banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 477 বার পঠিত

করোনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন কেন?

নারী নয়, পুরুষদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে এর কারণ নিয়ে চিকিৎসকরা একমত নন। ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি করোনায়আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(আইসিএমআর)-এর রিপোর্ট থেকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর গবেষক দল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ দেশজুড়ে ২০টি রাজ্যের ৫২টি জেলায় প্রবল শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। মোট পাঁচ হাজার ৯১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন অর্থাৎ ৮৩ শতাংশেরও বেশি হলেন পুরুষ।

ভারতে নারীদের থেকে পুরুষরা এত বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? চিকিৎসকদের মধ্যেও কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। ভারতে জেলা বা ছোট শহরগুলিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি ধূমপান করেন। গ্রামের দিকে লোকে এখনও হুঁকো খান, বিড়ি, সিগারেটও খান। তাই মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইটালিতেও এত বেশি সংখ্যক লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ, সেখানে লোকের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস অনেক বেশি।”

আবার চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মনে করেন, এর প্রধান কারণ, পুরুষরা অনেক বেশি বাইরের কাজ করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,” আসলে ভারতে পুরুষরা মেয়েদের থেকে অনেক বেশি বাইরে বের হন। তাই তাঁরা বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, তাই তাঁরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজামুদ্দিনের ঘটনাই তার উদাহরণ।”

ডয়চে ভেলের কাছে চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের ব্যাখ্যা, ”বিশ্বের অন্য জায়গাতেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা হচ্ছে সামাজিক অসুখ। ভাইরাসটি সংক্রমক, অর্থাৎ, ছোঁয়াচে। তাই যিনি বাইরে যাচ্ছেন ও আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি ঘরে ফিরলে গোটা পরিবারে সংক্রমণ ঘটার কথা। ফলে নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন আর পুরুষরা বেশি, এই প্রবণতা বাইরে বেরনোর নিরিখে বিচার করলে ভুল হবে। আসলে যে কোনও ভাইরসের একটা জেনেটিক কাঠামো থাকে। করোনার ক্ষেত্রে সেই গঠন এখনও বোঝা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার সিস্টেমও আলাদা। বহু ক্ষেত্রে কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, কারও কম। করোনা কী করে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙছে, তা এখনও জানা যায়নি। জানা গেলে বোঝা যাবে কেন পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন!”

আইসিএমআরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সমীক্ষা অনুসারে ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা বেশি হচ্ছে। আইসিএমআরের মতে, মধ্যরেখা হলো ৫৪ বছর। এর কারণ নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকরা একমত। তাঁদের মতে, ৫০ এর পর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সাত্যকি হালদার মনে করেন, ”৫০ এর পর লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরে বেরনোর প্রবণতা আগের মতোই থাকে। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।” পার্থ প্রতিম বোসের মতে, ”একে তো ওই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তার ওপর যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁরাও অনেক দিন ধরে ধূমপান করে ফুসফুসের অনেকটা ক্ষতি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত কখনও বিদেশে যাননি। তাঁরা জ্ঞানত কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও মেশেননি।

আইসিএমআর এখন নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিনির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে,

যাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন, তাঁদের পাঁচদিন ও ১৪ দিন পরে দুই বার পরীক্ষা করতে হবে। যে করোনা আক্রান্তরা কোনও জমায়েতে ছিলেন, সেখানে উপস্থিত সকলের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা হবে। গত ১৪ দিনে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিহ্নিত করা হটস্পটে কারও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে। সূত্র ডিডব্লিউ

Facebook Comments