banner

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 311 বার পঠিত

 

ওরা কেন এতো অভিমানী হয়ে উঠছে


ডা. কবীর জুয়েল


অরিত্রী আর ফিরে আসবে না, ওর জন্য আমাদের অফুরান ভালোবাসা রইলো,আমরা আর দ্বিতীয় কোন অরিত্রী-র এমন অকাল প্রস্থান চাইনে, তবে ——-
এ দায় কি শুধু শিক্ষকদের??????
আমাদের চিন্তার খোরাক আরো বিস্তৃত হওয়া উচিৎ—
১)অরিত্রী-রা কেন এতো অভিমানী হয়ে যাচ্ছে?
২)কেন এমন হঠকারিতা ওদের মনে বাসা বাঁধবে?
৩)কেন আড়ালে আবডালে থেকে ওরা নিজের মতো করে জীবন-কে পরিচালনা করছে?
৪)একটি টিন এজ মেয়ে কেন স্মার্ট ফোনাসক্ত হবে?
৫)একটি নামি দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে-র ছাত্রী হয়ে কেন সে পরীক্ষায় অসদোপায় অবলম্বন করলো,তার পাঠদানে ও তা গ্রহণে কি কোন ঘাটতি ছিলো?
এ জন্য শিক্ষক,সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও সর্বোপরি
অভিভাবকদের কি ভূমিকা রয়েছে?
৬)বিদ্যালয়-কলেজ গুলোর পরিচালনা কমিটি গুলো কি যথার্থ যোগ্য সৎ লোক দিয়ে গঠিত হচ্ছে?
৭)আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠা-র প্রকৃয়া-টি কতোটুকু বিজ্ঞানসম্মত? এ নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের করনীয় কি?
আরো বিস্তর সুদূর প্রসারী ভাবনা প্রয়োজন।
ঘটনা একটা ঘটে গেলে সবাই অনেক সমীকরন দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন,নানা বক্তৃতা,বিবৃতি আসতে থাকে,
কিন্তু দুদিন পর পূর্বাপর অবস্থা বিরাজ করে,এজন্য-ই
অরিত্র বিষয়ক ঘটনাগুলো-র পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে(১লা ডিসেম্বর’১৮) ফরাসী পার্লামেন্ট আইন করেছে, শিশু কিশোরী-দের ওপর পিতামাতা বা শিক্ষকরা মৃদূ নির্যাতন( Smacking)-ও করতে পারবেনা,এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে-ই বেশ কিছু কঠোর আইন রয়েছে যা শিশু-কিশোরদের বাসা ও বিদ্যালয়ে সম সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বটে,অতি উৎসাহীরা আমাদের দেশেও এমন আইনের প্রয়োগ চাইবে,মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোন দেশে আবার এমন আইন নেই,কারণ
এর উল্টো চিত্র-ও রয়েছে।
আমাদের এখনো আইন প্রনয়নের কথা ভাবার দরকার নেই,দু-একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত আমাদের সমাজে অন্তত নিজ বাবা মা-কে নিরাপদ ভাবা-ই যায়।
আমাদের শিক্ষকরাও সহানুভূতিশীল,কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে কি করনীয়,এর ফলশ্রুতিতে (After Effect) কি হতে পারে তা কেবল মানসিক সাস্থ্য বিষয়ে
জ্ঞাত-রাই অগ্রিম অনুধাবন করতে পারে,এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের আদেশ-টি প্রনিধান যোগ্য, ছাত্র শিক্ষক সকলকে মানসিক সাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে,প্রয়োজনে এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা ও চাপ নিবারণকারী ঔষধ দিতে হতে পারে।
সে বিষয়ে সকল শিক্ষক অবগত নাও থাকতে পারে,তাই শিক্ষকদের দিকে সমসরে অংগুলি নির্দেশ
আমাদের শিশুদের প্রতি স্কুল টিচার-দের নির্মোহ করে তুলবে,তারা ন্যুনতম শাসন করতেও কুন্ঠা বোধ করবে। আকাশ সংস্কৃতির বহুল প্রসার ও দ্রুত নগরায়নে অভিভাবকদের জীবন যাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে এবং কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা ( Adolescent Crisis)ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাবা মায়ের সাথে সখ্যতা কমে যাওয়ায়,নিজ কক্ষে স্মার্টফোন কেন্দ্রীক জীবনাচারে ওরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা এই বয়সের সাভাবিক মনোবিকাশে বিরুপ প্রভাব ফেলছে,ওরা ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক ও আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে,সেই সাথে Observational learning -এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বের অসামঞ্জস্য পূর্ণ
আচারে অভ্যস্ত হচ্ছে।
জীবনে পরাজয়ের গ্লানী সইবার ক্ষমতা অর্জন করতে শিখতে হবে,সময় সুযোগ এলে আবার বিজয়ী হয়ে সেই পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে হবে।
ফ্রান্স কি আইন পাশ করলো, আমেরিকা কি বললো,
বৃটেন কি শিশুদের বিষয়ে কি উপদেশ দিলো, তা আমি পুরোপুরি মানতে নারাজ,ওদের সমাজ ব্যবস্থা ও আর্থ সামাজিক সংস্কৃতি পরিবেশ ওদের এগুলো করতে বাধ্য করছে, আমাদের বাবা মা আমদের Smacking করেছে,আমরা কি উচ্ছন্নে গেছি, মনে হয় এখনো যাইনি, যা হোক তবে Smacking(চাপড়ানো/প্রহার)-এর একটা মাত্রা থাকতে হবে, অহেতুক কারনে অকারণে বকা ঝকা, ছিদ্রান্নেসী হয়ে বাচ্চাকে বা ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিপক্ষ ভাবা কক্ষনো ভালো ফল দেবেনা, নিজের রুটিন একটু বদলে নিন ‘বাচর্চা’ করুন, শব্দটি নতুন মনে হচ্ছে তাই-না আসলে আমি বোঝাতে চাচ্ছি নিজের ঔরসজাত বাচ্চাকে নিয়ে একটু চর্চা করুন, ওকে নিয়ে বাদাম চিবোতে চিবোতে পার্কে বৈকালীক ভ্রমন কাম ব্যায়ামটা সেরে ফেলুন, ওকে নিয়ে তানপুরায় নতুন সুর তুলুন,ওকে নিয়ে শখের সপিংটা সেরে আসতে পারেন। লক্ষ্য রাখুন-কোন ভাবেই সে যেন ঘরকুনো হয়ে ‘Device Centric’ না হয়ে ওঠে।
আর শিক্ষকদের জন্য পরামর্শ একই – আমাদের সন্তান , আপনাদের হাতে সঁপে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে চাই, আমদের সন্তানকে আপনার অনুগত
শিষ্য করে বন্ধু করে নিন,ওর কষ্ট, দুঃখ গুলো বোঝার চেষ্টা করুন, আমাদের জানান। একজন দরদি শিক্ষক অনেক আপন হতে পারেন, আমি নিজে দেশে বিদেশে শিক্ষকতা করে এতোটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি,ওরা বাবা মা-এর সাথে যা আলোচনা করতে দিধা করে তা আমাদের সাথে নি:সংকোচে করে থাকে,হয়তো একজন মনোবিদ হওয়াতে আমার এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একটু বেশী,তবে একজন সহানুভূতিশীল শিক্ষক ( Empathic Teacher) হলে আপনিও অরিত্রীদের আরো আপন করে নিয়ে হদয়ের ক্ষতগুলো
মুছে দিতে পারবেন,তাহলে কোন অরিত্রী-ই আর আমদের ফাঁকি দিয়ে এভাবে চলে যেতে চাইবে না।

Facebook Comments