banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 422 বার পঠিত

কেমন আছে,বিদেশে আমাদের নারী শ্রমিকেরা?

 65233_nari-1

বাংলাদেশ থেকে এক হাজার নারী শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আরব আমিরাত সফরে এই চুক্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে নারী শ্রমিক পাঠানোর চুক্তিকে সাফল্য হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা কেমন আছে? সে চিত্র আমরা খুব কমই জানি।

এখন নারী শ্রমিক যাচ্ছে হংকং সিঙ্গাপুর ও আরব দেশগুলোতে।  নারী শ্রমিকের জীবনের অভিজ্ঞতা আমরা জেনে নেই। কেমন আছে তারা।

১.
১৬ বছরের পারভীন। পাসপোর্টে ২৬ বছর বয়স দেখিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে লেবাননে গিয়েছিল কাজ নিয়ে। সেখানে মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হতো তাকে। কাজ করতে না পারলে চলতো শারীরিক নির্যাতন। পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না তার। সেখান থেকে মুক্তির আশায় অন্য চাকরি খুঁজতে থাকে সে। এ সময় এক ব্যক্তি তার দুর্ভোগের কথা শুনে ভাল একটি চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সে ছিল এক দুর্বৃত্ত। তার খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। এরপর নানা ঘটনার জন্ম।

২.
আমাতন বিবি। ৩৫ বছরের এ বিধবার ৩ ছেলে। ছেলেদের ভবিষ্যৎ গড়তে দালালের প্রলোভনে পড়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে স্থানীয় দালালকে দেন ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু দালালের প্রতারণায় বিদেশেও যেতে পারেননি। টাকাও ফেরত পাননি। টাকা ফেরত পেতে এলাকার মাতব্বরদের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। ওই টাকার সুদও বেড়েই চলছে। আমাতন ওই টাকা ফেরত পেতে প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন।

৩.
২০০৮ সালের ৩১শে অক্টোবর লেবাননে কর্মরত অবস্থায় নির্মাণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান বাংলাদেশী নারী কর্মী মনোয়ারা। ওই সময় বলা হয় তিনি ভবনের ওপর থেকে লাফ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১২ সালের মে মাসে প্রমাণ হয় মনোয়ারা কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু আজও ক্ষতিপূরণ পাননি ৪ সন্তানের জননী মনোয়ারার স্বামী ওমর আলী। মনোয়ারার অভিভাবক হিসেবে প্রমাণ করতে তিনি এখনও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

৪.
বিদেশে নারী শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করে তাদের পরিচালিত একটি গবেষনা প্রতিবেদনে ভয়বাহ চিত্র পাওয়া গেছে। গত বছরের শুরু থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) পরিচালিত গবেষণাটি গত ৩০শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের মেঘনা হল রুমে বিভিন্ন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। ‘এক দশকে বাংলাদেশের নারী অভিবাসন: অর্জন, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের নারী কর্মীরা কাজ নিয়ে যেসব দেশে যাচ্ছেন সেখানে তারা নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা সেখানে শিকার হচ্ছেন শারীরিক, যৌন এবং মৌখিক নির্যাতনের। অনেকে কাজের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না, যা পাচ্ছেন তা খুবই কম। আবার অনেকে বিনা বেতনেই কাজ করে যাচ্ছেন মাসের পর মাস। নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ভিকটিম ২৬৪ জন নারী শ্রমিকের মধ্যে ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ কোন বেতন পাননি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগেছেন ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, গত দুই বছরে বিদেশে মহিলা কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুণ। আর এসব কর্মী মূলত যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। যেখানে ১৯৯১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর বিদেশে নারী কর্মী গেছেন ১৪শ’ ৭৯ জন করে। সেখানে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে গেছে ২৫ হাজার ৭০২ জন। এসব কর্মীর ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বিধবা, ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত, বিচ্ছিন্ন এবং স্বামী পরিত্যক্তা। ৬৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বিবাহিত এবং ৯ শতাংশ অবিবাহিত। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। দেখা গেছে, তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ২০১১ সালে ০.৫০ শতাংশ, ২০১২ সালে ০.৫২ শতাংশ। আর ২০১৩ সালে মোট রেমিটেন্সে তাদের অবদান ০.৮১ শতাংশ। বেশিরভাগই গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে বেশ কিছু গার্মেন্টকর্মী হিসেবেও যাচ্ছেন।

সূত্র : মানবজমিন

Facebook Comments