উপহার মানেই তো চমক। তাই বিশেষ দিনে প্রিয় মানুষের জন্য উপহার ঘিরে থাকে হাজারও পরিকল্পনা। উপহার নির্বাচন দিয়ে যে পরিকল্পনার শুরু সেটার সমাপ্তিটা হয় সুনিপুণ হাতে মোড়ানোর মাধ্যমে। তবে এই উপহার পরিকল্পনায় হালের তরুণেরা কতটা ‘পরিকল্পনাবিদ’! তাঁরা উপহার হিসেবে কীই-বা বেছে নিচ্ছেন?
এ সময়ের তরুণদের উপহারপ্রবণতা জানতে কথা হয় বিভিন্ন জেলার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। রংপুর মেডিকেল কলেজের সুনন্দা সরকারের মতো তরুণদের কমবেশি সবাই মাথায় রাখেন উপহার নির্বাচনের মৌলিক বিষয়টি। সুনন্দা যেমনটি বললেন, যাকে উপহার দেওয়া হবে তিনি পুরুষ নাকি নারী, উপহারের উপলক্ষ, ব্যক্তির রুচিবোধ, বাজেট, সে মানুষটার সঙ্গে বন্ধুতের গাঢ়তা কতটুকু—এসব বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে উপহারটা কী হবে।
সম্পর্ক যেমন, উপহার তেমন
নিজের হাতে বানানো কাঠের একটি দেয়ালঘড়িকে ‘লাভ ক্লক’ নাম দিয়েছেন ফারজানা নোভা। ঘড়িটি তিনি উপহার দিয়েছেন তাঁর খুবই পছন্দের একজন মানুষকে। এমন নাম কেন? ‘ঘড়িটি আমি বানিয়েছি নিজের মতো করে। সংখ্যার ঘরগুলো ‘লাভ সাইন’ ব্যবহার করেছি। যার অর্থ ২৪ ঘণ্টা ধরেই ভালোবাসা!’
এই তরুণীর মতো অনেকেই হাতে বানানো উপহারকেই বেশি গুরুত্ব দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমা নওরীন বলেন, ‘আমি চমকে দেওয়া কেকের সঙ্গে হাতে বানানো কোনো কার্ড কিংবা ‘ম্যাজিক বক্স’ দিয়ে থাকি। তবে বই, চকলেট ও অলংকারও কখনো কখনো দেওয়া হয়।’ ম্যাজিক বক্স? বিষয়টি খোলসা করলেন নওরীন, এটা তেমন কিছু নয় তবে বেশ মজার। এটির ভেতর অনেকগুলো বক্স সাজিয়ে রাখা হয়। একটার পর একটা বক্স খুলে খুলে উপহারে পৌঁছাতে হয়।
এমন বিশেষ উপহারের মধ্যেও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় উপহার বই। কী ধরনের বই পছন্দের তালিকায় থাকে? সেখানেও এল রুচির বিষয়টি সামনে আনলেন তাসনিয়া প্রিয়তা। তাঁর মতে, ‘এটা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির রুচি কেমন তার ওপর। কেউ বাংলা বই বেশি পছন্দ করে, কেউ ইংরেজি। সবারই কোনো না কোনো পছন্দের লেখক বা কবি থাকেন। সে হিসেবেই বই কেনা হয়।’ তবে অনেকেই নিজে পড়ে মুগ্ধ হয়েছেন এমন বই উপহার দিয়ে থাকেন, সম্প্রতি প্রকাশিত বইও উপহারের তালিকায় রাখেন কেউ কেউ।
বইয়ের বাইরে অনেকে আবার বিবেচেনা করেন বন্ধুর খুব প্রয়োজনীয় কিছু দরকার কিনা। এই উপহার তালিকায় তখন চলে আসে টি-শার্ট, মানিব্যাগ থেকে নিত্যব্যবহার্য নানা গ্যাজেট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিমেষ বৈদ্য যেমন প্রায় বন্ধুর জন্মদিনেই পেনড্রাইভ, পাওয়ার ব্যাংক কিংবা হেডফোনের মতো দরকারি গেজেট নিয়ে হাজির হন।
তবে উপহার যেমনই হোক, তা উপস্থাপনের ক্ষেত্রেও রয়েছে তরুণদের বিশেষ নজর।
নির্বাচিত উপহার
হালের তরুণেরা হরহামেশায় উপহার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বই, ফুল, কানের ঝুমকা, চুড়ি-বালার মতো অলংকার, সুগন্ধিসহ বিভিন্ন নিত্যব্যবহার করা হয় এমন প্রসাধনী, হাতঘড়ি, পোশাক, মানিব্যাগ, কেক, চকলেট, হাতে বানানো কার্ড, স্ক্র্যাপ বুক, পেনহোল্ডার, নোটবই, গাছ, ফুল, কফি মগ, ছবিসহ মগ, ছবির ফ্রেম, ফুলদানি, টেডিবিয়ার, মোমবাতি, কাঠে খোদায় করা ছবি, সেলফিস্টিক, পেনড্রাইভ, পাওয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন গেজেটসামগ্রী।
আগ্রহটা অনলাইনে
পছন্দের উপহারসামগ্রী সংগ্রহের জন্য অধিকাংশ তরুণের ভরসা অনলাইনভিত্তিক দোকানগুলোয়। অনলাইনে বই, সুগন্ধিসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী কেনার সুবিধা হলো মূল্য পরিশোধ করলে তা সরাসরি নির্দিষ্ট মানুষের দরজায় পৌঁছে দেন। তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনলাইন ছাড়াও ঢাকায় যাঁরা থাকেন তাঁরা বই সংগ্রহের ক্ষেত্রে ছুটে যান আজিজ সুপারমার্কেট, নীলক্ষেত, চট্টগ্রামের তরুণেরা বাতিঘর, প্রথমাসহ শহরের বড় বইয়ের দোকানগুলোয়। কাঠের ওপর ছবি বা কোনো উক্তি খোদাই করে দেওয়ার ক্ষেত্রে উডপেকারসহ কয়েকটি অনলাইন দোকানের নাম শোনা গেল। অলংকার, প্রসাধনী, পোশাকসামগ্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনলাইনের পাশাপাশি বড় কোনো শপিংমল বা ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোয় হাজির হোন। অন্যান্য উপহার কেনার ক্ষেত্রে হাতের নাগালে রয়েছে এমন ইলেকট্রনিকস দোকান, উপহার বিক্রির দোকানে খোঁজ করেন।