নেকাবসহ বোরকা পরার কারণে এক ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘ড্রেসকোড ভাঙ্গার’ অভিযোগে তাকে বহিস্কার করা হয়। ভুক্তভোগি ওই ছাত্রীর নাম হাফসা ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে (স্নাতক) সপ্তম সেমিস্টারের (মোট ১২ সেমিস্টার) ছাত্রী। হাফসার ভাই আবদুল্লাহ মুহাম্মদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ হলে এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
আবদুল্লাহ মুহাম্মদের ভাষ্যমতে, ”ও ভাল স্টুডেন্ট। বহিষ্কারের অন্য কোনো কারণ নেই। ওর একমাত্র অপরাধ ও বোরকা পরে।”
এর আগে ব্যাপারটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিভাবক ডেকে পাঠিয়েছিলো বলেও দাবি করেন তিনি।
আবদুল্লাহ আরো বলেন, ”আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও উনারা উনাদের কথাই বারবার বলেছেন। উনারা ড্রেসকোডের কথা বলেছেন। তবে আমাদের অনুরোধে উনারা কোন ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন না।”
কেউই ড্রেসকোড শতভাগ মানছে না বলেও মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ।
”বোরকা পরা আরো কয়েকজন ছিলো হাফসার সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে তারা একপর্যায়ে বোরকা ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে হাফসার ওপর পূর্ণ সাপোর্ট ছিলো। ওই একমাত্র, যে তার মুখ দেখাবে না। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওর আইডিটা ব্লক করে দেওয়া হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ড্রেসকোড সরবরাহ করা হয়েছিলো হাফসার অভিভাবককে।
আবদুল্লাহর অভিযোগ, ”বিশ্ববিদ্যালয়টিতে টি-শার্ট এবং থ্রি কোয়ার্টার পরে আসে অনেক ছাত্রী। এটা কমন একটা ঘটনা। এ ব্যাপারটি ড্রেসকোডের বাইরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে কিন্তু নিশ্চুপ।”
তিনি বলেন, ”ব্যাপারটি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে একটি রিট করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি আগামী রোববারের মধ্যে এই সংক্রান্ত ব্যাপারে রেজাল্ট পাবো।”
এর আগে গত ২৮ মে ‘ড্রেসকোড না মানা হলে কেন হাফসাকে বহিষ্কার করা হবে না’ এই মর্মে একটি কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পর থেকে।
ওই শোকজ লেটারে ৩ জুনের মধ্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে হাফসা নেকাবসহ (মুখ ঢাকা) বোরকা পরা বন্ধ করেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের রেজিস্ট্রার ইশফাক এলাহী চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি দাপ্তরিক চিঠিতে হাফসাকে বহিষ্কার করে। সেখানে জানানো হয়, হাফসার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ইসফাক ইলাহী চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। কেউ ব্লগে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আবু দারদা নামের একজন তার ফেসবুক মন্তব্যে বলেন, ”আমাদের এই মুসলিম প্রধান দেশে? এদের সাহসের বহর দেখলে অবাক হতে হয়! এতো সাহস এরা পায় কোথেকে?”
ইব্রাহিম খলিল নামে এক ছাত্র ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ”ব্র্যাক ভার্সিটির রেজিস্ট্রারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, কারণ উনি ২০০৮-০৯ এর দিকে আমাদের ভার্সিটির রেজিস্ট্রার ছিলেন। উনি এমনিতেই সেকুলারপন্থি, এইরকম ইসলাম বিদ্বেষী মানুষের নাম আবার- “ইশফাক এলাহী”। আমার মনে হয় না এই জাহেল ইসলামতো দূরের কথা, নিজের নামের অর্থ জানে কিনা সন্দেহ! ইংল্যান্ড, আমেরিকার মতো অমুসলিম অধ্যুষিত দেশে মুসলমান মেয়েরা নেকাব পরে, পরিপূর্ণভাবে হিজাব করে ডাক্তারী -ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারছে, কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিতে পারছে, সেখানে নিরাপত্তার বিঘ্ন হচ্ছে না।আর এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশের ইউনিভার্সিটিতে মুসলিম মেয়ে নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকলে নাকি নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটে!! কি আজিব ব্যাপার!”
• সোহেল মাহমুদ