banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 238 বার পঠিত

কেমন আছে কন্যাশিশুরা ?

Vhalo nei konna shishuকেমন আছে কন্যাশিশুরা ? সত্যি কি তারা ভালো আছে ? প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতোই আজকের নারীর এগিয়ে চলার আড়ালে বাড়ছে উদ্বেগ। অপুষ্টি, বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতনের মতো হতাশাজনক চিত্র ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

শিশুবিষয়ক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগের কারণে কন্যাশিশুরা নানা ঝুঁকির মধ্যে বেড়ে উঠছে। এ ছাড়া তারা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ও সেবার অপ্রতুলতা, অনিরাপদ পরিবেশসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশুরা। পাচ্ছে না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। সহিংসতা, গর্ভধারণ জটিলতা ও বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে প্রতিবছর মারা যায় শত শত কন্যাশিশু। কন্যাশিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ইউনিসেফের এক গবেষণা তথ্য মতে, শতকরা ৩৫ ভাগ কিশোরী অপুষ্টির শিকার। শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুরা ছেলেদের চেয়ে ১৬ শতাংশ ক্যালরি ও ১২ শতাংশ প্রোটিন কম পায়। এ ছাড়া ১০-১২ বছর বয়সী ৫৪ শতাংশ এবং ১৩-১৭ বছর বয়সী ৫৭ শতাংশের উচ্চতা আদর্শ উচ্চতার নিচে।

জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। যার মধ্যে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৪৩ ভাগ কিশোর-কিশোরী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে এবং এদের প্রায় ৫ ভাগ কিশোর-কিশোরীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রামের কম। দেশের কিশোর-কিশোরীর শতকরা ৪৩ জনের আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে এবং এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও অ্যানিমিয়ার শিকার। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাল্যবিয়েতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। শত প্রচার আর আইন করেও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৬৬ ভাগ কন্যাশিশুর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে ৬৪ ভাগ কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ করে। আইসিডিডিআরবির পুষ্টি বিভাগের পরিচালক তাহমিদ আহমেদ সমকালকে বলেন, অপুষ্টির শিকার কিশোরী মা হলে সে একটি অপুষ্ট শিশুরই জন্ম দেবে। অপুষ্টির শিকার মায়ের নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অপুষ্টির শিকার মায়েরা কম ওজনের শিশু জন্ম দেন। 

প্ল্যান বাংলাদেশের সমীক্ষা মতে, পারিবারিক সহিংসতার কারণে ১৩ থেকে ১৮ বছরের যুব গৃহবধূ ও মেয়েদের শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি মারাত্মক শারীরিক আঘাতে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ ছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় দেশের কন্যশিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন সূত্র মতে, শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ নারী ও কিশোরী এসিড সন্ত্রাসের শিকার। 
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩৪ ধারায় যৌন নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রয়োগ তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি ১০ জন কন্যাশিশুর মধ্যে ৭ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
গত ৩ বছরে দেশে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গবেষণায় বিভিন্ন জেলা থেকে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব তথ্য সংস্থাটি পেয়েছে তাতে দেখা গেছে এ সময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। 
শিশুবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সিনিয়র প্রকল্প সমন্বয়ক রোকসানা সুলতানা সমকালকে বলেন, একশ্রেণীর বিকৃত মানসিকতার মানুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু ও কিশোরীরা। যৌন নির্যাতন বলতে কেবল ধর্ষণকেই বোঝায় না। এর মধ্যে রয়েছে ইশারা, স্পর্শ, কথা, অঙ্গভঙ্গি প্রভৃতি। যৌন নির্যাতনের এ ঘটনার মধ্যে ২/১টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও বেশিরভাগ ঘটনাই থেকে যায় অন্তরালে। কন্যাশিশু ও কিশোরী নির্যাতনের পেছনে আমাদের সামাজিক অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং প্রত্যেকের আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াটাকেই দায়ী বলে মনে করেন তিনি।  �� কd@��H N�M��ির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে। শিশু একাডেমী ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সকাল ৯টায় এক র‌্যালির আয়োজন করেছে। এটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে শিশু একাডেমীতে এসে শেষ হবে। র‌্যালির উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। র‌্যালি শেষে মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

Facebook Comments