তাছাড়া সব মৌসুমেই কার্পেট ব্যবহার করে ঘরের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ করা যায়। তবে ঘরের মাপ আর রং ঠিকমতো না হলে একটা সুন্দর কার্পেটও অন্দরসজ্জায় বারোটা বাজাতে পারে।
এছাড়া কার্পেটে প্রচুর ধুলা আটকে থাকে এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করলে নানান ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই কার্পেট ব্যবহারে কিছুটা সচেতন হলে ঘরেরসজ্জা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যও ভালো রাখা সম্ভব।
এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন ‘বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ’য়েল ‘ব্যবহারিক শিল্পকলা’ বিভাগের সহকারী অধ্যক্ষা ইসমাত জাহান ও ‘গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন’ বিভাগের প্রধান নাসিমা নাসরিন। তারা দুইজনই কার্পেট ব্যবহারে যথাযথ যত্নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
কার্পেট হল মেঝের আচ্ছাদন। শীতকালে এর উপকারিতা আরও বেশি। প্রথমত, ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়; দ্বিতীয়ত ঘরের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ করে।
যদিও বাংলাদেশের আবহাওয়া কার্পেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন উপযোগী নয় বলেই মনে করেন নাসিমা নাসরিন। তবুও একটু সাবধানে ও কিছু বিষয় মাথায় রেখে কার্পেট ব্যবহার করলে তা ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।
নাসিমা নাসরিন বলেন, “আমাদের দেশে পুরো ঘর জুরে কার্পেট ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই ঘর ও ঘরের ব্যবহার ভেদে কার্পেট ব্যবহার করা উচিত।”
“সাধারণত শোবার ঘরে বিছানার পাশে ও দরজার সামনে ছোট বা মাঝারি আকারের কার্পেট ব্যবহার করা যায়। আবার অনেকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে, ইজি চেয়ার বা ঘরের ছোট সোফার সামনে কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।” পরামর্শ দিলেন নাসিমা।
তিনি আরও বলেন, “আজকাল বাজারে নানান আকৃতির ও উপাদানের তৈরি কার্পেট পাওয়া যায়। এর মধ্য থেকে নিজের পছন্দমতো গোল, চারকোণা, আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতি কার্পেট বেছে নেওয়া যেতে পারে। শিশুদের ঘরে সম্পূর্ণ কার্পেটয়ের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে চাইলে শতরঞ্জিও ব্যবহার করা যেতে। ড্রয়িংরুমে সোফার সামনে ও সেন্টার টেবিলের চারপাশে কার্পেট রাখলে দেখতে ভালোলাগে আর ঠান্ডাও কম লাগে।”
ইসমাত জাহান কার্পেটের জন্য ঘরে এসি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “এসি ছাড়া ঘরে কার্পেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিনথেটিক ও পাতলা রাবারের কার্পেট ব্যবহার করাই ভালো। শোবার ঘরের বিছানার পাশে তিন হাত চওড়া আর পাঁচ হাত লম্বা কার্পেট ব্যবহার করলে চলাফেরা ও কাজকর্মে সুবিধা হয়। শিশুরা প্রায়ই মেঝেতে বসে খেলাধুলা করে তাই তাদের ঘরের পুরো মেঝে জুরে কার্পেট দিলে ভালো”
তিনি আরও বলেন, “ড্রয়িংরুমের জায়গা বুঝে কার্পেট দেওয়া উচিত। যদি বড় রুম হয় এবং তাতে পুরোটাই কার্পেট দিতে চাইলে বড় একটি কার্পেট না দিয়ে মাঝারি দুই বা তিনটি কার্পেট বিছানো যেতে পারে। এতে ঘর ও কার্পেট পরিষ্কার করা সহজ ও কম কষ্টসাধ্য হবে।”
বসার ঘরের দেয়াল আকর্ষণীয় করার জন্য কার্পেট বা শতরঞ্জি লাগানো যেতে পারে। ঘরে সম্পূর্ণ দেশিভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য পাটের কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পাটের কার্পেট এসি রুমেই বেশি উপযোগী, জানালেন ইসমাত জাহান।
এসি ছাড়া ঘরে পাটের কার্পেট ব্যবহার করলে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে, নইলে কার্পেটে ধুলা জমে কার্পেট নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ধুলা ময়লার কারণে রোগব্যধিও ছড়াতে পারে।
ইসমাত জাহান বলেন, “রান্না ঘরে কার্পেট ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। প্রয়োজন হলে কার্পেটের বদলে রাবারের ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে কারণ এটি যখন তখন পরিষ্কার করা যায়।”
কার্পেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর উপাদান ও রংয়ের দিকে লক্ষ রাখা উচিত বলে জানালে এই দুই শিক্ষক।
তাদের পরামর্শ হচ্ছে শীতকালে উজ্জ্বল ও উষ্ণ রং যেমন– লাল, সবুজ, নীল, খয়েরি, বেগুনি ইত্যাদি রংয়ের কার্পেট ও শতরঞ্জি ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল দেখাবে। আর উপাদানের মধ্যে পাট, রেক্সিন, প্লাস্টিক, পাতলা রাবার বা অন্যান্য সিনথেটিক উপাদানের তৈরি কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
যত্ন
কার্পেট ব্যবহারে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হয়। তাই প্রতিদিন কার্পেট ব্রাশ করা প্রয়োজন এবং সপ্তাহে একদিন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। যদি সম্ভব হয় তবে মাসে অন্তত দুইবার কার্পেট রোদে দেওয়া ভালো।
দরদাম
এলিফ্যান্ট রোডের সারমান’স কার্পেট দোকানের কর্ণধার সারমান ইসলাম জানালেন কার্পেটের দরদাম।
কার্পেটের সবচাইতে বড় বাজার আছে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড ও পল্টনে। কার্পেট তৈরির উপকরণ মূলত দুটি, পাট ও সিনথেটিক। পাটের কার্পেট বাজার থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে, পাওয়া যায় শুধু পাপোশ। যেগুলোর দাম দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা।
গুণগত মান এবং ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে সিনথেটিক কার্পেটগুলোর দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কার্পেটের রোলগুলো বিক্রি হয় স্কয়ার ফিট হিসেবে। দাম ২৫ থেকে ৩শ’ টাকা প্রতি স্কয়ারফিট। মেঝেতে কার্পেট বসাতে খরচ পড়বে প্রতি স্কয়্যার ফিটে ৫ থেকে ১৫ টাকা।
সারমান ইসলাম আরও জানান, কার্পেটের ক্রেতাদের মধ্যে উচ্চ মধ্যবিত্ত ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। বাসায় ব্যবহারের জন্য মোটা কার্পেট আর অফিসে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাতলা কার্পেট কেনার পরাপর্শ দিলেন তিনি। আর পরিষ্কার করতে হবে এক বছর পর পর।
কার্পেট পরিষ্কারের জন্য যেকোনো লন্ড্রির দোকানেও কার্পেট দেওয়া যেতে পারে। বাসায় কার্পেট পরিষ্কার করতে সবচাইতে উপযোগী ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, তবে শলার ঝাড়ুও ব্যবহার করা যাবে বলে জানালেন তিনি।
লিখেছেন- তৃপ্তি গোমেজ।
সূত্র- লাইফ স্টাইল।