শামছুন নাহার মলি
এই প্রথম বারের মত প্রবাসে বেশি দিন থাকা। মানুষে বলে প্রবাস জীবন দুনিয়ার জান্নাত। বলার কারণ আছে। তবে কষ্ট ও যে নেই তা না।
ইউরোপ কে দুনিয়ার জান্নাত মনে করে,মনে মনে তাদের খুব রাগ প্রবাসিদের উপর। “আরামে আছো তো,তাই টের পাওনা” টাইপের কথা শুনতে হয়। সেজন্য এখানে এত সুখের জীবন কাউকে বলতেও ভয় হয়, ভয় হয় দেশের কোন সমস্যা বলতে। আমরা দেশে থাকিনা বলে দেশের বদনাম করতে পারবো না। যাইহোক।
ফিনল্যান্ড খুব ছিমছাম, গোছালো, শান্তিময় একটা দেশ। আয়তনে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অনেক গুন বড় হওয়া সত্বেও জনসংখ্যা এখনো
৫৫লাখের মত। যেখানে আমাদের শ্যামনগর থানাতেই এদেশের ডাবল হবে মানুষ।
ঠান্ডার দেশ, বিশ্বস্ত দেশ, খুন, ধর্ষন, চুরি ডাকাতি নাই। সিকোরিটি খুব স্ট্রং।বোরখা, হিজাব, নিকাব করে চলতে ফিরতে কখনো সমস্যা হয়নি আজ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ্। শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা অনেক উন্নত।
সব মিলিয়ে আরাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়দের জন্য এদেশ ভালো। সবচে ভালো লাগে সবাই সবাইকে এত রেসপেক্ট করে, হেল্প করে। বাচ্চার স্ট্রলার সহ মা যেখানে খুশি যাতায়াত করতে পারবে ফ্রিতে।
কখনো গৃহবন্দী লাগেনি এজন্য।
ধর্মীয় প্রোগ্রামে কখনো বাঁধা আসেনি আলহামদুলিল্লাহ্। সেজন্য ঈমান আমল বেঁচে দিতে হয়নি এই অমুসলিমদের কাছে। প্রতিবেশি গুলোর সাথে মিশেও মনে হয়নি মুসলিম বলে আমাদের ভিন্ন চোখে দেখে।
পথে, বাসে, ট্রেনে সব খানে নিশ্চিতায় চলা ফেরা করা যায়, আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন ইভটিজিং। বা খারাপ দৃশ্য। অবশ্য আমার চোখ সব সময় বেবি স্ট্রলার আর রাস্তার দিকে থাকায় হয়তো আমি এখনো চেহারা দেখেই বলে দিতে পারবো না কে কোন দেশের।
এদের একটা ভালো গুন হলো এরা কারো নিয়ে নাক গলায় না, কাপড় এত কম পরে বের হয় তবুও গিলে খাওয়ার চাহনি দেখা যায় না। যেটা দেশে বেশি ফেইস করে প্রত্যেকটা মেয়ে, হোক হিজাবি, হোক নন-হিজাবি।
বাসে, মেট্রোতে বসা অবস্থায় আগে দেখতাম বই পড়তে, এখন মোবাইল নিয়ে নত মস্তকে থাকতে দেখি। কেউ কাউকে নিয়ে গবেষণা চালায় না। অথচ বাঙালীরা যদি একজন হিজাবিকেও দেখে তার উপর চালায় গবেষণা কোন দেশের, পরিচিত কিনা হাবিজাবি। এক ভাবি বলেন, বাইরে সে নেকাব দেন না কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে মুখ ঢেকে যান।
আমার বান্ধবীর অভিযোগ, প্লেনে বাঙালীরা এত ছ্যাচড়ামি করছে যে ছোট বাবুটাকে খাওয়াতেও পারেনি।
দেশে গিয়ে আমার কিছু দিন বোরখা পরেও পা চলে না। এত মানুষের দৃষ্টি ভয় লাগে। কিন্তু কেন? এত বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে কেনো মানুষ?
কোথায় চোখের পর্দা? হযরত সালাবার (রা) গল্প গল্পটা সাম্মানকে শুনিয়েছি। যদিও অথেনটিক কিনা সিওর না। কিন্তু তবুও চেয়েছি অন্তত চোখটা নত রাখা শিখুক।
সামারে বাইরে গেলে গল্প করে ওর মুখ ঘুরিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে বলে আম্মু ওরা তোমার মত বোরখা পরে না কেন? আমি বলি ওরা কোরআন পড়ে না, মুসলিম না তাই। অনেক মুসলিমদের কে দেখেও বলে এরা কেন তোমার মত হিজাব, নেকাব পরে না? বলেছি ওরা কোরআন আরো পড়লে জানতে পারবে কিভাবে হিজাব করতে হয়।
কি বলবো বুঝিনা। শুধু শিখিয়েছি বেশি মানুষের দিকে তাকাবা না, পথ চলতে এদিক ওদিক তাকালে পড়ে যেতে হয়।আর মানুষের দিকে তাকালেও বেশিক্ষণ না দেখতে, কারণ শয়তান দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে। বেচারা ছোট মানুষ, আর কিই বা বলা যায়। এই ছোট দেশে যে এত মহিলা, পুরুষ কম। হসপিটাল, মার্কেট, স্কুল সবখানে মেয়ে বেশি।
আল্লাহ যেন আমাদের কে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে রাখেন। শকুনি চোখ থেকে রক্ষা করেন।