banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 301 বার পঠিত

 

কল্যাণী স্কুলের ‘কল্যাণী’

ছয় বছর আগে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ছিল জরাজীর্ণ। মাঠে আবর্জনার স্তূপ। শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসত না। জোড়াতালি দিয়ে চলছিল বিদ্যালয়টি। এখন আর সেই চিত্র নেই। দুটি পাকা ভবন, বারান্দায় হরেক রকম ফুলগাছের টব। শ্রেণিকক্ষগুলো সাজানো-গোছানো। শিক্ষার্থীদের ফলও চোখে পড়ার মতো। গত ছয় বছরে চারবার বিদ্যালয়টি উপজেলায় ‘শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
কল্যাণী নামের এই বিদ্যালয়টি যাঁর কারণে বদলে গেছে, তিনি প্রধান শিক্ষক সুফিয়া বেগম। শিশুদের পড়ানোর নিজস্ব কৌশল, কর্তব্যনিষ্ঠা ও একাগ্রতার জন্য এবার তিনি রংপুর বিভাগের ‘শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন।
স্কুলটি এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা কল্যাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ২০০৯ সালে যখন সুফিয়া বেগম এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, তখন স্কুলটি অনেকটাই বিলীন। রীতিমতো ভগ্নদশা। সুফিয়া বেগম বললেন, ‘তখন বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে মন খারাপ হয়ে যেত। পড়ানোর জন্য ছিল আধা পাকা জরাজীর্ণ তিনটি ঘর। মাঠে নোংরা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসত না। টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ত। ছেলেমেয়েদের বই-খাতা ভিজে যেত।’
কীভাবে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় সেটাই ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় তাঁর। প্রথমে তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন। তাদের নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ পরিষ্কার করেন। এরপর এলাকার সুধীজনদের নিয়ে সভা করলেন, পড়াশোনার পরিবেশ তৈরির জন্য চাইলেন সহযোগিতা। বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হলো। স্কুলের বেঞ্চ, চেয়ার ও টেবিল তৈরি হলো স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায়। শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেন। নিয়মিত মা ও অভিভাবক সমাবেশ শুরু হয়। তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করা হলো। এসবে শিক্ষার চমৎকার পরিবেশ তৈরি হলো, বেড়ে গেল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার। পরীক্ষার ফলও ভালো হতে থাকল। বিদ্যালয়টিতে এখন শিক্ষার্থী ৫৯৬ জন, শিক্ষক ১৪ জন। গত তিন বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ২০১০, ২০১১, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে স্থান দখল করে।
২৫ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে সবুজ মাঠ। মাঠের চারদিকে গাছ। দুটি পাকা ভবনের নয়টি কক্ষ সুসজ্জিত। শিশু শ্রেণির কক্ষটি যেন খেলাঘর। শিশুরা কীভাবে বেড়ে উঠলে ভালো কিছু শিখবে তার একটি গাইডলাইনও দেয়ালে সাঁটানো আছে স্কুলের দেয়ালে। অবশ্য এটি অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতার জন্য। সংগীত চর্চার জন্য আছে নানা রকম বাদ্যযন্ত্র ঢোল-তবলা, হারমোনিয়াম ইত্যাদি। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে রয়েছে ছেলেমেয়ের আঁকা ছবি।
প্রধান শিক্ষক সুফিয়া বেগম সেদিন প্রথম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে সমবেত স্বরে কবিতা আবৃত্তি করছে। ক্লাস শেষে কথা হয় শিক্ষার্থী ফারজানার সঙ্গে। সে বলে, ‘হেড আপা (প্রধান শিক্ষক) হামাক খুব আদর করে। আপা কাসোত (কাছে) আসলে খুব ভালো নাগে।’
সুফিয়া বেগম মনে করেন নিজের কাজটুকু সব সময় যত্ন দিয়ে করতে হয়। পেশার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে একজন মানুষ ভালো কিছু করতে পারেন না।

Facebook Comments