বিপাশা রায়ঃ সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত বাইরে বেরোতে হয় যাঁদের, তাঁদের পক্ষে কী রোজ রোজ নতুন পোশাক পরা সম্ভব? নতুন পোশাক না হোক, নতুন একটা ভাব আনা তো খুবই সম্ভব। এমনই মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এ জন্য চাই কয়েক রকম কুর্তা আর তার সঙ্গে পরার জন্য পালাজ্জো বা লেগিংস। খুব বেশি খরচও পড়বে না, নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন নিজের বাজেটের মধ্যে কুর্তা। সে উপায় বাতলে দিয়েছেন ডিজাইনাররাই।
কয়েক বছর ধরে শুধু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ছিল কুর্তার জনপ্রিয়তা। তবে এখন অফিসে পরার পোশাক হিসেবেও মেয়েরা বেছে নিচ্ছেন কুর্তা। এর নকশাতেও এখন আসছে নানা পরিবর্তন। গলায় যোগ করা হচ্ছে লেস, কাটছাঁটে আছে ভিন্নতা।
নকশাটা যেমনই হোক না কেন সব সময় ব্যবহারের জন্য কুর্তার কাপড়টা সুতি হওয়াই ভালো বলে জানালেন অনলাইন পোশাকের দোকান ওয়ালীজের ডিজাইনার ওয়ালী উদ্দীন আহমেদ। এ ক্ষেত্রে আকািশ, সাদা, হালকা-সবুজ রংগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। কাপড়ের রংটা সাদা হলে গলা আর হাতায় লাগাতে পারেন কালো রঙের পাইপিং। পাইপিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন কালো রঙের বাটিক প্রিন্টের কাপড়, না হলে কালোর ওপর সোনালি রঙের সুতার কাজের লেস। কাপড়টা যদি প্রিন্টের হয় সে ক্ষেত্রে গলাটা হাইনেক রেখে সামনের দিকের বেশ কিছু অংশ কাটা রাখতে পারেন। কুর্তা বানানোর সময় আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন হাতার পাইপিংয়ের দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চি হলে এবং কুর্তার িনচের দিকে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি পাইপিং লাগালে তা দেখতে ভালো দেখাবে। কুর্তার দুপাশের কাটা অংশ ১৮ ইঞ্চির কম এবং ঘেরটা হবে ৩৬ ইঞ্চি। এ ছাড়াও কুর্তার দৈর্ঘ্য ৩৪ ইঞ্চির বেশি না করার পরামর্শ দিলেন তিনি। থ্রি-কোয়ার্টার হাতায় কুর্তাটা সবাইকে বেশ মানিয়ে যায় বলেও জানালেন তিনি। অফিসে পরতে পারেন থ্রি-কোয়ার্টার হাতার কুর্তা।
তিনটি কুর্তা থাকলে সপ্তাহে কোনোদিন তা একরঙা লেগিংসের সঙ্গে পরতে পারেন, আবার কোনোদিন না হয় পরুন প্রিন্ট নকশার পালাজ্জোর সঙ্গে। ভিন্ন ভিন্ন স্কার্ফ বেঁধেও একই কুর্তাটি নানাভাবে পরতে পারেন।
এদিকে প্রতিদিনের কাজে যাঁদের বাইরে বের হতে হয়, তাঁদের জন্য বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকারের পরামর্শ হলো, প্রতিটি কুর্তার জন্য আলাদা রং নয়, বরং একটি রঙের লেগিংস বা সালোয়ারের সঙ্গে পরতে পারবেন যেকোনো ধরনের কুর্তা। এ ক্ষেত্রে লেগিংস, জিনস বা পালাজ্জোর জন্য কালো বা হালকা সাদা রং বেছে নিন। মোটামুটি সব রঙের কুর্তার সঙ্গেই তাহলে মানিয়ে যাবে। সব ধরনের কুর্তার সঙ্গেই পরতে পারেন প্রিন্টের নকশার সিল্কের স্কার্ফ। এ ক্ষেত্রে শুধু মনের মতো নকশায় কুর্তাটি বানিয়ে নিলেই কম বাজেটের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার প্রতিদিনকার পোশাক।
কুর্তার সঙ্গে সাজগোজটা হালকা হলেই ভালো দেখাবে এমনটা জানালেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। যেমন যাঁদের চুল একটু লম্বা তাঁরা লেগিংসের সঙ্গে কুর্তা পরলে একটু উঁচু করে পনিটেল বেঁধে নিতে পারেন। পালাজ্জোর সঙ্গে খোলা রাখতে পারেন চুলগুলোকে।
কুর্তার বাজেট
ওয়ালী উদ্দীন আহমেদ জানালেন, সাধারণত কুর্তা বানাতে দেড় থেকে আড়াই গজ কাপড় লাগবে। এ ক্ষেত্রে বহর তিন হাত হলে কাপড় লাগবে দেড় গজ আবার বহর যদি আড়াই হাত হয় তাহলে সোয়া দুই গজ কাপড় দিয়েই বানাতে পারেন কুর্তা। ঢাকার চাঁদনী চক ও ইসলামপুরের কাপড়ের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল, সুতির ওপর ছাপা নকশার কাপড়ের দাম পড়বে গজপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। হাতে বোনা তাঁতের কাপড় পাবেন গজপ্রতি ১২০ টাকায়। আর ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে মিলবে এক রঙা কাপড়। পাইপিং লাগাতে কলারের জন্য লেস বা রিবন লাগবে ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি। হাতার জন্য লাগবে ১০ ইঞ্চি লেস। নকশার ওপর নির্ভর করবে এই লেসের দাম। আর কুর্তা বানানোর মজুরিটা এলাকাভেদে পড়বে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। তবে পাড়ার বা স্থানীয় কোনো দোকানে বানালে ১২০ টাকার মধ্যেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার পছন্দের কুর্তাটি।