banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 317 বার পঠিত

 

গৃহবধূকে ন্যাড়া করলেন চেয়ারম্যান

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে কথিত পরকীয়ার অপরাধে সালিস বৈঠকে এক গৃহবধূ ও এক যুবককে মারধর করে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে গতকাল রোববার গজালিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এস এ কুদ্দুস মিয়া ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খালিদুল ইসলামসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এদিকে নির্যাতনের খবর পেয়ে গলাচিপা থানার পুলিশ শনিবার রাতেই গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন বাহের গজালিয়া গ্রামের সামসুল হক ডাকুয়া, আশরাফুল হোসেন ও মো. নাসির এবং দক্ষিণ ইচাদি গ্রামের মো. নিজাম ও আবদুল মান্নান।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, পাশের বাড়ির তাঁর এক চাচাতো ভাইয়ের ছেলে তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই যুবক তাঁদের বাড়িতে যান। এ ঘটনা দেখে এলাকার কিছু লোক খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের কাছে অভিযোগ করেন যে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ওই যুবকের পরকীয়া রয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রামপুলিশ আশরাফুল হোসেন ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ডেকে গজালিয়া ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে তাঁদের ইউপি ভবনের দোতলার একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ইউপি ভবনের দোতলার হলরুমে খালিদুল ইসলাম ও এস এ কুদ্দুসের নেতৃত্বে সালিস বৈঠক হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সালিস বৈঠকে রাত আটটার দিকে ওই যুবক ও গৃহবধূকে লাঠিপেটা করা, তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া ও যুবকের ৩০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, সালিস বৈঠকের পর রাত সোয়া আটটার দিকে তাঁর স্ত্রী ও ওই যুবককে ইউপি ভবনের দক্ষিণ পাশের মাঠে নামানো হয়। সেখানে খালিদুল ইসলাম তাঁদের দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এরপর খালিদুল ইসলামের নির্দেশে গজালিয়া বাজারের এক সেলুন-কর্মী ক্ষুর দিয়ে তাঁদের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খালিদুল ইসলামের মুঠোফোনে সাত-আটবার ফোন করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরছেন না।
তবে এস এ কুদ্দুস মিয়া দাবি করেন, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ইউপি কার্যালয়ে ডাকা হলে সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলামের উদ্যোগে সালিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি (কুদ্দুস) এ ঘটনা নিয়ে তাঁদের বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করেন। ওই দুজনের চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া বা তাঁদের মারধর করার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি সালিসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘লোকমুখে খবর পেয়ে শনিবার রাতেই নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। এ ঘটনায় করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রোববার দুপুরে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে গলাচিপা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

Facebook Comments