দিনাজপুর অঞ্চলের গ্রাম বাংলার সড়কে এটা কোনো শোভাযাত্রা বা সাইকেল র্যালি নয়। কোনো এনজিওর কর্মসূচিও নয়। এটা নারী অগ্রযাত্রার এক মূর্ত প্রতীক। এ দৃশ্যই বলে দিচ্ছে নারীরা আর পিছিয়ে নাই। তারাও আজ পারবে নিজেরাই সামনে এগিয়ে যেতে।
এটা প্রতিনিয়তই স্কুল ছুটির পর ফিরে যাওয়া বাংলার গ্রামীণ পথের দৃশ্য। দিনাজপুরের সদর, বিরল, বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কেই এভাবেই স্কুল যেতে দেখা যায় মেয়েদের। দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা দলবেঁধে নিজেরাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসছে।
স্কুল ছুটির সময় একসঙ্গে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় মনে হতে পরে এটা হয়তো সাইকেল র্যালি। সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ প্রত্যয় নিয়ে তারা প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে।
এ অদম্য শিক্ষার্থীরা কেউ ১ থেকে ৯ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেলেই স্কুলে যাওয়া আসা করে। যদিও বৃষ্টি এলে স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। সাইকেল না হলে পায়ে হেঁটেই আসতে হতো অথবা কিছুটা পথ হেঁটে এসে হয়তো রিকশা-অটোভ্যানে আসতে হতো। কিন্তু স্বাধীনভাবে নিজে সাইকেল চালিয়ে এলে সময় ও সুবিধা দুটোই পাওয়া যায়।
বিরলের অকড়া গ্রাম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী কামরুন নাহার প্রায় ৮কিলোসিমটার পথ সাইকেল চালিয়ে বিরল পাইলট হাইস্কুলে আসে। এই স্কুলে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের মহেশপুর গ্রাম থেকে আসে ৫ জন, পুড়িয়া গ্রাম থেকে ৬ জন। এভাবে দূরের গ্রাম থেকে বিভিন্ন শ্রেণির ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রী আসে একইভাবে।
এ ব্যাপারে কামরুজ্জামানের কন্যা কামরুন নাহার জানায়, আমাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে বৃষ্টি-ঝড়ে সমস্যাই পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে বিরলের রঘুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন আলী বলেন, ‘বর্তমানে এ স্কুলে শতকরা ৩৫ ভাগ মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। যখন শতকরা ৮০ ভাগ মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করবে তখন মনে করবো মেয়েরা লেখাপড়া থেকে সকল দিকে এগিয়ে গেছে তারই প্রতিফলন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি যে সকল মেয়েরা সাইকেলিং করে স্কুলে যাতায়াত করে তাদের মাঝে কোনো প্রকার জড়তা থাকে না। তারা অনেকটা অগ্রগামী হয়। তাই আমি সকল ছাত্রীদের সাইকেল নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কেননা বাইরে সামাজিকভাবে মেয়েদের সাইকেলিংয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্তেও সাইকেল নিয়ে আসতে পারে না। এছাড়াও রাস্তায় কোনো প্রকার সমস্যা হলে কিংবা কেউ বিরক্ত করলে জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিব বলে তাদের জানিয়েছি।’
দেশের সার্বিক উন্নতি হলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এখনও অনেক গ্রামে ভালো রাস্তা-ঘাট নেই, শিশুরাও স্কুলে যেতে পারছেন না। কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে। ধর্মীয় বাধা বা মোল্লাদের ভয়-ভীতির কমে গেছে। আজ দিন পাল্টেছে নারীরা নিজেদের জীবনের উন্নতি করতে চায়। চায় পুরুষদের পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখতে। আর ঘরে থাকতে তারা চায় না।
তাই তারা বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষার আলো নিতে, বিশ্বকে জানতে। সমাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীদের ন্যায্য সম্মানসহ সকল পেশায় দক্ষতার ছাপ রাখতে।