banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 447 বার পঠিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪


নারীর জন্য আইন


(২). হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীছের সঠিক অনুবাদ হবে – ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক।’ কারণ ‘আওলা’ শব্দের অর্থ হল সর্বাধিক হকদার, ‘ঘনিষ্ঠতর’ নয়। আর সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক হল পুত্র-সন্তান। দূরবর্তী পুরুষ মাওলা বা আছাবাগণ কখনোই সর্বাধিক হকদার নন। তাছাড়া এ হাদীছটি ‘খবরে ওয়াহিদ’ (একমাত্র বর্ণণাকারী কর্তৃক বর্ণিত) হওয়ার কারণে এবং স্বয়ং বর্ণণাকারী ছাহাবী ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করার কারণে উহা আমল করার উপযোগী নয়। কারণ স্বয়ং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. তার নিজের বর্ণিত হাদীছখানা থাকা সত্বেও কন্যাদেরকে অবশিষ্টাংশভোগী মাওলা (আছাবা) উত্তরাধিকারী বলে মনে করেন। (৩). কুরআনে মূলত অবশিষ্ট অংশের কথা বলা হয়েছে। আর হযরত জাবির রা. এবং হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছগুলো সহ যেসব হাদীছে রাসূলুল্লাহ সা. মেয়েদের সাথে ভাইবোনদেরকে অংশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে, তা উহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। তখনও ভাইবোনদের হিস্সা বর্ণনা করে কালালার আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। তখন তো রাসূলুল্লাহ সা. শুধু ভাইবোনকে নয় বরং মুক্তিদাতা মুনিব ও মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসকেও দিয়েছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ اِبـْنِ عـَبـاَّسٍ اَنَّ مـَوْلـًي لـِحـَمـْزَةَ تـُوُفـِّيَ فـَتـَرَكَ اِبـْنـَتـَهُ وَاِبـْنـَةََ حـَمـْزَةَ فـَاَعـْطـَي الـنـَّبـِيُّ صـَلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ اِبـْنـَتـَهُ الـنـِّصـْفَ وَاِبـْنـَةَ حـَمـْزَةَ الـنـِّصـْفَ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘হামজা এর একজন মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস ছিল। সে তার একমাত্র মেয়ে ও মুনিব হামজা এর মেয়েকে রেখে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সা. তার পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক তার মেয়েকে দেন ও বাকী অর্ধেক দেন হামজা এর মেয়েকে।’ (সুনানু দার কুথনী)

৬। আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, হযরত হামজা রা. উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না; একজন মাত্র কন্যা ছিলেন। এজন্য তিনি একজন ক্রীতদাসকে তাবান্নী বা পালকপুত্র বানিয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাযিলের পরে আর ভাইবোনকে কিছুই দেন নি। কারণ এ আয়াত সবশেষে নাযিল হয়েছিল। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنِ الـْبـَرَاءِ قـَالَ آخِـرُ آيـَةٍ نـُزِلـَتْ مـِنَ الـْقـُرْآنِ يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ হযরত বারা (বিন আযিব) রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয় তা হল- يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ ’- অর্থাৎ সূরা নিসার এই ১৭৬ নং আয়াত। (বুখারী, মুসলিম)৭। আর সর্বশেষ বিধানের মাধ্যমে মহানবী সা. এর পূর্বে দেয়া সকল নির্দেশনা রহিত হয়ে গিয়েছে।

খ.

(১). হযরত হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছে মহানবী সা. এর আমলের বিবরণ রয়েছে বটে কিন্তু মৌখিক কোন নির্দেশনা নেই। উহা সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে। আর সিরাজীর উল্লেখিত اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও’- বক্তব্যটি হাদীছের নামে একটি জালিয়াতি। মহানবী সা. কখনোই এরকম কোনকিছু বলেন নি। এ কারণে কথিত এ হাদীছের বর্ণণাকারী ছাহাবী ও সনদের কোন বিবরণ কেউ জানে না। (দেখুন: ‘আর রাদ্দুল মুহতার ফী শারহে দুররিল মুখতার’)৮।

(২). তৎকালিন আরব সমাজে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ‘আছাবা’ প্রথাকে উৎখাত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তরাধিকারে নারীকে হিস্সা দিয়েছিলেন। সমস্তরের পুরুষ উত্তরাধিকারীর সাথে মিলিত হলে নারী ‘আছাবা বিগায়রিহী’ হবে, অন্যথায় আছাবা হতে পারবে না; আর কন্যার সাথে মিলিত হলে বোন ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ হবে- এসব কথা একান্তই কিছু মনিষীর ব্যক্তিগত অনুমান- আল্লাহ প্রদত্ত নয়, রাসূল সা. বর্ণিতও নয়। বরং আছাবাগিরীর বিরোদ্ধে রাসূল সা. কঠোর মন্তব্য করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ جـُبـَيـْرِ بـْنِ مـُطـْعـِمٍ قـَالَ قـَالَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ لـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ دَعَـيْ اِلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ قـَاتـَلَ عَـلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ مَـاتَ عـَلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ হযরত যুবায়ের বিন মুত্ইম রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যে আছবিয়্যাতের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয়। আর যে আছবিয়্যাতের কারণে যুদ্ধ করে, সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয় এবং যে আছবিয়্যাতের জন্য নিহত হয় সেও আমার উম্মাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ)৯। এ কারণে আমরা এ আছাবা পরিভাষা ও উহার শ্রেণীবিন্যাসের সাথে একমত নই। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভুল ব্যাখ্যা ও নকল হাদীছের ভিত্তিতে এ শ্রেণীবিন্যাসের থিওরী গড়ে উঠেছে বলে আমরা মনে করি।

 

Facebook Comments