নারী সংবাদ
ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রায়পুরা গ্রামের দশ বছর বয়সী রুবায়েত হোসেন প্রায়ই অসুস্থ থাকে। মূলত কিছুদিন পরপরই সে ডায়রিয়া আর জ্বরেও ভোগে। যার ফলে প্রতি মাসেই স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয় তাকে।
একই এলাকার নবম শ্রেণীর ছাত্রী সালমা বেগম। মেয়েটি সব সময় ক্লাসের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কখনোই স্কুলে সে অনুপস্থিত থাকতো না। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত সে স্কুলে আসছে না। কারণ প্রথমবারের মত পিরিয়ড হয়েছে তার। খবর পেয়ে স্থানীয় এক নারী এনজিও কর্মী দেখা করতে যায় তার সাথে। ওই এনজিও কর্মী সালমাকে নিয়ে আসেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। সেখান হতে সালমাকে দেওয়া হয় পিরিয়ডকালীন পরিচর্যার পরামর্শ এবং কিছু আয়রন ট্যাবলেট।
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্যান্য সব খাতের মতই স্বাস্থ্য সেবাও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প। আর সরকারের এ সকল উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা।
ফলে এ অঞ্চলের সকল স্তরের কিশোর-কিশোরীরা এসব কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা, বাল্য বিয়ের কুফল, পুষ্টি, আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম, পিরিয়ডকালীন পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন বিষয় সেবা পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার একেবারে গ্রাম পর্যায়ের কিশোর-কিশোরীরা। আর এ কেন্দ্র পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
সালমা বলে, পিরিয়ড হওয়ার পর আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার খুব বড় কোন অসুখ হয়েছে। ভয়ে মাকেও কিছু বলতে পারিনি। নোংরা কাপড় ব্যবহার করতাম। এরফলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাই। পরে এই সেবা কেন্দ্রর কিশোরী কর্নারে গিয়ে পিরিয়ডকালীন সময়ের পরিচর্যা এবং করণীয় সম্পর্কে জেনে অনেকটা হাল্কা হলাম।
সালমার বান্ধবী ফিরোজা আক্তারও জানায়, তার অভিব্যক্তি। ফিরোজা বলে, প্রথমবার যখন পিরিয়ড হয় তখন আমি ভেবেছিলাম আমার অনেক বড় কোন অসুখ হয়েছে। আমি হয়ত আর বেশি দিন বাঁচব না। স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে বাড়ীর পাশের এক বড় আপাকে সব জানালে তিনি আমাকে এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কিশোরী কর্ণারে নিয়ে আসেন। এখন আমি নিয়মিতই এখানে আসি। আবার কেউ সমস্যায় পড়লে তাকেও এখানে নিয়ে আসি পরামর্শের জন্য।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রফিক উদ্দিন বলে, আমি প্রায় সময় ডায়রিয়াতে ভুগতাম। মাসে একবার দু’বার আমার ডায়রিয়া হত। পরে এক বন্ধু আমাকে এই সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসে। এখান থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য পরামর্শ পাওয়ার পর থেকে আমি অনেকটা সুস্থ। এখন আমি খাওয়ার আগে এবং পরে ভালো করে হাত ধুঁেয় নিই। এছাড়াও অন্যান্য কাজ করার পরেও আমি হাত ধুঁেয় নিই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা রাহেলা বেগম জানান, আগে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে কিশোরীদের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে গেছে কয়েক গুন। মূলত এই কেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় তাদের সেবা নেয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
এখানে কিশোর-কিশোরীদের আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে যেমন স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বয়:সন্ধিকালে করনীয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাডের ব্যাবহার, বয়ঃসন্ধি সময়ের খাবার-দাবার, বয়ঃসন্ধিকালসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এই সেবা কেন্দ্রের সাথে জড়িত স্থানীয় এক ক্লিনিকের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় কিশোরীরা এখানে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। ফলে এলাকায় অসুস্থ কিশোর-কিশোরীর হার কমে যাচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস