অপরাজিতাবিডি ডটকম, ঢাকা : স্বামীর আয়ে স্কুলগামী একমাত্র সন্তান সাব্বিরের লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয়। কাকডাকা ভোরে ছালমাকে ছুটতে হয় কাজে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন নারকেল খোলার কাজ।
মা-মনসা ডাল ও তেল মিলের শ্রমিক ছালমা বেগম বলেন, সংসারে সচ্ছলতা আনতে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। দিনমজুর স্বামীর প্রতিদিন কাজ জোটে না। প্রতিদিন দুই ঘণ্টায় প্রায় ২শ’ নারকেল খুলতে পারি। এরপর বাড়ি গিয়ে রান্নাবান্না করে খেয়ে-দেয়ে বিকেল ৪টায় এসে রাত পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬শ’ নারকেল খুলতে পারি। নারকেল খুলে মজুরি পাই একশ’ থেকে ১২০ টাকা। বিসিকের বিভিন্ন মিলে কখনও ডাল ভাঙা, কখনও নারকেল খোলার কাজ করি। কোনো না কোনো মিলে কাজ থাকেই। আগে একশ’ নারকেল খুললে পেতাম মাত্র ১৫ টাকা। এ নিয়ে বিভিন্ন মিলের নারকেল খোলার কাজে জড়িত শ্রমিকরা আন্দোলন করলে অনেকটা বাধ্য হয়ে মালিকরা এক মাস আগে মজুরি ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করেছেন। এখন নারকেলের মৌসুম। এখানকার মিলগুলোতে প্রায় সারা বছরই নারকেল তেল উৎপাদনের কাজ চলে। তাই কাজ পেতে সমস্যা হয় না। তার পাশে বসেই ছুরি দিয়ে মালই থেকে নারকেল ফালি করছিলেন পিয়ারা বেগম। তাকে সহযোগিতা করছে মেয়ে তন্বী। তন্বী বাগেরহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। মায়ের সহযোগিতার জন্য সকাল সাড়ে ৫টায় নারকেল ভাঙতে সেও মিলে এসেছে। পিয়ারা বেগম বলেন, নয়জনের সংসার। স্বামী শহিদুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রি। স্বামীর নির্যাতন ও দ্বিতীয় বিয়ের কারণে মেয়ে কাজরী তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রুকসীকে নিয়ে বছর দুই আগে আমার বাড়িতে চলে আসে। সংসারের হাল ধরতে আমিও ঘরের বাইরে এসে শ্রমিকের কাজ নিয়েছি। এখানে মাস চুক্তিতে কোনো কাজ নেই। প্রতিদিনের কাজের ওপর মালিকরা টাকা দেয়।
ছালমা, পিয়ারা বেগম একা নয় তাদের মতো আকলিমা, সুমি, সোনিয়া, বেগম খাতুনসহ অসংখ্য নারী বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর পরিশ্রমী নারকেল মিলের শ্রমিক। বাগেরহাট শহরের দড়াটানা নদীর পাশে বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে উঠেছে এই মিল।
মেঝের এক পাশে চট বিছিয়ে বছর দেড়েকের ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে কাজ করছিলেন সুমি আক্তার। সুমির সঙ্গে তার মা আকলিমা বেগমও কাজ করছিলেন। সুমির বাবা মান্নান খা কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। তাই কাজ করতে পারেন না। সুমি বলেন, ডাক্তার আব্বাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে বলেছেন। টাকা-পয়সা নেই চিকিৎসা করাব কোথা থেকে। অভাবের কারণে আমাকে পরিণত বয়সের আগেই বিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় আমি মা হয়েছি। স্বামী আসলাম নেশা করে। সংসারের কোনো খোঁজই রাখে না। প্রায়ই আমাকে মারধর করে। বিয়ের কয়েক মাস পরেই আমার ওপর আসলামের নির্যাতন শুরু হয়। সংসারের হাল ধরতে, পেটের আহার জোগাতে দুধের শিশু রবিউলকে নিয়ে কাজে এসেছি।
অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ ১০ জুলাই ২০১৪