নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে এস্টার হোবার্থ মোরিস (Esther Hobart Morris) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। উনিশ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে যখন নারীরা ভোটাধিকারসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন মোরিস এক অগ্রদূত হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ছিলেন প্রথম নারী পিস জাস্টিস (Justice of the Peace), যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী নারী নেতৃত্বের জন্য এক মাইলফলক।
১৮১৪ সালের ৮ আগস্ট নিউইয়র্কের স্প্রিংফিল্ডে জন্মগ্রহণ করেন এস্টার হোবার্থ মোরিস। খুব অল্প বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান, ফলে তার বেড়ে ওঠা ছিল চ্যালেঞ্জিং।তবুও তিনি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং টেরিটরি (Wyoming Territory) নারীদের পূর্ণ ভোটাধিকার প্রদান করে, যা ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি সম্ভব হয়েছিল নারী অধিকার কর্মীদের প্রচেষ্টার কারণে, যার মধ্যে এস্টার হোবার্থ মোরিস ছিলেন অন্যতম।
১৮৭০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এস্টার মোরিসকে ওয়াইওমিংয়ের সাউথ পাস সিটিতে পিস জাস্টিস হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বিচারিক কর্মকর্তা হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
তার বিচারিক কার্যক্রম ছিল সুশৃঙ্খল ও নিরপেক্ষ। এক বছরে ২৬টি মামলা পরিচালনা করেন তিনি, যার মধ্যে বেশিরভাগই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। সেই সময় নারীদের বিচার বিভাগে অংশগ্রহণ ছিল অকল্পনীয়, তাই তার এই ভূমিকা নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নারীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে মোরিস ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ওয়াইওমিং যখন ১৮৬৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তখন তিনি এই আইনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন। তার প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নারী ভোটাধিকার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে।
১৮৭১ সালে ইউটা (Utah) যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নারী ভোটাধিকার আইন পাস করে। ওয়াইওমিংয়ের সফলতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যেখানে মোরিসের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
১৮৭৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি. হেইজ একটি ঐতিহাসিক বিলে স্বাক্ষর করেন, যা নারীদের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই আইনের ফলে নারীরা প্রথমবারের মতো উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
এটি নারীদের পেশাগত স্বাধীনতার একটি বড় পদক্ষেপ ছিল এবং এই আন্দোলনের পেছনে এস্টার হোবার্থ মোরিসসহ অন্যান্য নারী অধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এস্টার হোবার্থ মোরিস শুধু একজন বিচারকই নন, তিনি ছিলেন নারী অধিকারের এক সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। তার প্রচেষ্টা নারীদের ভোটাধিকার, বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ এবং আইন পেশায় নারীদের প্রবেশের পথ সুগম করে।
আজ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন মোরিসের মতো নেত্রীরা।