও মানুষিকভাবে তারা এখনও অটুট।
উপরের ঘটনাগুলো খুবই বাস্তব। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে দেখবেন, এমনটাই বেশী ঘটে। একজন মেয়ের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব, মেয়ের সাথে মেয়ের এবং ছেলের সাথে ছেলের বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব বেশী।
একজন মেয়ে কোনো ছেলের বন্ধু হলেও এবং স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তাদের উভয়ের শারিরীক, মানুসিক অবস্থার কারনে সে সম্পর্ক একই গতিতে চলে না। উভয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করলেও সেখানে কিছু আকর্ষণ তৈরী হয় যা বিপরীত লিঙ্গগত আকর্ষণ এবং যা সহজাত। মূলত তারা এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করেই নিজেদের সম্পর্কে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে।
একজন ছেলে সাধারণত সেই মেয়েটির সাথে তার এই স্বাভাবিক বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায় না, যার রূপ, গুন তার কাছে ভাল লাগেনা। অথবা তার চোখে সুন্দর ও অসুন্দর এমন সব মেয়েরাই যদি তার বন্ধু হয়,তবু সে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বা যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে সুন্দরীদের প্রাধান্য দেয়। অথচ ছেলেটি অন্য ছেলেদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আমলে আনেনা। সেখানে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুটি সবথেকে কুৎসিত হতে পারে। বিষয়টি মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
আমরা যদি আজকের প্রগতিশীলদের দিকে তাকাই, সহজে দেখতে পাব তারা ছেলে মেয়ের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে বলছে। একটা ছেলে বন্ধু আর মেয়ে বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য নেই, সেটাই তারা বলছে। এবং এভাবেই আচরণ করতে বলছে।
অথচ তারা যে প্রকৃতিকে বিশ্বাস করে, সেই প্রকৃতি অনুযায়ীই তাদের চিন্তা ভুল। এখানে বাস্তবে আমরা নারী,পুরুষের আচরণে অবশ্যই ভিন্নতা দেখী। এবং বাস্তবতা বলে নারীর সাথে পুরুষের বন্ধুত্বের চাইতে, পুরুষের সাথে পুরুষের, নারীর সাথে নারীর বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব বেশী।
আমি এখানে স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টি আলোচনায় আনিনি। শুধু নারী পুরুষের অবাধ বন্ধুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছি।