banner

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 204 বার পঠিত

ঐতিহ্য চেতনায় আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব

আমাদের গৌরবগাঁথা অতীতকেই ঐতিহ্য বলতে পারি। আমাদের অস্তিত্বের সাথে, জীবনের সাথে যে সুমহান অতীত জড়িয়ে আছে তা-ই আমাদের ঐতিহ্য। অতীত দিনের গৌরবময় ইতিহাসকেও আমরা ঐতিহ্য বলতে পারি। তেমনই আমাদের লোকজ অস্তিত্বের সকল জীবনাচারণই হচ্ছে লোকসংস্কৃতি । আর লোকজ সত্ত্বায় মিশে আছে বাঙালির উৎসবের নানান দিক। আবহমান কাল ধরে লোকসংস্কৃতির বহুবিধ শাখা-প্রশাখার মতো বাঙালির উৎসববাদির মধ্যে ছড়িয়ে আমাদের স্বকীয়তা ও  সকল অস্তিত্ববোধ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের আনাচে-আনাচে, পল্লীমায়ের কোল জুড়েই লালিত হয়ে বিকাশমান রয়েছে আমাদের লোকজ উৎসব।

আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাস অনেক পুরানো। তেমনি আমাদের উৎসবের ধারাগুলোও অনেক পুরনো এবং ঐতিহ্যময়। হাজার বছরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের গৌরবমাখা সোপানে আমাদের বাংলার সংস্কৃতির ভিত্তি মজবুত এবং বেশ শক্তিশালী।

বাংলার মানুষের হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদনা, দু:খ-কষ্ট, বিরহ-যাতনা কিংবা সর্বজীবনের পরতে পরতে মাখামাখি হয়ে আছে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য। বিপুল শৌর্য-বীর্যের তেজোদ্দীপ্ত শক্তি নিয়ে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি সমগ্র বাঙালির হৃদয়ে গ্রথিত। আমাদের ধর্ম-কর্ম,বিবাহ-শাদি,ঈদআনন্দোৎব,

পুজা-পার্বনসহ জীবনের সর্বই এই সংস্কৃতির স্বরূপ ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। আমাদের লোকায়ত জীবনের প্রতিটি অঙ্গনেই এক যাদুকরী প্রভাব নিয়েইএই সংস্কৃতি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সঞ্চরণশীল।

বাংলার গ্রাম-গঞ্জ,নগর-বন্দর সর্বাঞ্চলের মানুষের সুখ-দু:খ,আনন্দ-বেদনার সাথে আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির নান্দনিক কীর্তি সমূহকে ধারন করেই আমরা নিজেদেরকে গৌরবান্বিত মনে করি।  বাংলাদেশের অস্তিত্বভিসারি ঐতিহ্যবোধের নিরিখে বৃহত্তর মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যময় ঈদ, আনন্দমেলা, ঈ-দে মিলাদুন্নবী,মহরম,শবে বরাত,শবে কদর কিংবা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সমাজের পুজা-পার্বন,বড়দিনসহ বিভিন্ন উপাসনাত্রে গুলোও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উচ্চকিত অবস্থানে রেখেছে।

বাংলার সর্ব প্রকার পরিমার্জিত সাংস্কৃতিক অস্তিত্বই আমাদের লোকজসংস্কৃতির অংশ। এছাড়া বাংলা নববর্ষ,পহেলা বৈশাখ এবং শৌর্য-বীর্যগাঁথা বাংলার বারোমাসের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানাদি আমাদের লৌকিক সংস্কৃতির একটা বিরাট মহীরূহ হয়ে আছে।

আমাদের শহুরে কিংবা গ্রামবাংলার সকল প্রাণসঞ্চারি আচারানুষ্ঠান ও জীবনাচার বিশিষ্ট সবকিছুই আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাইরে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কিছু উৎসব আছে। যাকে আমরা সর্বজনীন উৎসব বলি। যেমন পহেলা বৈশাখ। বাংলা সালের সূচনা মাসের পহেলা বৈশাখে সমগ্র বাঙালি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সর্বস্তরের মানুষ এক মহা উৎসবে শামিল হয়। ব্যাপক সাড়ম্বরে জনগণ বাংলা নববর্ষের উৎসবে মেতে ওঠে। তেমনি গ্রীষ্মের দাবদাহের পর বাংলাদেশে বারিধারা সম্বলিত বর্ষার আগমনকেও অনেকে বিপুল উৎসাহে স্বাগত জানায়। এরকম আরো উৎসব আছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্পুরক গৌরবে উদ্ভাসিত।

আমাদের লোকসংস্কৃতির একটা বিরাট প্রাণময়ী শক্তি হচ্ছে আমাদের লোকজউৎসব। বাংলার গণমানুষের জীবনধারার সাথে আমাদের ঐতিহ্যমন্ডিত লোকসমাজে নানা রকম উৎসবের ইমেজ-আমেজ জড়িয়ে আছে ওৎপ্রোত ভাবে। একটা বিরাট গৌরব বহন করে চলেছে। অনেক পূর্বেই আমাদের লোকজউৎসবের বিভিন্ন পর্বগুলো বাংলাসংস্কৃতির ভূবনকে প্রদ্দীপ্ত, পরিব্যাপ্ত ও আলোকিত করে রেখেছে। সহস্ত্র বছরের ঐতিহ্য বহন করে আমাদের লোকসমাজ ও সাংস্কৃতিক উৎসবের অমীয়ধারা বাঙালিকে করেছে সুষমামন্ডিত, গৌরবান্বিত।

বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক আচারাদির সবকিছুই আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সবকিছুই ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অতএব, সেইসব আনন্দ ধারা এবং উৎসবের স্বরূপকে জীবন্ত রেখেই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা ও লালন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে হেনরি মিলারের একটা কথা মনে পড়ছ্ েতিনি বলেছেন-‘ আনন্দকে যারা অবজ্ঞা করতে বলে, তারা হয় বৃদ্ধ, অথবা একেবারে অসুস্থ’। আমাদের বুঝতে হবে যে,সব আনন্দধারা কিংবা উৎসবের মধ্যে মানুষকে জাগরিত করবার একটা প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশাকে স্বাগত জানাতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে গৌরবজনক দিক হচ্ছে, সবার একটি মাত্র ভাষা। যার নাম বাংলাভাষা। এই মহিমান্বিত ভাষার মাধ্যমেই আমরা ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে একটা সৌহার্দ্দ-সম্প্রীতির ঐকতানে একই সূত্রে মিলে- মিশে আছি। একে অপরের সুখ-দু:খের সাথী হতে পারছি।

আমাদের এই দেশে সকল ধর্মমতের স্বাধীন সত্ত্বার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থেকেই প্রত্যেকে আনন্দোৎসব পালন করে থাকে। ধর্মীয় কারণে কেউ কারো জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। প্রত্যেকেই তাদের ঐতিহ্যধারায় নিজস্ব ধর্মবোধের ভিত্তিতে উপাসনা ও ধর্মচর্চা করে । আনন্দ-উৎসব পালন করে। মুসলমানগণ মহিমান্বিত ঈদ আনন্দোৎব করে। খৃষ্টান সম্প্রদায় বড়দিনের উৎসব করে। বৌদ্ধগণ তাদের উৎসব পালন করে। পাহাড়ি অঞ্চলের আমাদের উপজাতিরা তাদের আনন্দের জয়গান গায়। তেমনি হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন পুজা-পার্বন ও উৎসবের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্যবোধকে জাগরিত রাখার চেষ্টা করে। ধর্মীয় উৎসব ও আনন্দের মাধ্যমে সকলে মেতে থাকে। সবকিছুই আমাদের অস্তিত্ববোধ ও সংস্কৃতির অংশ।

কারণ, প্রত্যেকেই তাদের বিশ্বাসের দীপ্তি দিয়ে নিজস্ব ধর্ম পালন করে পরিতৃপ্ত হয়। সুখী হয়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সন্মান দেখায়।

আমাদের লৌকিক ঐতিহ্যের মাইলফলক হচ্ছে লোকজসংস্কৃতি, লোকসংগীত এবং বাংলার লোকজউৎসব। বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যকে লালন-পালনের মাধ্যমে বাঙালির চিরায়ত অস্তিত্ববোধকে জাগিয়ে রাখতে হবে। সকল প্রকার কুসংস্কারের অপনোদন ঘটিয়ে দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষকে সুখ-দু:খের সঙ্গী করে তুলতে হবে। কারণ, সকল আনন্দ আর উৎসবের মূল প্রেরণা হচ্ছে,মানুষকে সুখী রাখা। মানবতাকে সজাগ-সমৃদ্ধ করে তোলা। ধনী-দরিদ্র সকল মানুষকে সমান চোখে দেখা। ঘৃণা নয়, প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের অন্তর করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহী কবি,আমাদের জাতীয় চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠ খুবই সোচ্চার। তিনি বলেন; ‘মানুষেরে ঘৃণা করি/ওরা কারা কোরান বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি! ও মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে/যাহারা আনিল গ্রন্থ কেতাব সেই মানুষেরে মেরে/পূজিছে গ্রন্থ,ভন্ডের দল।’

সব কথার সার কথা হচ্ছে,‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। মানুষকে সেটা বঝতে হবে। মানুষের মর্যাদাকে রক্ষা করতে হবে।

আমাদের গণমানুষের আনন্দ-বেদনা,কামনা-বাসনার জয়গাঁথা উচ্ছ্বাস অনুভূতির উচ্চারণে শোক কিংবা আনন্দোৎবে যে আকণ্ঠ সুর উদ্ভাসিত হয়। এসব ভাষা ও সাহিত্যের সঠিক উপাত্তের কোন প্রকার অবলুপ্তি ও অবমাননা হবে আমাদের জন্য একধরনের আত্মঘাতি ব্যর্থতা। আমাদের লৌকিক আচারানুষ্ঠানদি ও জীবনাচারের সর্বক্ষেত্রে আমাদের অস্তিত্বভিসারি ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান প্রদর্শন করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যের  লালন ও সংরণ করতে হবে। বাংলার প্রকৃতি, পাখ-পাখালির সুর,কিষাণ-মজুর,মাঝি-মাল্লার গান আর রাখালিয়ার বাঁশীর কণ্ঠনিসৃত সুরধ্বনি আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে ঐতিহ্যের লালিত্যে বহমান রয়েছে,তাকে চিরসজীব করে রাখতে হবে। কারণ, এসব আমাদের বেদনা-বিরহ এবং প্রাণসঞ্চারি উৎসবের মাত্রাকে বেগবান করে। শক্তিময় করে তোলে।

আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি,সভ্যতা ও সুপ্রাচীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। তাতে আমাদের গৌরব বাড়বে বৈ কমবে না। বাংলার পরিশীলিত,পরিমার্জিত গৌরবগাঁথা রূপসুন্দর লোকজসংগীত ও লোকসংস্কৃতিকে আরও বেগবান,আরও উচ্চকিত ভাবে জিয়িয়ে রাখতে হবে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া অবলুপ্ত লোকজউৎসব ও লোকজসংগীত-সংস্কৃতির জাগরণ ঘটাতে হবে। আমাদের চিরায়ত বাংলার উৎসব এবং সংগীতঐতিহ্যকে জাগিয়ে রাখতে হবে।

আমাদের ঐতিহ্যের ধারক যে সকল সাংস্কৃতিক চেতনা রয়েছে তাকে জাগরুক রাখতে হবে।  আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ তথা সমগ্র্র বিশ্বে অবস্থানরত: বাঙালিদের মাঝে সেই ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগিয়ে রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজন লোকসংস্কৃতির উপর স্টাডি এবং ব্যাপক সংগীত চর্চা।

আমাদের হারানো ঐতিহ্যের দিকে ফিরে যাওয়া। আমাদের লোকজউৎসব এতদসংক্রান্ত লোকজসংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিজ্ঞ-জ্ঞানীদের মাধ্যমে গবেষণানিসৃত বই-পুস্তক ও পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা করা। আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাংলা একাডেমীর মাধ্যমে গ্রন্থ প্রকাশের কাজটি সবচেয়ে বেশি হতে পারে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এব্যাপারে প্রশাসন খুবই উদাসীন! সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিল চক্রের শিকারেআমরা আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে হারাতে বসেছি।

আমাদের ঐতিহ্যবোধের নিরিখে নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বকীয়তার গৌরবকে  টিকিয়ে রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে সবাইকে। আমাদের স্বদেশ ও বিদেশে অবস্থানরত: সকল বাংলাদেশী মিলে ব্যাপকভাবে সাংস্কৃতিক চর্চায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। লোকসংগীতের সুর সম্রাটদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। লোকসংগীতের ঐতিহ্যময় ধারাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের স্বকীয়তাপূর্ণ ঐতিহ্যের পথ ধরেই আমাদের গৌরবের ধারাকে সমুন্নত রাখতে হবে। নিজেদের আসল পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে চলবেনা। একজন ডেনিশ দার্শনিক বলেছেন- একবার পথ হারানোর চেয়ে দু’বার অনুসন্ধান করে নেয়া ভাল’। অতএব আমাদের হারিয়ে যাওয়া পথকে আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজনে বারবার সঠিক পথের সন্ধান করতে হবে। এটাও সত্য যে, সন্ধান করতে করতে একদিন অবশ্যই আমরা আমাদের আসল পথ ও অস্তিত্বের সন্ধান পাবো।

বাংলাদেশের মত প্রবাসের বাঙালির মাঝে যে জাগরণ রয়েছে; তাকে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে একীভূত করে নিতে হবে। নিজস্ব কৃষ্টি-সভ্যতার সাথে মিলাতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির সাথে বর্তমান প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশেষ করে প্রবাসে অবস্থানরত: সকলের সন্তানদের জন্য বাংলা ভাষা ও কালচারের শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যাতে তাদেরকে আমাদের মাটি, মানুষ ও শেকড়ের সাথে সবাইকে সম্পৃক্ত ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাদের মাঝে বাংলা সংস্কৃতির জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে লোকজসংস্কৃতির পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধর্মীয় রীতির সুন্দরালোকের উজ্জয়নী ধারা চমৎকারভাবে বেগবান হচ্ছে সর্বত্র। সেই সাথে সকল ধর্মের সহাবস্থানপূর্ণ পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। প্রবাসে আমরা আমাদের

ঐক্যবোধের উজ্জল দৃষ্টান্তকে আরো গৌরবময় করে তুলবো। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও অস্তিত্ববোধের সঙ্গে একীভূত করে রাখার চেষ্টা করবো। তাদেরকে বাংলা ভাষা,সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করবো। এটাই হওয়া উচিত আমাদের অঙ্গীকারের প্রধান বিষয়।

প্রবাসে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের  ঐতিহ্যগাঁথা পহেলা বৈশাখ ব্যাপকভাবে পালন করছি। এটা বড় গৌরবের বিষয়। তবে এ গৌরবটি ঐক্যের এবং সার্বজনীন একথাটি সবার মনে রাখা দরকার। আমাদের অস্তিত্বের প্রাণ পুরুষ সম্রাট আকবরের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ। বাংলাভাষাও বাংলা সনকে চিরঞ্জীব করে রাখার ব্যাবস্থাটিও তিনিই কিন্তু করে দিয়ে গেছেন। তা যেনো আমরা ভুলে না যাই। তিক্ত হলেও সত্যি বর্তমানে ইতিহাস বিকৃতির যে সর্বনাশা খেলা শুরু হয়েছে(!) তাতে বাঙালির অস্তিত্বের প্রকৃত ইতিহাস ধ্বংস

করে দেবার চক্রান্ত খুবই প্রকট। বাংলা নববর্ষের মহান উৎসবের দিনে সেইসব কুচক্রিদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যাতে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ইতিহাসটিও হাইজ্যাক হয়ে না যায়।

পহেলা বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনের এক সর্বসত্ব: জাগরণী উৎসব। শুধুমাত্র অঙ্গপ্রদর্শণ মূলক উল্লাস নয়। একটা মহিমাগাঁথা ঐতিহ্য আছে তার। সেই ঐতিহ্যের পুরোভাগে যাদের অবদান আছে; তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমাদের আলোচনা ও লেখালেখির মাধ্যমে সেই ইতিহাসটি সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে। পহেলা বৈশাখ প্রতিবছর আসে আমাদের সেই চেতনাকে জাগরিত করতে। সাম্য-মৈত্রীর বন্ধনে সবাইকে একত্রিত করে দিতে।

লিখেছেন- এবিএম সালেহ উদ্দীন

 

 

Facebook Comments