banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 313 বার পঠিত

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে- ১ম পর্ব

শান্তিই শক্তি শান্তিই শক্তি

অন্যকে ক্ষমা করে দিতে হবে এ জন্য নয় যে তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য,
বরং এ জন্য যে আপনি শান্তিতে থাকার যোগ্য”
……………………………………………………………..
জীবনের তিক্ততা,শত্রতা, আক্রোশ,বিষাক্ততাকে ছেড়ে দিন,চলে যেতে দিন(let go)।
……………………………………………………………..
ভাসমান সুখ ভাসমান সুখ

আমরা পৃথিবীতে যখন আসি তখন কষ্ট,যন্ত্রনা,প্রতারনা,বিশ্বাস- ঘাতকতা,আক্রোশ,শত্রুতা সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না।
যতই জীবন পরিক্রমায় ঘাত- প্রতি ঘাতের মধ্যে যেতে থাকি ততই এ সব কষ্টকর,অপ্রীতিকর অনুভূতি গুলো আমাদের মনে জমা হয়।
যদি সঠিক সময়ে, দ্রত এ সব কষ্টদায়ক,পীড়াদায়ক,বিষাক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলোকে মন থেকে সরিয়ে দিতে না পারেন,সে গুলো ক্রমাগত জমতে থাকবে ও জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।
ঘৃনা,আক্রোশ জমা রাখলে আমরা আক্ষরিক অর্থেই “অসুস্হ” হয়ে পড়বো।
এর ফলে মন তার সহজতা ও স্বাচ্ছন্দ্য হারাবে( dis-ease of mind)। ফলশ্রতিতে অনেক শারীরিক রোগের উৎপত্তি হয়।
প্রথম দিকে অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারটি কঠিন মনে হতে পারে।
কিন্তু জীবন সুস্হ ও সুখী রাখতে হলে,জীবনে এগিয়ে যেতে হলে এটি প্রয়োজনীয় এবং জীবন যন্র্রনার প্রলেপ ঝেড়ে ফেলতে এটি জরুরী।
Eckhart Tolly তার ” the power of now”বইতে এ ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
এই টিপস গুলো আপনার ” আবেগগত ক্ষত” গুলোকে নিরাময় করতে এবং আপনার অন্তরাত্মায় পুনরায় আনন্দের আলো প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।

মেনে নিন মেনে নিন

১। বর্তমানে যে রকম আছেন,স্রেফ সেটি মেনে নিন,সে রকমটি থাকুন। পরিবর্তনের বাড়তি চেষ্টা করবেন না
( don’t try,just be):
………………………………………………………………
নিজের উপর আস্হা রাখুন এবং এ বিশ্বাস রাখুন যে সব সময়েই আপনার ভিতর রয়েছে ” অবিশ্বাস্য রকমের সুপ্ত শক্তি”। ( incredible potentiality)।
অতীতের কষ্ট যন্ত্রনাকে যেমন ধরে রাখবেন না,তেমনি নিজের জীবন অগ্রগতির সমালোচনা করে নিজেকে বাড়তি কষ্ট দিবেন না।
*** লম্বা করে শ্বাস নিন এবং মনে রাখবেন আপনি নিজকে যতটুকু কৃতিত্ব দিচ্ছেন,প্রকৃত পক্ষে আপনি তার চেয়ে বেশী কৃতিত্বের দাবীদার।

………………………………….
অহেতুক চিন্তা নয়অহেতুক চিন্তা নয়

২। চিন্তার সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করবেন না,স্রেফ নীরবে সে গুলো পর্যবেক্ষন করুন(don’t identity with any thoughts- just silently observe them):
…………………………………………………………..
আমাদের মস্তিষ্কে উদ্ভুত চিন্তা গুলো স্বতস্ফুর্ত ভাবে বুদবুদের মতন আসতে থাকে।( অটোমেটিক থট)
এ গুলো থেকে আমরা বিযুক্ত থাকতে পারি না।নিজেদেরকে সে চিন্তা গুলোর সঙ্গে যুক্ত করে ফেলি।
ফলে সে চিন্তা গুলো বাস্তব ও সত্য মনে হয়।
অথচ এ রকম চিন্তার বেশীর ভাগই অবাস্তব ও অসত্য।
National Science Foundation গবেষনা করে দেখেছেন এক জন মানুষের মনে প্রতি দিন গড়ে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার চিন্তা উদ্ভুত হয়।
এর ৮০% হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তা
এবং ৯৫% বার বার ঘুরে ফিরে মনে আসতে থাকে
তার মানে আমরা আসলে চিন্তা করি না, আমাদের নিছক সে গুলো বার বার মনে পড়ে।
এই সত্বস্ফুর্ত চিন্তা গুলোকে নিজের মনে করা ঠিক হবে না।
এ গুলো আসবে আবার চলে যাবে( যদি আমরা যেতে দেই)।
আমরা অহেতুক মনো কষ্টে ভুগি এই চিন্তা গুলোকে বাস্তব ও সত্যি মনে করে।
আমাদের ইগো চেষ্টা করে এই নেতিবাচক চিন্তা গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে।
কিন্তু সে তা পারে না।
তাই চিন্তার সঙ্গে যুদ্ধ না করে, পিছিয়ে আসুন।
এ সব চিন্তাকে বিতাড়িত বা পরিবর্তনের চেষ্টা না করে এ গুলোকে শুধু নৈর্বক্তিক ভাবে অবলোকন করুন,পর্যবেক্ষন করুন।
নিরবে দেখুন নিরবে দেখুন

মনে রাখবেন আপনার প্রকৃত সত্বা রয়েছে আপনার হৃদয়ে ও আত্মায়,আপনার ব্রেইনে নয়।
তাই চিন্তার দিকে নয়,নজর দিন নিজের অনুভূতির দিকে
যখনই তা করতে পারবেন আপনার চিত্ত উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সীতে স্পন্দিত হতে থাকবে(vibrate in higher frequency)।
ফলে ধ্বংসাত্বক,ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত চিন্তা গুলো আপনার মনে কম আসবে।
*** মনে রাখবেন আপনার ব্রেইনে কোন চিন্তা ঢুকবে সেটি হয়তো আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না,কিন্তু সে চিন্তার প্রতি কি ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন,সেটি আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারেন।
ভালবাসুন ভালবাসুন

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com

Facebook Comments