দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বিশ্ব।তার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে সবা্ই,পিছনে ফিরে তাকানোর ফুসরত যেন কারো নেই।আমরা জানি না এই অগ্রযাত্রার শেষ কোথায়।
ইতিহাস সাক্ষ্যি ছুটে চলার এই প্রতিযোগীতায় সব সময় এগিয়ে গিয়েছে পূরুষ পিছিয়ে পড়েছে নারী।
আবার এগিয়েছে নারী পিছিয়ে পড়েছে মুসলিম নারীরা,যারা ইসলামকে ধারন করেন।
‘মুসলিম নারী’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আপাদমস্তক আবৃত ঘরের কোনে আবদ্ধ এক নারী চিত্র!
পশ্চিমা বিশ্ব আমাদেরকে এ ভাবেই শিখিয়েছে।
তবে সময়ের আর্বতনে এক্ষেত্রে এবার পরিবতর্নের জোয়ার এসেছে।বিশ্বের বিভিন্ন্ প্রান্তে মুসলিম নারীরা তাদের পশ্চিমা বিশ্বের দেয়া চিরায়িত রুপকে অস্বীকার করে নিজেদেরকে দক্ষতা আর যোগ্যতার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমানতালে।নীতি নির্ধারনী পযার্য়ে,রাজনীতি,অর্থনীতি ও সমাজিক ক্ষেত্রে,শিক্ষা ব্যবস্থায় এবংপ্রযুক্তি ইত্যাদি প্রায় সব ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের দৃপ্ত পদচারনা উল্লেখ করার মত।বিশ্বখ্যাত এই মহীয়সীদের কয়েকজনকে এখানে তুলে ধরা হলো-
বিশ্বের সেরা শিক্ষক ফিলিস্তিনের হানান
বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস স্থানে শিশুদের অহিংসার দিক্ষা দিয়ে বিশ্বসেরা শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষিকা হানান আল-হ্রব।
ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে উদ্বাস্তু শিবিরে বেড়ে ওঠা মহান এ শিক্ষিকা সারাজীবন লড়াই করে যাচ্ছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।
তারই পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন এক মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৮ কোটি টাকা) গ্লোবাল টিচার প্রাইজ। খবর দ্যা টেলিগ্রাফের।
ফিলিস্তিনের সামিহা খলিল হাই স্কুলের ওই শিক্ষিকাকে ভার্কে ফাউন্ডেশন গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ২০১৬ এর জন্য নির্বাচন করা হয়। সোমবার হানান আল-হ্রবকে ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮ কোটি টাকা তুলে দেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম।
পুরস্কার নেয়ার সময় উৎফুল্ল হানান বলেন, একজন ফিলিস্তিনি নারী শিক্ষক হিসেবে এ মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত। এই পুরস্কার শুধু আমার একার নয়। সব শিক্ষক বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমি এটি গ্রহণ করছি।
দ্বিতীয় বারের মতো এই পুরস্কার দেয়া হলো।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ৪৩ বছর বয়সী হানান বলেছিলেন, আমার শিক্ষা পদ্ধতিতে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা এবং অহিংসার দিক্ষা দেয়া।
তিনি বলেন, তার শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যবোধ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কিছু আচরণগত সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইসরাইলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক আচরণগত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে আমি এসব আচরণগত সমস্যার সমাধান করতে পারছি এবং একটি শান্তিপ্রিয় ও সহযোগিতামূলক প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছি।
হানান জানান, ২০০০ সালে আল-আকসা মসজিদ কেন্দ্রীক ইন্তিফাদার (বিদ্রোহ) সময় পশ্চিমতীরে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেন ইসরাঈলি বাহিনী।তিনি বলেন াামার স্বামী প্রথমে ইসরাঈলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।তাকে এ সময় হাসপাতালে না নিতে দিয়েবরং ইসরাঈলি বাহিনী বিদ্রুপ করে তাকে মৃত্যু মুখে ঠেরে দেয়।হানান বলেন তার উদ্ভাবিত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে তার সন্তানরা আবার সুস্থ্য হয়ে উঠে ও আত্ন বিশ্বাস ফিরে পায়।দুবাইয়ে গ্লোবাল ইডুকেশন এন্ড স্কিলড ফোরামের ওই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মহান ওই শিক্ষিকাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান পোপ ফ্রান্সিস।
নোবেল বিজয়ী প্রথম আরব নারী তাওয়াক্কুল কারমান
তাওয়াক্কুল কারমান পেশায় একজন সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ্ ও মানবাধিকার কর্মী।ইয়ামেনী এই নারীর জন্ম ১৯৭৯ সালে। আরব নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।তার দেশে অনেক দিন ধরেই বাকস্বাধীনতার জন্য তিনি কাজ করছিলেন।২০০৫সালে তিনি ‘ইউমেন জার্নালিস্ট ইউদাউট চেইনস’ নামে একটি প্রচারনা গ্রুপ তৈরী করেন। প্রতিষ্টার দুই বছর পর থেকে এ গ্রুপটি ইয়ামেনের রাজধানীতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে।
আর্ন্তজাতিক দৃশ্যপটে কারমানের আবির্ভাব মূলত ২০১১ সালে।তৎকালীন ইয়ামেনী প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুললাহ সালেহ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে।তিনি ২০১১ তে নোবেল পুরস্কার পান।নোবেল পুরস্কার গ্রহন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন ,‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি যে,কোন ধরনের সহিংসতা ছাড়াই নিযার্তন ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।আমি আরো বিশ্বাস করি মানব সভ্যতা হচ্ছে নারী পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফল।’নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকে তিনি আরব বসন্ত উত্তর দেশ সমূহে ব্যাপক সফর করেন এবং সে সব দেশের মানুষের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।গত বছর কারমান ঘোষনা দেন যে, তিনি নোবেল পুরস্কার হিসাবে প্রাপ্ত ৫লক্ষ ডলার আত মানবতার সেবায় ব্যায় করবেন।বিশেষ করে আরব বসন্তে ইয়ামেনের যে সকল মানুষ আহত হয়েছেন ও যে সবল পরিবার স্বজন হারিয়েছেন তাদের কল্যানে তিনি এ অর্থ ব্যয় করবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহিলা কেবিনেট মন্ত্রী শেখ লুবনা আল কাশেমী
শেখ লুবনা আল কাশেমী সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহিলা কেবিনেট মন্ত্রী যিনি বর্তমানে আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রানালয়ের দায়িত্বে আছেন।মন্ত্রী হিসাবে শেখ লুবনা প্রথম দায়িত্ব প্রাপ্ত হন ২০০৪ সালে। তখন তিনি অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রলয়ের দায়িত্ব পালন করেন।প্রভাবশালী মহিলাদের তালিকায় এ নিয়ে পরপর চারবার শেখ লুবনা আল কাশেমী শীষস্থানে রয়েছেন।
শেখ লুবনা মূলত একজন আইটি বিশেষজ্ঞ।তিনি দুবাই এয়ারপোর্টে কার্গো বিমানের মালামাল খালাসের সময় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে আনার জন্য প্রশংসিত হন।২০০০সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম অন লাইন মার্কেট প্লেস।তার প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসা এখন দুবাইয়ের সবচেয়ে সফল ব্যবসা গুলোর একটি।তার ব্যবসার শাখা ছড়িয়েছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে।
মন্ত্রানালয়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি দুবাইচেম্বার অব কর্মাসের বোড অব ডাইরেক্টরস এর সদ্যস।এছাড়া আমিরাত পারমানবিক শক্তি সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান।ন্যাশনাল ইউএস আরব চেম্বার অব কর্মাসের একজন বোড মেম্বার এবং শেখ লুবনা আমিরাত ফাউন্ডেশন আবুধাবী ফ্রেন্ডশ অব ক্যান্সার পেশেন্ট এর একজন বোড মেম্বার।
তিনি ক্যালির্ফোনিয়া স্টেট ইউনির্ভাসিটি অব সিকাগো থেকে বি এস সি ডিগ্রি অর্জন করেনএবং আমেরিকা ইউনির্ভাসিটি অব শারজাহ থেকে এম বি এ ডিগ্রি অর্জন করেন্।
বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার মুসলিমা পারমুল
মুসলিমা পারমুল উত্তর কেরোলিনার রেলি শহরে জন্মগ্রহন করেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়াগোতে বেড়ে উঠেন।১৯৮০র দশকে তার পিতামাতা আফগানিস্থান থেকে যুক্তরাট্রে আসেন। তিনি কেলিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘রিলিজিয়াস স্টাডিজ’ ও ‘সিডল ইর্স্টান স্টাডিজ’বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় তিনি এম.এস.এ..ইউ.সি.এস.ডি এবং এম এস এ পশ্চিমে বিভিন্ন্ দায়িত্ব পালন করেন।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে তিনি মিশরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক শরিয়াহ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অজর্ন করেন।আমেরিকান ইউনিভার্সিটি কায়রোতে দুইবছর ইসলামি স্টাডিজ বিষয়ে অধ্যায়ন করেন।কাযরোতে পড়াশুনা করার সময় তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারস’ এর ফিউচার স্কলারস প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করেন।
বতর্মানে তিনি ইসলামিক সেন্টার আরভিন এ ইয়াং মুসলিমের প্রোগ্রাম পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।এ সেক্টরে তিনি যুবক ও তরুন পেশাজীবিদের ধর্মীয় শিক্ষা ও লিডারশীপের প্রশিক্ষন দেন ও বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেন।
জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সমাবেশে ইসলামিক আইন,নৈতিকতা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষন দেন ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।তিনি আমেরিকায় ইয়াং মুসলিমদের মাঝে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত প্রান হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
গুগলের শীর্ষ বক্তা বাংলাদেশের রাখশান্দা রুখাম
বিশ্বের সব থেকে বড় প্রযুক্তি সম্মেলন ‘গুগল আইও’ সম্মেলনের ডেভেলপার সামিটের শীর্ষ বক্তা নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের গুগল উইমেন টেকমেকারসের লিড রাখশান্দা রুখাম।১০০ দেশের ৫০০ অংশগ্রহণকারী ডেভেলপারদের ভোটে শীর্ষ বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রাখশান্দা।
গত ১৮ থেকে ২০ মে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে অনুষ্ঠিত হয় দশমবারের মতো গুগলের এই বার্ষিক সম্মেলন। যেখানে অংশ নেয় গুগল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত বিশ্বের শীর্ষ ডেভেলপার, ডিজিটাল এক্সপার্টস এবং প্রযুক্তি পেশাজীবীরা। সম্মেলনের আগের দিন প্রি-ইভেন্ট হিসেবে প্রতিবছরই আয়োজিত হয় গুগল ডেভলপার সামিট। যেখানে ১০০টি দেশের প্রায় ৫০০ ডেভেলপার গ্রুপ ম্যানেজার, গুগল ডেভেলপার রিলেশন টিমের সদস্য এবং গুগল ডেভেলপার এক্সপার্টরা অংশ নেন। যেখানে বাংলাদেশ থেকে এবার চারজন অংশ নিয়েছেন।এ সম্মেলনে অন্যতম ম্যানেজার রাখশান্দা শীর্ষ বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হন ১০০টি দেশের ভোটে। তিনি উইমেন টেকমেকার্স নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে। আর গুগল ডেভেলপার গ্রুপের ম্যানেজার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ২০১৬ সালে ।
তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় টেলিকমিউনিকেশনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে ইনোভেটিভ ডিজিটাল প্রডাক্ট ডিজাইনে এবং আইসিটি খাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করেন।
রাখশান্দা বলেন, বাংলাদেশ আর শুধু অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে নয় বরং সম্মেলনের গুরুতপূর্ণ অংশ হিসেবে তুলে ধরতে চাই। আমি চেষ্টা করব বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে যেতে। একদিন বাংলাদেশীরা গুগলের প্রধান নির্বাহীর মত পদে বসতে পারবে।