শিশুর মানসিক বিকাশ তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা, পারিবারিক পরিবেশ এবং অভিভাবকের দিকনির্দেশনা শিশুদের আবেগ, চিন্তাধারা এবং আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। চাইল্ড সাইকোলজি বা শিশুর মনস্তত্ত্ব এই বিকাশকে বুঝতে এবং শিশুর অনুভূতি, সমস্যা ও প্রয়োজন বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।
শিশুরা তাদের অনুভূতি ও চাহিদা সরাসরি প্রকাশ করতে পারে না। তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝা যায়। জিন পিয়াজে বলেন, “Play is the work of childhood.” তার এই উক্তি ইঙ্গিত করে যে শিশুরা খেলার মাধ্যমে শেখে এবং তাদের কল্পনা, চিন্তা ও আবেগ বিকশিত করে। এই শেখার প্রক্রিয়ায় অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর মানসিক বিকাশ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে। শূন্য থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ এবং পরিচর্যাকারীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে তারা কল্পনাশক্তি এবং শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এ সময় তারা প্রশ্ন করতে শুরু করে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করতে আগ্রহী হয়। ছয় থেকে বারো বছর বয়সে তাদের সামাজিক দক্ষতা এবং আত্মপরিচয় গঠিত হয়। এই বয়সে শিশুরা তাদের আশপাশ থেকে মূল্যবোধ এবং নিয়ম-কানুন শিখে।
শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কথা বলা এবং তাদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। তাদের ছোট ছোট সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহ প্রদান করা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। শিশুরা বড়দের আচরণ থেকে শিক্ষা নেয়, তাই অভিভাবকদের ধৈর্যশীল ও নম্র হতে হবে। তাদের সঙ্গে সময় কাটানোও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং সম্পর্ক দৃঢ় করে।
এরিক এরিকসন উল্লেখ করেছেন, “Children love and want to be loved, and they very much prefer the joy of accomplishment over the triumph of hateful failure.” এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে শিশুরা ভালোবাসার পরিবেশে বেড়ে উঠতে চায় এবং তাদের অর্জনের জন্য স্বীকৃতি পেলে তারা আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়।
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করা এবং তাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করা।
সামগ্রিকভাবে, শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সচেতন অভিভাবকত্ব, ইতিবাচক পরিবেশ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা শিশুদের জীবনকে গঠনমূলক ও অর্থবহ করে তুলতে পারে।