কুড়িগ্রামের চিলমারীর নারী উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী রিক্তা আক্তার বানু স্থান পেয়েছেন বিবিসির ২০২৪ সালের অনুপ্রেরণাদায়ী ১০০ নারীর তালিকায়। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ তাকে এই স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
রিক্তা আক্তার বানু একজন জ্যেষ্ঠ নার্স হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তার প্রকৃত পরিচিতি এসেছে একজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তার মেয়ে তানভীন দৃষ্টি মনি সেরিব্রাল পালসি ও অটিজমে আক্রান্ত। মেয়েকে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়ে যখন তিনি সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের মুখোমুখি হন, তখনই তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।
২০০৯ সালে তিনি নিজের জমি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রিক্তা আক্তার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’। বর্তমানে বিদ্যালয়টি প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাদান ও মানসিক বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিশ্বের স্বীকৃতি
বিবিসি প্রতি বছর তাদের তালিকায় এমন নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। রিক্তা আক্তার বানু এই তালিকায় বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পেয়েছেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।
এই তালিকায় তার পাশাপাশি রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ, নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোনসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী নারী।
সমাজে পরিবর্তনের পথিকৃৎ
রিক্তার বিদ্যালয় শুধু শিক্ষাদানেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তার এই উদ্যোগ কুড়িগ্রামের মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য গর্ব
রিক্তা আক্তার বানুর অর্জন বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন, সঠিক উদ্যোগ এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উল্লেখযোগ্য কাজ:
২০০৯ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সুযোগ।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি।
উপসংহার
বিশ্বের মঞ্চে রিক্তা আক্তার বানুর এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তার এই অর্জন দেশের অন্য নারীদেরও অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪