জিয়াউল হক
আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি শনিবার,
বইমেলা পরিলেখ স্টলের সামনে হঠাৎ করেই আমি আগামীর বাংলাদেশকে দেখলাম। প্রায় বছর পাঁচেক বয়সের একটা ছেলে ‘নাজমুল’ পথশিশু, স্টলে এসে কচি হাতে ধরা পাঁচটা টাকা এগিয়ে দিয়েছে সেলস্ ম্যানের দিকে, আংকেল আমাকে একটা বই দেন তো!
ঠিক ঐ একই সময়ে ভাগ্যচক্রে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। সেলস্ ম্যান অবাক হয়ে ঐ পুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, কি বই নেবে তুমি? তুমি কি বই পড়ো?
ছোট্ট ছেলেটার চটপট জবাব, হ্যাঁ পড়ি।
আগ্রহ নিয়ে এবারে আমিই এগিয়ে গেলাম।
পরিচয় জানতে চাইলাম, নাম ”নাজমুল, পার্কের কোণায় এক জায়গায় থাকে, মা ঝি এর কাজ করে, বাবা নেই। মা’র কাছ থেকে কেঁদে কেঁদে পাঁচটা টাকা নিয়ে এসেছে বই কিনতে। সে পড়তে পারে। সেলস্ ম্যান পরখ করার জন্য জানতে চাইলেন, তুমি কি পড়তে পারবে? জ্বি পারবো ছেলেটার সপ্রতিভ জবাব।
তার সামনে কয়েকটি বই মেলে ধরা হলো, সে ঝর ঝরে রিডিং করে বইগুল পড়ে গেল, বাংলা অক্ষরগুলো যেমন পড়লো তেমনি সে ইংরেজি অক্ষর গুলোও সাবলীলভাবে পড়ে গেল গর গর করে।
জানতে চাইলাম কোথায় পড়া শিখলে? সে জানালো যে, পথশিশু স্কুলের আপুরা এসে তাকে পড়িয়েছে, সেখানেই সে পড়তে শিখেছে।
অবাক হলাম। সেলস্ ম্যানের দিকে বাড়িয়ে দেয়া পাঁচটা টাকা তার হাতে ফেরত দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়া হলো একটা শিশুতোষ বই। আহা, ছেলেটার সারাটা মুখ এক বর্ণনাতীত চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো।
পাশেই এক ভদ্রমহিলা স্টলের বই নেড়ে চেড়ে দেখা বাদ দিয়ে এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে ছেলেটাকে দেখছিলেন। তিনি এগিয়ে এলেন এবার, তিনিও একটা বই কিনে উপহার দিলেন বাচ্চাটাকে। দেখা দেখি পাশের স্টল থেকে বের হয়ে এলেন ঐ স্টলের সেলস্ ম্যান ভদ্রলোক।
তিনিও এতক্ষণ অবাক বিস্ময়ে বই এর প্রতি বাচ্চাটার তীব্র আকর্ষণ খেয়াল করছিলেন, খেয়াল করছিলেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তার সপ্রতিভ উত্তর। তিনিও তার স্টল থেকে দুটো শিশুতোষ বই এনে বাচ্চাটার হাত তুলে দিলেন। ছেলেটার মুখে সে কি হাসি! ভাষায় এ অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না।
বইগুলো একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে ও যখন পথ ধরলো, আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম।
যে জাতির এক ক্ষুদে সদস্য বইকে এতটা ভালোবাসতে শিখেছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার, এমন কথা বলার সাহস কার?